বহুতল ভবনের কাজ শুরু, পাশের ভবনে ফাটল

 

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (আরডিএ) অনুমোদিত নকশা লংঘন করে নগরীর লক্ষীপুর এলাকায় একটি বহুতল ভবন নির্মাণের কাজ চলছে। অনুমোদিত নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখতে আরডিএ নির্দেশ দিলেও ববন মালিক নির্মাণ কাজ চালিয়েই যাচ্ছেন।

এ অবস্থায় ভয়াবহ ফাটল দেখা দিয়েছে নির্মাণাধীন ভবনের পাশের একটি চারতলা ভবনে। এতে আতঙ্কিত হয়ে উঠেছেন ভবনটির মালিক আলম খান ডাবলু। তিনি বলছেন, প্রতিবেশী মজিবর রহমানকে তার ভবন নির্মাণের কাজ বন্ধ করার জন্য তিনি অনুরোধ করছেন। কিন্তু উল্টো মজিবর রহমান তাকে নানাভাবে হুমকি-ধামকি দিচ্ছেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ব্যবসায়ী আলম খানের চারতলা ভবন ঘেঁষে ঠিকাদার মজিবর রহমানের ভবন নির্মাণের কাজ চলছে। আলমের চারতলা ভবনের নিচতলায় দুটি দোকানঘর। ওপরের তিনতলা একটি নার্সিং ইনস্টিটিউটকে ভাড়া দেওয়া।

আলম দেখালেন, তার দোকানে দুটির মেঝেতে ফাটল ধরেছে। একটি দোকানের যে পাশে মজিবরের ভবন নির্মাণ চলছে সে পাশের দোকানটির মেঝে দেবে যেতে শুরু করেছে। ফাটল দেখা দিয়েছে দেয়ালে। ভবনের অন্যপাশে রাস্তার মাটি থেকে দূরে সরতে শুরু করেছে দেয়াল। ভবন কিছুটা হেলে পড়ায় নিচতলার একটি দোকানের সাঁটারও লাগানো যাচ্ছে না।

ভবনটিতে থাকা নার্সিং ইনস্টিটিউটটির শিক্ষার্থীরা বলছেন, ভবনের এমন ফাটল দেখে তারা আতঙ্কিত।

আর ভবনটির মালিক আলম খান বলছেন, মজিবর রহমান তার একতলা বাড়ি ভেঙে ১১ তলা ভবন নির্মাণ কাজ শুরু করেছেন। কিন্তু ১১ তলা ভবন নির্মাণ করতে হলে ইমারত নির্মাণ আইন অনুযায়ী, পাশের ভবন থেকে কমপক্ষে দেড় মিটার দূরে ভবনটি নির্মাণ করতে হবে। কিন্তু মজিবর রহমান কোনো জায়গাই ছাড়েননি। ফলে ভবন ঘেঁষে পাইলিংয়ের সঙ্গে সঙ্গে তার ভবনে ফাটল দেখা দিয়েছে।

এ নিয়ে আরডিএতে অভিযোগ করেছেন আলম খান। এরপর মজিবর রহমানকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে আরডিএ। ওই নোটিশে বলা হয়, মজিবর রহমান ইমারতের অনুমোদিত নকশা লংঘন করে ভিত ঢালাই পর্যন্ত নির্মাণ করেছেন। এই ভবনের কারণে প্রতিবেশীর ভবনে ফাটল দেখা দিয়েছে। তাই কেন নির্মাণাধীন ভবনটি অপসারণ করা হবে না, তা সাত দিনের মধ্যে আরডিএকে জানাতে হবে।

আগামী ১৮ জুন মজিবর রহমান আরডিএতে হাজির হয়ে নিজের বক্তব্য উপস্থাপন করতে পারবেন। তবে পরবর্তী আদেশ না দেওয়া পর্যন্ত মজিবর রহমানকে ভবনটি নির্মাণের কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়।

 

কিন্তু মজিবর রহমান তার ভবনের নির্মাণের কাজ বন্ধ রাখেননি। ফলে দিনকে দিন পাশের ভবনে ফাটল বাড়ছে বলে দাবি করেছেন ভবনটির মালিক আলম খান। তিনি বলেন, নির্মাণ কাজ বন্ধ করার জন্য তিনি মজিবর রহমানকে অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু তিনিই উল্টো তাকে হুমকি দিয়েছেন। বলেছেন, নির্মাণ কাজে বাধা দিলে পরিণতি ভালো হবে না। এ নিয়ে আলম খান নগরীর রাজপাড়া থানায় একটি লিখিত অভিযোগও করেছেন।

আলম খানের ভবনটি দেখতে গেলে মজিবর রহমানও ছুটে আসেন। তখনও তাকে আলম খানকে নানাভাবে হুমকি দিতে দেখা যায়। মজিবর দাবি করেন, আগে কখনও তিনি আলমকে হুমকি দেননি। তিনি আইন মেনেই ভবন নির্মাণ করছেন। তাই আরডিএ নির্দেশ দিলেও তিনি কাজ বন্ধ করেননি। তাছাড়া প্রতিবেশী আলম খানের ভবন থেকে নির্দিষ্ট দূরেই ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে বলেও দাবি করেন মজিবর রহমান।

আলম খানের অভিযোগ পেয়ে নির্মাণাধীন ভবনটি পরিদর্শন করেছিলেন আরডিএ’র উপ-সহকারী প্রকৌশলী আবুল কাশেম। তিনি বলেন, ‘নকশা লংঘন করেই ভবনটির নির্মাণ কাজ চলছে। এজন্য আমরা মালিককে নোটিশ দিয়েছি। শুনানি শেষে এ নিয়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়ার পরও কাজ চলা নিয়ে জানতে চাইলে আরডিএ’র অথরাইজড অফিসার মুহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘কাজ বন্ধ করে আসার মতো জনবল আমাদের নেই। তাই আমরা সংশ্লিষ্ট থানাকে চিঠি দিয়ে কাজ বন্ধ করে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছি। পুলিশ কেন কাজ বন্ধ করছে না তা বলতে পারবো না।’

জানতে চাইলে নগরীর রাজপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত ওসি মশিউর রহমান বলেন, আরডিএ’র চিঠি পাওয়ার পর তিনি কাজ বন্ধ করে দেওয়ার জন্য একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছেন। ওই পুলিশ কর্মকর্তা কেন কাজ বন্ধ করেননি তা তিনিও জানেন না। #

 

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.