বর্ষবরণকে নিয়ে নানা আয়োজনে ব্যস্ত রাবি চারুকলা অনুষদ

রাবি প্রতিনিধি: নববর্ষ বাঙালির অন্যতম বড় উৎসব নতুন বছরের আগমনী বার্তা কড়া নাড়ছে দরজায়। মাত্র এক সপ্তাহ পরই নতুন বর্ষের উদযাপনে মাতবে সবাই। তাই সারাদেশে চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি। যার ছোঁয়া লেগেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) চারুকলাতেও। উৎসবটি উদযাপনে দিনকাল মাথায় রেখে তাই প্রস্তুতি চলছে ভালোভাবেই।

প্রতিবছরের ন্যায় এবারও অনুষদ থেকে বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নিয়েছে চারুকলার শিক্ষক শিক্ষার্থীরা। নতুন বর্ষকে স্বাগত জানাতে ছেলেরা পড়বে রঙিন পাঞ্জাবী-পায়জামা। আর মেয়েরা বের হবে রঙিন শাড়ি গায়ে। সকালে চড়ুইভাতি সেরে ডামি নিয়ে মঙ্গল শোভাযাত্রা তো থাকছেই। সাথে থাকছে দিনভর লোকজ ও সাংস্কৃতিক নানা আয়োজন।

চারুকলা প্রাঙ্গণে সরেজমিনে দেখা যায়, উদযাপনের মূল আকর্ষণ ইউনেস্কো স্বীকৃত মঙ্গল শোভযাত্রাকে মাথায় রেখে চলছে যত আয়োজন। শোভাযাত্রার জন্য পুরো উদ্যোমে চলছে রঙ বেরঙের ডামি বানানোর কাজ। ছুটির দিন শনিবারেও কাজ করছে একদল শিক্ষার্থী। মনোযোগ দিয়ে একটি একটি করে কাঠি বাঁধছেন তারা। পাশেই নির্দেশনা দিচ্ছেন শিক্ষকরা। জানা গেলো, সময়ের দিকে খেয়াল করেই ছুটির দিনেও কাজ করছেন তারা।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বৈশাখের সকল কাজের মূল দায়িত্বে থাকা মৃৎশিল্প ও ভাস্কর্য বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কনক কুমার পাঠক বলেন, এবার এই আয়োজনে যা কিছু আছে সবই লোক ও বাঙালির শেকড়কে অনুসরণ করে। আমরা দুইটি ডামি তৈরি করছি। এগুলো হচ্ছে, একটি ঘোড়া ও একটি ময়ুর। ঘোড়ার ডামি ‘গতি’র বার্তা বহন করবে। এটি দীর্ঘদিন ধরে ঝিমিয়ে থাকা বাংলাদেশে অর্থনীতির বর্তমান গতিকে উপস্থাপন করবে। আর ময়ুরের নাচ ও রঙিন পালক উৎসবের আমেজকে নির্দেশ করবে। এছাড়াও সময় থাকলে আমরা একটি হাতির ডামি তৈরি করবো। যা বাংলাদেশের ধাবমান বৃহৎ অর্থনীতির প্রতীক হিসেবে বার্তা বহন করবে। তবে প্রতিবছর শোভাযাত্রার জন্য রঙ বেরঙের মুখোশ তৈরি করা হলেও এবার রাষ্ট্রীয় নির্দেশনার কথা মাথায় রেখে মুখোশ তৈরি করা হচ্ছে না বলে জানান তিনি।

কবে নাগাদ শেষ হতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রস্তুতির কার্যক্রম পহেলা বৈশাখের আগের দিনই শেষ করার চেষ্টা করছি। তবুও দেখা যায় কিছু না কিছু কাজ শেষ পর্যন্ত থেকেই যায়। এদিকে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা বিভিন্ন বিভাগের ও বর্ষের। উৎসবের আয়োজনে পার করছেন ব্যস্ত সময়।

চিত্রকলা, প্রচ্যকলা ও ছাপচিত্র বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী জান্নাতুল আফ্রিদী বলেন, বড়ভাই, আপু ও শিক্ষকদের সাথে একসাথে এসব কাজ করতে ভালো লাগছে। আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের এসব আয়োজন শুধু টিভিতে দেখেছি, কিন্তু তৈরির কাজ কখনো করিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর শিক্ষার্থী হিসেবে কাজ করার সুযোগ হয়েছে বলে অনেক ভালো লাগছে।

শিল্প ও ভাষ্কর্য বিভাগের শিক্ষার্থী সঞ্জয় কুমার সূত্রধর বিটিসি নিউজকে বলেন, ‘পহেলা বৈশাখ নিয়ে চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থীদের মধ্যে এক ধরনের বাড়তি অনুভূতি কাজ করে। উৎসবে সবাই একসাথে অংশগ্রহণ করবো, এতকিছু এজন্যই। তাই রোদ বৃষ্টির বাধা উপেক্ষা করে আমরা ৩ তারিখ থেকে ডামি বানানোর কাজ শুরু করেছি। আশা করি আগামীকালের ভিতর আজকের মধ্যে ডামিগুলোর অবকাঠামো বানানো শেষ হবে। তারপর আমরা ডামির উপর কাগজ লাগিয়ে উপরে বিভিন্ন রং করব।’

বৈশাখী রং ফুটে ওঠে কারও পোশাকে, কারও দেয়ালে, কারও দরজায়, কখনো রাস্তায় কিংবা পর্দায়। রঙের এই খেলা আরও উজ্জ্বল হয়, যখন কাজগুলো হয় লোকজ ধাঁচে। তাইতো শুধু চারুকলারই নয়, অন্য অনুষদ ও বিভাগের শিক্ষার্থী, এমনকি বহিরাগত অনেকেই প্রস্তুতি দেখতে আসছেন। তাদের উৎসুক চোখে মুখে দেখা যাচ্ছে উৎসবের আগাম আমেজ। বাঙালি জাতির এই প্রাণের উৎসবকে সামনে রেখে তাই প্রস্তুত হচ্ছে রাবি চারুকলা। নতুন বর্ষ সবার গ্লানি মুছে দিয়ে নতুন সূচনা নিয়ে আসবে এমনটাই প্রত্যাশা সবার।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর রাবি প্রতিনিধি মো: মুজাহিদ হোসেন।#

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.