বর্ষায় চলনবিলের মায়াবী রূপ


বিশেষ (নাটোর) প্রতিনিধি: প্রবাদে আছে, বিল দেখতে চলন, গ্রাম দেখতে কলম। চলনবিল যার নাম শুনলেই গা ছমছম করে ওঠে। থইথই জলে উথালপাতাল ঢেউয়ের কথা ভেবে। ষড়ঋতুর এই দেশে প্রতি ঋতুতে ভিন্ন ভিন্ন রূপে দেখা যায় চলনবিলকে।বর্ষায় সাগরের মতো বিশাল জলরাশি বুকে নিয়ে ভয়ংকর রূপ ধরে এ বিল। শরতে শান্ত জলরাশির ওপর ছোপ ছোপ সবুজ রঙের খেলা। হেমন্তে পাকা ধান আর সোঁদা মাটির গন্ধে ম ম করে চারদিক। শীতে হলুদ আর সবুজের নিধুয়া পাথার এবং গ্রীষ্মে চলনের রূপ রুক্ষ। যে কোনো ঋতুতে চলনবিলের মূল আকর্ষণ নৌকাভ্রমণ।
বর্ষা এলেই চলনবিলের বিস্তীর্ণ জলরাশি দেখলে মনে হবে এ যেন অথৈ সাগর। চলননবিলে গেলে মনে হবে এ এক অন্য জগত। বিস্তীর্ণ প্রান্তরে জলের নাচন দেখে মুহূর্তেই নেচে উঠবে মন।চলনবিলে নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা।
দিগন্তের গা ঘেঁষে গ্রামের পর গ্রাম। সবুজে সবুজময়। আর চলনবিলের বুকজুড়ে চোখজুড়ানো জলরাশি। মনোরম এই দৃশ্য দেখলে যে কেউ মুগ্ধ হয়ে যাবেন।
ষড়ঋতুর এই দেশে প্রতি ঋতুতে ভিন্ন ভিন্ন রূপে দেখা যায় চলনবিলকে। রূপ বদলের এই বৈচির্ত্য শরতের চলনবিল এক ভিন্ন জগৎ। বর্ষার চলনবিলের রুদ্র মূর্তি এখন শান্ত, জলরাশি স্থির। নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা। নানা রঙের ফুল, হরেক রকম পাখির কলরব। এ যেন প্রকৃতির এক অপরূপ সাজ। তাই চলনবিলে নিরাপদে নৌকা ভ্রমণ করার জন্য শরৎই সবচেয়ে ভাল সময়। বিশেষ করে বর্ষার সময় এই বিলের বিশালতা বৃদ্ধি পায়। আবার গ্রীস্মে এই বিল তার অন্য রূপ ধারণ করে।
তবে চলনবিল যত রূপেই আমাদের কাছে দৃশ্যমান হোক না কেন তার মধ্যে এর নৌকা ভ্রমণ অর্থাৎ অথৈ জলরাশির দৃশ্য আমাদের অন্তরে স্থায়ীভাবে গেঁথে থাকে।
দেখা যায়, বিস্তৃত জলরাশির বুকে ঢেউ ভাঙার খেলা। মাঝেমধ্যে দিগন্ত রেখায় সবুজের আলপনা। এরমধ্যে ঢেউ ভেঙে ছুটে চলেছে যান্ত্রিক শ্যালো নৌকা। আছে মাছ ধরার বিচিত্র আয়োজনও। এটাই বর্ষা মৌসুমের চলনবিল। জীব বৈচির্ত্যের বিপুল সমাহার। নাটোর-সিরাজগঞ্জ-পাবনা জেলার বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে এ বিলের অবস্থান। শুকনো মৌসুমে বিলের আয়তন অনেক কমে গেলেও তা প্রাণ ফিরে পায় বর্ষাকালে। তাই ভ্রমণ পিপাসুদের বর্ষা মৌসুমে চলনবিল হয়ে উঠেছে উপযুক্ত গন্তব্য।
দ্বীপের মতো গ্রামগুলো যেন একেকটা ভাসমান বাজার। বর্ষায় এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রাম, এক পাড়া থেকে অন্য পাড়া, গ্রাম থেকে শহর, স্কুল-কলেজসহ যোগাযোগের সব জায়গায় ভাসমান মানুষগুলোর নিত্য সঙ্গীই যেন ঐতিহ্যবাহী ডিঙি নৌকা। কোনোটা চলছে পাল উড়িয়ে, কোনোটা ঠেলা নৌকা, আবার কোনোটা স্টিলের তৈরি ইঞ্জিনচালিত।
চলনবিলের সৌন্দর্যকে আরো আকর্ষণীয় করেছে বালিহাঁস, তিরমূল, বাটুলে, মুরগি, হাঁস, খয়রা, মানিক জোড়, ডুটরা, চাপাখি, লোহাড়াং, মেমারচ, বোতক, নলকাক, সাদা বক, কানাবক, ফেফী, ডাহুক, চখা, বকধেনু, ইচাবক, করা, কাছিচোরা, রাতচোরা, ভুবনচিলা, মাছরাঙা, পানকৌড়িসহ নানা প্রজাতির পাখপাখালি।
বিশালতার দিকে থেকে চলনবিল দেশের অন্যতম বড় বিল। যান্ত্রিক জীবনের প্রশান্তি আনতে বাংলাদেশের বৃহত্তরবিল চলনবিলে নৌকা ভ্রমণে আগ্রহ বেড়েছে পর্যটকদের। চলনবিলের ইতিহাস- ঐতিহ্য সম্পর্কে জানা ভরা বর্ষায় পর্যটকদের নির্মল বিনোদন ও চলনবিলকে উপভোগ্য করতে নাটোরের গুরুদাসপুরে খুবজিপুরগ্রামে দেখা যাবে চলনবিল জাদুঘর।
এই জাদু ঘরটির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন অধ্যক্ষ আব্দুল হামিদ। সেখানে রয়েছে চলনবিলের হাজার বছরের কৃষ্টিকালচার, ইতিহাস-ঐতিহ্যের নানা দর্শন। বর্তমানে জাদুঘরটি সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালতি হচ্ছে।
পাশের সিংড়া উপজেলায় রয়েছে ঘাসি দেওয়ানের মাজার, তাড়াশ উপজেলায় রয়েছে জমিদার বাড়ি ও নওগাঁয় রয়েছে শাহ্ শরীফজিন্দানী (রা.) মাজার শরীফ। আর নাটোর সদরে রয়েছে উত্তরা গণভবনসহ রানীভবনীর স্থাপনা।
গুরুদাসপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ তমাল হোসেন বিটিসি নিউজকে বলেন, এশিয়ার বড় বিল হচ্ছে চলনবিল। দেশের নানা প্রান্ত থেকে বর্ষায় চলনবিলের নির্মল আনন্দ উপভোগ করতে ছুটে আসেন মানুষ। কিন্তু পর্যটকদের বসার জায়গার, গাড়ি পার্কিং- আলোসহ নিরাপত্তা ব্যবস্থার কারনে পরিবার নিয়ে কিংবা দলগত ভ্রমনটি উপভোগ্য ছিলনা। পর্যটকদের এসব সুবিধা নিশ্চিত করে গড়ে উঠেছে স্বর্ণ কয়েকটি বিনোদন কেন্দ্র।
বর্ষায় চলনবিলে জলে নৌকা নিয়ে ঘুরতে বেশ ভালোই লাগে। ব্যস্ত চলনবিলের বুকে বিকেল নামলেই নৌকা নিয়ে বের হয়ে যান ভ্রমণপিপাসুরা। বিকেলের শান্তগ্ধি পরিবেশে দেখতে পারবেন চলনবিলের মায়াবী রূপ। শান্ত জলরাশির, নির্মল বাতাসে ভরপুর প্রকৃতি আর প্রাচীন নিদর্শন দেখতে ঘুরে আসতে পারেন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বিল চলনবিল ।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর বিশেষ (নাটোর) প্রতিনিধি মো. নাসিম উদ্দিন নাসিম। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.