বাংলাদেশে ভারতের বড় বিনিয়োগ চান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

বিশেষ (ভারত) প্রতিনিধি: বাংলাদেশকে উদার বিনিয়োগ নীতির দেশ হিসেবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের ব্যবসায়ীদের এখানকার অবকাঠামো, উৎপাদন, জ্বালানি ও পরিবহন খাতে ব্যাপকভাবে বিনিয়োগ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
ভারত সফরের তৃতীয় দিন আজ বুধবার (০৭ সেপ্টেম্বর) দিল্লির আইটিসি মৌরিয়ার বলরুমে এক উচ্চপর্যায়ের ব্যবসায়িক অনুষ্ঠানে এই আহ্বান জানান তিনি।
ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) এবং কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রি (সিআইআই) যৌথভাবে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
চারদিনের সফরে গত সোমবার (০৫ সেপ্টেম্বর) দিল্লি পৌঁছান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী । 
ব্যবসায়ীদের অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা বলেন, “আমি ভারতীয় বিনিয়োগকারীদের অবকাঠামো প্রকল্প, উৎপাদন, জ্বালানি ও পরিবহন খাতে সম্ভাব্য বিনিয়োগ বিবেচনা করার জন্য অনুরোধ করব। ভারতীয় বিনিয়োগকারী এবং ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান সময়, খরচ এবং সংস্থান কমিয়ে বাই-ব্যাক ব্যবস্থার মাধ্যমে বাংলাদেশে শিল্প স্থাপন করতে পারে।”
তিনি আরও বলেন, এই অঞ্চলের মধ্যে বাংলাদেশে সবচেয়ে উদার বিনিয়োগ ব্যবস্থা রয়েছে, যেখানে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা, আকর্ষণীয় প্রণোদনা নীতি এবং ধারাবাহিক সংস্কার কার্যক্রম রয়েছে।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে শিল্প, কর্মসংস্থান, উৎপাদন, রপ্তানি বৃদ্ধি ও বহুমুখীকরণের মাধ্যমে বিনিয়োগ এবং দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়ন উৎসাহিত করার লক্ষ্যে সারাদেশে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং ২৮টি হাই-টেক পার্ক স্থাপন করা হচ্ছে।
“ভারতীয় বিনিয়োগকারীদের জন্য, মোংলা এবং মিরসরাইতে দুটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হচ্ছে। আমি এখানে উপস্থিত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলিকে সেখানে বিনিয়োগ করার জন্য অনুরোধ করব,” তিনি বলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “এটি দুই বন্ধুপ্রতীম দেশের সদিচ্ছাকে কাজে লাগানোর পথকে আরও প্রশস্ত করবে এবং এই অঞ্চলে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আনবে কারণ ভৌগলিকভাবে বাংলাদেশের যে অবস্থান, সেখানে বিনিয়োগ করলে ভারতের বিনিয়োগকারীরা তাদের পণ্য শুধু ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে রপ্তানি করতে পারবে তা নয়, নেপাল, ভুটান এবং দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতেও রপ্তানি করতে পারবে।
ভারতীয় ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশের দিকে আরও বেশি মনোযোগ দেওয়া এবং এর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, সস্তা খরচ এবং বিশাল ভোক্তা শ্রেণির সুবিধা নেওয়ার সময় এসেছে বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, শিল্পের প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করতে এবং কৌশলগত অবস্থানের পূর্ণ সুবিধা নিতে কয়েকটি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সবচেয়ে ভালো সম্পর্ক রয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুই প্রতিবেশী দেশের সম্পর্ক প্রতিবেশী কূটনীতির রোল মডেল হিসেবে পরিচিত।
“বাংলাদেশ ভারতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন ও বাণিজ্য অংশীদার। ভারত বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক পর্যটক এবং রোগী পায়। হাজার হাজার ভারতীয় নাগরিক এখন বাংলাদেশে কাজ করছে, উভয় অর্থনীতিতে অবদান রাখছে।
“উভয় দেশের ব্যবসায়ী সম্প্রদায়গুলোর ঘনিষ্ঠ হওয়া উচিত এবং আমাদের জনগণের পারস্পরিক সমৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে তাদের যথাযথ ভূমিকা পালন করা উচিত। তাহলে আমরা এই অঞ্চলে সমৃদ্ধি ও শান্তি আনতে সক্ষম হব।”
এ ধরনের ব্যবসায়িক অনুষ্ঠান দুই দেশের ব্যবসায়ী নেতাদের মধ্যে আলোচনা ও ধারনা ভাগাভাগির সুযোগ করে দেয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, কোভিড মহামারীর পর ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ বৈশ্বিক অর্থনীতির ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলছে।
যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী পণ্য ও জ্বালানির দাম ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে জানিয়ে তিনি বলেন, “এটি প্রতিষ্ঠিত সরবরাহ ব্যবস্থাকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করেছে। এর ফলে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোসহ অনেক দেশকে তীব্র অর্থনৈতিক সংকটে ভুগতে হচ্ছে।”
তিনি বলেন, বাংলাদেশও ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের পর থেকে একটি সার্বভৌম, স্বাধীন দেশ হিসেবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার মন্ত্রে অনুপ্রাণিত হয়ে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়েছে।
“দুর্ভিক্ষ এবং খাদ্য-সহায়তা নির্ভরতার সেই দিনগুলো থেকে বাংলাদেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। এটি এখন চাল, শাকসবজি, শস্য এবং স্বাদু পানির মাছের বৃহত্তম বিশ্ব উৎপাদনকারী দেশগুলির মধ্যে একটি। অতীতে প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার বাংলাদেশ আজ দুর্যোগ প্রস্তুতি ও ব্যবস্থাপনায় বিশ্বব্যাপী উদাহরণ।”
বিশাল আর্থ-সামাজিক সাফল্য ও প্রবৃদ্ধি অর্জনের মাধ্যমে বাংলাদেশ ‘বিস্ময়কর উন্নয়ন’ করেছে বলে জানান তিনি।
“বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৭.০ শতাংশ এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৮.০ শতাংশ। ২০০৯ সাল থেকে মাথাপিছু আয় প্রায় ১০০০ মার্কিন ডলার থেকে আজ ২৮০০ ডলারের বেশি হয়েছে। তাছাড়া, ২০২১-২০২২  অর্থবছরে রেমিট্যান্স বেড়ে ২১,০৩১ দশমিক ৬৭ মিলিয়ন ডলার। এই সূচকগুলোর মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনীতির শক্তিকে প্রতিফলিত হয়েছে।”
তিনি বলেন, গত দশ বছরে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে মোট দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের প্রবৃদ্ধি সন্তোষজনক ছিল যদিও ভারতের দিকেই পাল্লাটা ভারি ছিল।
“বর্তমানে উন্নত উৎপাদন ক্ষমতার মাধ্যমে বাংলাদেশ ভারতের বাজারে প্রতিযোগিতামূলক মূল্যে মানসম্পন্ন পণ্য সরবরাহ করতে প্রস্তুত। অতএব আমরা ভারতীয় আমদানিকারকদের বাংলাদেশি পণ্য দেখার জন্য আমন্ত্রণ জানাই, যেগুলো দূরের দেশ থেকে উচ্চমূল্যে আমদানি করা হচ্ছে।”
শেখ হাসিনা বলেন, বৃহত্তর স্বার্থে বাংলাদেশ-ভারত সহযোগিতাকে বাণিজ্যের বাইরে যেতে হবে এবং আঞ্চলিক সহযোগিতার প্রেক্ষাপট মাথায় রেখে এক্ষেত্রে বিনিয়োগ, অর্থ, পরিষেবা, প্রযুক্তি স্থানান্তর অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।“
প্রধানমন্ত্রী জানান, ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ১৩৭০ দশমিক ৩৫৭ মিলিয়ন ডলার, ভারতের বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল মাত্র ১৫ দশমিক ৭৫১ মিলিয়ান। যা মোট বিদেশি বিনিয়োগের এক দশমিক ১৫ শতাংশ।
“সুতরাং দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য এবং বিনিয়োগের সুবিধা লাভের উপায় খুঁজে বের করতে ব্যবসায়ী সম্প্রদায় এবং বাণিজ্য সংস্থাগুলোকে যুক্ত করার মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে আরও সহযোগিতার প্রকৃত প্রয়োজন রয়েছে,” বলেন তিনি।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ (বাংলাদেশ) এর বিশেষ (ভারত) প্রতিনিধি সৌম্য সিংহ। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.