বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে সমন্বয় প্রয়োজন

বিশেষ প্রতিনিধি: বাংলাদেশ রূপকল্প ২০৪১ অনুসারে দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৮০ শতাংশই নগরীতে বাস করবে এবং এই ৮০ শতাংশ জনগনের ২৫ শতাংশই বাস করবে মেগা সিটি ঢাকাতে। বর্তমানে ঢাকায় যে পরিমাণ বর্জ্য উৎপন্ন হয় তার সিংহভাগই অসংগৃহীত থাকে যা পরিবেশ দূষণ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি।
এই সমস্যাকে চিহ্নিত করে এবং দূষণমুক্ত ঢাকা নগরীর স্বপ্ন বাস্তবায়নে ইউএসএইড ও এফসিডিও এর আর্থিক সহযোগিতায় এবং কাউন্টারপার্ট ইন্টারন্যাশনাল এর কারিগরী সহযোগিতায় ডিএসকে কনর্সোটিয়াম কর্তৃক বাস্তবায়িত ঢাকা কলিং প্রকল্পের উদ্যোগে গতকাল মঙ্গলবার (১৯ অক্টোবর) পার্লামেন্ট ক্লাব, বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ- এর পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সাথে কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ক আইনী সীমাবদ্ধতা ও সুপারিশ শীর্ষক এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি, সাবের হোসেন চৌধুরী, এমপি। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তানভীর শাকিল জয়,এমপি, সদস্য, পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন ডা. দিবালোক সিংহ, নির্বাহী পরিচালক, দুঃস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্র (ডিএসকে) ও
চেয়ারপার্সন,কোয়ালিশন ফর দ্যা আরবান পুওর (কাপ)।
ইউনিসেফের ১টি পরিসংখ্যান বলছে ঢাকা শহরের প্রায় ৪০ লক্ষ মানুষের বসবাস শহুর জুড়ে থাকা ৫ হাজারের অধিক বস্তিগুলোতে যারা কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার আওতা বহির্ভূত থাকছে যা বাংলাদেশের সংবিধানের পরিপন্থী। কেননা, বাংলাদেশের সংবিধানের ১৮ (ক) অনুচ্ছেদে পরিবেশগত অধিকার সংরক্ষণের কথা নিশ্চিত করে বলা হয়েছে, ‘রাষ্ট্র বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নাগরিকদের জন্য পরিবেশ সংরক্ষণ ও উন্নয়ন করবে এবং প্রাকৃতিক সম্পদ, জীববৈচিত্র্য, জলাভূমি, বন ও বন্য প্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা বিধান করবে’।
এই কঠিন বর্জ্যকে একটি আধুনিক ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার আওতায় আনতে যথাযথ আইন প্রণয়ন ও তার সঠিক প্রয়োগ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ঢাকা কলিং প্রকল্প কাজ করছে বলে অবগত করেন সানজিদা জাহান আশরাফী, কনসোর্টিয়াম কো-অর্ডিনেটর, ঢাকা কলিং প্রকল্প, ডিএসকে।
বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫,পরিবেশ সংক্রান্ত সকল আইনের জন্য একটি ছাতার ন্যায় কাজ করলেও এখানে কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে তেমন কিছু বলা নেই বলে জানান সুমন আহসানুল ইসলাম, উপদেষ্টা, ইনসাইটস্।
তিনি আরো বলেন, সিটি কর্পোরেশন কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে সিটি কর্পোরেশন আইন ২০০৯ এ উল্লেখ থাকলেও তা কিভাবে করবে সে সম্পর্কে সুস্পষ্ট কোন ব্যাখ্যা আইনে নেই। কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ আইনী বিধিমালা প্রণয়ন জরুরি।
বিশেষ করে খসড়া কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিধিমালা, ২০২১ চূড়ান্তকরণ এবং যথাযথ পরিবীক্ষণের বিধান কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থপনা বিধিমালায় রাখতে হবে বলে তিনি তার উপস্থাপনায় ব্যক্ত করেন। অর্থনৈতিক উন্নয়নের সাথে সাথে আমাদের বর্জ্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্জ্যকে কমিয়ে আনা এবং একে সম্পদে রূপান্তরিত করায় দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করা জরুরি বলে মনে করেন আবু নাসের খান, চেয়ারম্যান, পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা)।
বস্তিবাসী সংগঠনসমূহের পক্ষে ফাতেমা আক্তার, সাধারণ সম্পাদক, এনডিবিইউএস, বস্তিবাসীদের বর্জ্য অপসারন সেবা অধিকার এবং বস্তিতে স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ নিশ্চিতকরনে নীতিমালা এবং আইনে বিষয়টি অর্ন্তভুক্ত করার উদ্যোগ গ্রহনের জন্য অনুরোধ এবং ঢাকাসহ অন্যান্য বড় শহরের কঠিন বর্জ্য জনিত দূষণ প্রতিরোধে বস্তিভিত্তিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রকল্প গ্রহন এবং বস্তিবাসীদের সম্পৃক্ত করার সুপারিশ তুলে ধরেন।
তিনি দেশীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করে বর্জ্যকে সম্পদে রূপান্তর করার অনুরোধ জানান যাতে করে নগর দরিদ্রদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা যায়। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রনালয় কর্তৃক গৃহীত কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিধিমালায় গ্যাপ নিরোসন, দ্রুত অনুমোদন ও সঠিক বাস্তবায়ন দরকার বলে মত প্রকাশ করেন শ্যামল দত্ত, সম্পাদক, দৈনিক ভোরের কাগজ। সুইডেনের মতো বিশ্বের অনেক দেশ বর্জ্য আমদানী করে যা বাংলাদেশের জন্য একটি বড় সুযোগ বলে তিনি মনে করেন।
সুষ্ঠু পরিবেশ গঠন ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি কাজ করছে জানান রেজাউল করিম বাবলু, এমপি, সদস্য, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। তিনি সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বারোপ করে তৃণমূল পর্যায়ে এই সচেতনতা বৃদ্ধিতে এনজিওর কাজকে সমর্থন করে তৃণমূলের তথ্য তাদের কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্য এনজিওদের ধন্যবাদ জানান।
বর্জ্যকে সম্পদে রূপান্তরকরণে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) মাধ্যমে অগ্রসর হওয়া যেতে পারে বলে মত ব্যক্ত করেন মইনুদ্দীন আহমদ, চিফ অব পার্টি, কাউন্টারপার্ট ইন্টারন্যাশনাল। বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় তিনি অনুকরণীয় মডেল তৈরিতে জোর দিয়ে বলেন টেকসই একটি মডেল তৈরি করতে পারলে সেটা সকল জায়গায় বাস্তবায়ন করা যাবে। ঢাকা কলিং প্রকল্পের আওতায় বিভিন্ন সময় প্রাপ্ত যে সকল সুপারিশ উপস্থাপন করা হয়েছে তা বিবেচনায় নেয়ারও অনুরোধ জানান তিনি।
কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সুনির্দিষ্ট আইন না থাকলেও পরিবেশ সংরক্ষণে যে সকল আইন বিদ্যমান তার যথাযথ প্রয়োগ কতটুকু হচ্ছে তা খতিয়ে দেখা দরকার এবং বর্জ্যকে সম্পদে রূপান্তরকরণে এর বাণিজ্যিকিকরণ জরুরি বলে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মত প্রকাশ করেন তানভীর শাকিল জয় এমপি, সদস্য, পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি।
বাংলাদেশের সংবিধানের উপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, পরিবেশ সংরক্ষণ ও জনস্বাস্থ্য একটি সুতোয় গাঁথা বলে মন্তব্য করেন সভার প্রধান অতিথি সাবের হোসেন চৌধুরী এমপি, সভাপতি, পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর বিশেষ প্রতিনিধি আবু সায়েম মোহাম্মদ সা‘-আদাত উল করীম। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.