বরেন্দ্র অঞ্চলের জন্য খরা ভাতা ও কৃষি জমি সুরক্ষার দাবী

সংবাদ বিজ্ঞপ্তি: রাজশাহীতে বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে আজ ০৪ জুন ২০২৪, মঙ্গলবার সকাল ১০.৩০ মিনিটে রাজশাহীর প্রাণকেন্দ্র সাহেববাজার জিরো পয়েন্টে করবো ভূমি পুনরুদ্ধার রুখবো মরুময়তা, অর্জন করতে হবে মোদের খরা সহনশিলতা প্রতিপাদ্যে খরা মোকাবেলায় বন্ধন কর্মসূচী অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বরেন্দ্র অঞ্চলের যুব/যুবাদের বৃহৎ ঐক্য বরেন্দ্র ইয়ুথ ফোরাম ও গবেষণা উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ রিসোর্স সেন্টার ফর ইন্ডিজিনাস নলেজ (বারসিক) এর যৌথ আয়োজনে খরা মোকাবেলায় বন্ধন কর্মসূচী অনুষ্ঠিত হয়।
ইয়ুথ এ্যাকশন ফর সোস্যাল চেঞ্জ-ইয়্যাস’র সাধারণ সম্পাদক ও বরেন্দ্র ইয়ুথ ফোরামের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক আতিকুর রহমান আতিকের সঞ্চালনায়, শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন বরেন্দ্র ইয়ুথ ফোরামের এর সভাপতি শাইখ তাসনিম জামাল।
খরা মোকাবেলায় বন্ধন কর্মসূচিতে ইয়ুথ এ্যাকশন ফর সোস্যাল চেঞ্জ-ইয়্যাস’র সভাপতি গণমাধ্যমকর্মী মো. শামীউল আলীম শাওন বলেন “রাজশাহী তথা বরেন্দ্র অঞ্চলে যেভাবে গাছকে নির্বচারে হত্যা করা হচ্ছে। যেভাবে প্রাণপ্রকৃতি, পরিবেশ প্রতিবেশ ধ্বংশ করা হচ্ছে, পুকুরগুলোকে চৌবাচ্চায় রুপান্তরিত করা হচ্ছে ঠিক এরকম একটি পরিস্থিতিতে বিশ^ পরিবেশ দিবসের আগমূহুর্তে এসে আমরা মানববন্ধন করছি। আমাদের বরেদ্র অঞ্চল তথা রাজশাহীতে যেভাবে তাপদাহ বৃদ্ধি পেয়েছে তা অকল্পনীয়। এই তাপদাহ কেন? নগর পরিকল্পনাবিদরা থাকে এসি রুমে। তারা তো রাস্তায় থাকে না জনসাধারণের মত। তারা সকলেই এসি রুমে বসে থেকে উন্নয়ন পরিকল্পনা করে। ফলে নিজের ইচ্ছা মত খেয়াল খুশিমত উন্নয়ন পরিকল্পনা করি। পরিকল্পনা যে স্থানকে নিয়ে করা হচ্ছে তাতে পুকুর আছে কিনা শতবর্ষী গাছ আছে কিনা সেটা কাটা পরছে কিংবা ভরাট করা লাগছে কিনা দেখি না। ফলে পরিবেশ প্রতিবেশ ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।”
রাজশাহীতে বসবাসের অযোগ্য শহর ঢাকার কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারের অনুকরণে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার গড়ে তোলা হচ্ছে বলে উল্লেখ করে তিনি সবুজ নগর রাজশাহীতে পরিবেশ ও প্রকৃতি বান্ধব সবুজ শহিদ মিনার নির্মাণ করে রাজশাহীর কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারকে বিশে^র বুকে আদর্শ ও দৃষ্টান্ত গড়ে তোলার দাবি জানান।
আদিবাসী যুব পরিষদের সভাপতি উপেন রবিদাস বলেন, “আমাদের সংস্কৃতি, প্রকৃতি ও পরিবেশকে কেউ অস্বীকার করে বেচে থাকতে পারবে না। আমাদের যে বাংলাদেশ সেই বাংলাদেশ কে আমরা উপস্থাপন করি সবুজের বাংলাদেশ হিসেবে। যেখানে বৃক্ষ থাকবে, পাখি থাকবে, ফুল থাকবে, প্রজাপতি থাকবে জোনাকীরা থাকবে মৌমাছিরা থাকবে। এমন সুন্দর একটা দেশের প্রত্যাশা করি। আমাদের উন্নয়ন দরকার আছে তবে সেই উন্নয়ন পরিবেশ বান্ধব হতে হবে। পরিবেশকে ক্ষতিগ্রস্থ করে যেন সেই উন্নয়ন না হয়।”
জাতীয় আদিবাসী পরিষদ, কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সূভাস চন্দ্র হেমব্রম বলেন “শুধু মানুয় নয়, সকল প্রাণের প্রাণের জন্য বাসযোগ্য নগর তৈরী এবং নগরের মানুষের নিরাপদ খাদ্য ও খাদ্য সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠায় কৃষিপ্রতিবেশকে উন্নয়ন ও সহযোগী হিসেবে ভূমিকা পালন করাও এই নগরের সকল শ্রেণী পেশার মানুষের দায়িত্ব, বরেন্দ্র এলাকার আদিবাসী কৃষক অভিনাথ মার্ডি ও রবি মার্ডির আত্মহত্যার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন “খরা প্রবণ বরেন্দ্র অঞ্চলের পানি সংকট সমস্যা ক্রমেই তীব্রতর হচ্ছে তাই বরেন্দ্র অঞ্চলের খরা সহনশীলতা, মরুময়তা ও পানিসংকট নিরসনে দ্রুততর কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ এখন সময়ের দাবী।
রাজশাহী থিয়েটারের সভাপতি নিতাই কুমার সরকার সংহতি জানিয়ে বলেন, “আমরা যারা মানুষ তারা আমরা পরিবেশ রক্ষার জন্য পরিবেশ বাঁচানোর জন্য, কৃষক বাঁচানোর জন্য খরাপ্রবণ এলাকাকে বাঁচানোর জন্য আমরা সারাক্ষণ চিৎকার করি। আর আমরা যারা মহামানব তারা কি করি? আসুন আমরা পুকুর ভরাট করি, আমরা বড় বড় বৃক্ষ কাঁটি, আমারা নদী দখল ও দূষণ করি। তারপর আমার এসি রুমে সেমিনার সিম্পোজিয়াম করি”।
বরেন্দ্র ইয়ুথ ফোরামের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক আতিকুর রহমান আতিক বলেন, “রাজশাহী তথা বরেন্দ্র অঞ্চল বাংলাদেশের অন্য অঞ্চলের তুলনায় সম্পূর্ণ আলাদা। তাই এ অঞ্চলে অবকাঠামোগত উন্নয়ন কর্মকান্ড বাস্তবায়ন করতে হলে এ অঞ্চলের সংস্কৃতি পরিবেশ প্রতিবেশ প্রাণবৈচিত্র্যকে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।”
পরিবেশ আন্দোলন ঐক্য পবিষদের সভাপতি মাহবুব টুংকু বলেন, “মাটি, পানি, বায়ুসহ সকল প্রকার পরিবেশের দূষণ বন্ধ করতে হবে। শুধু মানুষ নয় সকল প্রাণের জন্য বসবাস উপযোগী নিরাপদ, বাসযোগ্য একটি নগর হিসেবে গড়ে তুলতে হবে এবং একইসাথে জলবায়ু ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠার জন্য স্থানীয়, জাতীয় ও আঞ্চলিকভাবে সম্মিলিত সামাজিক গণআন্দোলন গড়ে তুলতে হবে”।
বরেন্দ্র ইয়ুথ ফোরামের এর সভাপতি শাইখ তাসনিম জামাল কর্মসূচিতে দাবি উপস্থাপন করেন। দাবিগুলো হলো- বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষি জমি সুরক্ষায় ভূমি পূণরুদ্ধার করতে হবে; বরেন্দ্র অঞ্চলের খরা সহনশীলতা, মরুময়তা ও পানিসংকট নিরসনে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণসহ বিশেষ বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে; বরেন্দ্র অঞ্চলের জন্য বিশেষ ‘খরা তহবিল’ গঠন ও খরাপিড়িতদের জন্য ‘খরা ভাতা’ চালু করতে হবে; পুকুর-দিঘী, খাল-বিল-খাড়ি, হাওর-বাওড়, নদী-নালা, জলাশয়-জলাধারগুলো সুরক্ষায় সেগুলোকে ভরাট বন্ধ, দখল-দূষণমুক্ত এবং লিজপ্রথা বাতিল করে তাতে জনসাধারণের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে হবে; উন্নয়ন কর্মকান্ডে বৃক্ষ নিধন বন্ধ করে প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী বৃক্ষসহ সকল বৃক্ষ সুরক্ষা করতে হবে; শহরে পর্যাপ্ত ফাকা জায়গা, খেলার মাঠ নিশ্চিত করতে হবে এবং শহরের উন্নয়ন কর্মকান্ডে নো সয়েল নীতি থেকে সরে এসে ‘প্রকৃতি নির্ভর সমাধান ও উন্নয়ন (ন্যাচার বেইজড সল্যুউশন ও ডেভলপমেন্ট)’ কে বিশেষভাবে গুরুত¦ দিয়ে উন্নয়ন কর্মকান্ড বাস্তবায়ন করতে হবে।
খরা মোকাবেলায় বন্ধন কর্মসূচীতে বক্তব্য দেন, মুক্তিযুদ্ধের তথ্য সংগ্রহক ওয়ালিউর রহমান বাবু, রাজশাহী প্রেসক্লাবের সভাপতি সাইদুর রহমান, পরিবেশ আন্দোলন ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পদক নাজমুল হোসেন রাজু, গ্রীন ভয়েসের বিভাগীয় সহ সমন্বয়ক আব্দুর রহিম, স্বপ্নচারী সমাজ উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি রুবেল হোসেন মিন্টু প্রমুখ।
সংবাদ প্রেরক  আতিকুর রহমান আতিক, সাধারণ সম্পাদক, ইয়ুথ এ্যাকশন ফর সোস্যাল চেঞ্জ-ইয়্যাস, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, বরেন্দ্র ইয়ুথ ফোরাম-রাজশাহী। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.