বরিশালে বিএনপির নেতাকর্মীদের অবস্থান, সমাবেশ ঘিরে আতঙ্ক

বরিশাল ব্যুরো: বরিশালে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশের জন্য নির্ধারিত বঙ্গবন্ধু উদ্যানে গিয়ে দেখা গেছে উদ্যানের একাংশে মঞ্চ নির্মাণের কাজ চলছে। পাশাপাশি বুধবার রাত থেকেই নগরী ও পার্শ্ববর্তী জেলা-উপজেলা থেকে নেতা-কর্মীরা সমাবেশস্থলে অবস্থান নিয়েছে।
সংগঠনটির কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, পরিবহন বন্ধ করে দিয়ে কোনো লাভ হবে না। তাদের নেতা-কর্মীরা এরই মধ্যে নগরীতে অবস্থান নিয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে দেখা গেছে, মঞ্চ তৈরির কাজ এগিয়ে চলছে। পাশাপাশি বিএনপির নেতা-কর্মীরা সেখানে অবস্থান নিয়েছেন। বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা সমাবেশস্থলেই প্রস্তুতি সভা করছেন।
সমাবেশস্থলে অবস্থানে থাকা বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান বলেন, গণসমাবেশের দিন যত ঘনিয়ে আসছে আমাদের নেতা-কর্মীদের উপর নির্যাতন বাড়ছে। এবার বুকে গুলি করলেও আমাদের নেতা-কর্মীরা দাবি আদায় না করে আন্দোলন থেকে সরে আসবে না। তাই যতই পুলিশি অভিযানের নামে আমাদের নেতা-কর্মীদের হয়রানি করা হোক। আমাদের নেতা-কর্মীরা পিছু হটবে না। 
কেন্দ্রীয় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল বলেন, বরিশালে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ কোনোভাবেই আটকে রাখতে পারবে না কেউ। হোটেলে হোটেলে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে আমাদের নেতা-কর্মীদের মধ্যে আতংক ছড়াতে। বাস বন্ধ করা হয়েছে। থ্রি হুইলার বন্ধ করা হয়েছে। সমাবেশের আগের দিন থেকে বন্ধ থাকবে লঞ্চও। আমাদের নেতাকর্মীরা দরকার হলে কলা গাছের ভেলায় ভেসে আসবে। ইতোমধ্যে নগরীতে অবস্থান নিয়েছে আমাদের নেতা-কর্মীরা। সমাবেশস্থলে যে করেই হোক তারা আসবে। সমাবেশ সফল হবে।
বিএনপির মিডিয়া সেলের আহবায়ক জহির উদ্দিন স্বপন বলেন, ভোলার চরফ্যাশনে আমাদের নেতাকর্মীদের উপর বর্বর হামলা চালানো হয়েছে। এই ধরনের ঘটনা বরিশালের সব জায়গায় ঘটছে। আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা প্রশাসনের সমন্বয়ে বিএনপিকে দমানোর প্রয়াস চালাচ্ছে।

borisal bnp 2

মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব মীর জাহিদুল কবির জাহিদ বলেন, পরিবহন সেক্টরগুলোর নেতৃত্ব স্থানীয়রা সবাই সরকারি দলের পদধারী নেতা। তাদের উদ্দেশ্যে তো বিএনপিকে দমন করাই। প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে আমাদের পথরুদ্ধ করতে নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা চালিয়ে রক্তাক্ত করা হচ্ছে। তারা সমাবেশ বানচাল করতে চায়। তবে কোনো কিছু করেই লাভ হবে না। বর্তমানে আমাদের সমাবেশস্থল প্রস্তুতির কাজ চলছে। মঞ্চ তৈরি থেকে শুরু করে অন্যান্য যে কাজগুলো রয়েছে সেই সমস্ত আমাদের নেতারা তদারকি করছেন।
মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি রেজাউল করিম রনি বলেন, সমাবেশস্থলে আসার জন্য পথে পথে বাধা সৃষ্টির প্রস্তুতি নিচ্ছে ক্ষমতাসীন দল। কোনো বাধা আমাদের নেতা-কর্মীরা মানবে না। লক্ষ লক্ষ মানুষ সমাবেশস্থলে জমায়েত হবে।
বিভাগীয় গণসাবেশকে ঘিরে আতঙ্ক
এদিকে ৫ নভেম্বর বরিশালে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ ও ১১ নভেম্বর যুবলীগের সম্মেলনকে ঘিরে দু’দলের শো-ডাউনে নগর জুড়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে। বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশকে কেন্দ্র করে ৪ ও ৫ নভেম্বর বাস মালিক সমিতি ও তিন চাকার বাহন (থ্রি-হুইলার ও ইজিবাইক) মালিক-শ্রমিক সংগঠন নানান দাবিতে বন্ধ ঘোষণা করে। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার বরিশাল-ভোলা রুটের লঞ্চ, স্পীডবোর্ড চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। ইতোমধ্যে আওলাদ নামক বরিশাল-ভোলা রুটের লঞ্চে ভেদুরিয়া ঘাটে হামলা-ভাঙচুরের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী শুক্রবার ও শনিবার বরিশাল সারাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হবে। বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশকে ঘিরে আওয়ামী লীগ-বিএনপি মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে। ৫ নভেম্বরের কর্মসূচি সফল করতে রাজপথে বিএনপিসহ অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা লিফলেট বিতরণসহ গণসংযোগ, মিছিল ও সমাবেশ করে আসছে। প্রায় এক মাস ধরে বিএনপির এ কর্মসূচি চলাকালে বরিশাল নগরীরসহ বিভিন্ন জেলা-উপজেলার নেতা-কর্মীদের ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। অপরদিকে ১১ নভেম্বর যুবলীগের ৫০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত টানা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে যুবলীগ। প্রতিদিন ওয়ার্ডে যুবলীগের এসব কর্মসূচিতে মিছিল, সভা ও সমাবেশকে কেন্দ্র করে যুবলীগের পাশাপাশি, ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা যুক্ত হচ্ছেন। ফলে প্রধান দুই দল রাজপথে মুখোমুখি অবস্থান নেওয়ায় সংঘাতের আশংকা দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যেই কাশিপুর এলাকায় আওয়ামী লীগের হামলায় ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতিসহ ১০ জন আহত হয়েছে।

borisal bnp copy

মহানগর শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক পরিমল চন্দ্র দাস জানান, বিএনপি পূর্বে যে সন্ত্রাসী কার্যক্রম করেছে সে জন্যই শ্রমিক নেতারা যানবাহন বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে। যানবাহন বন্ধ থাকায় সাধারণ মানুষ চলাচল করতে না পারায় চরম ভোাগন্তিতে পড়েছেন। বিভিন্ন স্টেশনে সাধারণ মানুষ এসব ভোগান্তিতে চরম অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
এদিকে বরিশাল নগরীতে হঠাৎ শো-ডাউনের বিষয়ে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা বলেন, আমাদের নগরী শান্তির নগরী। এই নগরীতে কেউ বিশৃঙ্খলা করলে আমরা সহ্য করবো না। ৫ নভেম্বর খালেদা জিয়ার সরকার সন্ত্রাসী বাহিনী সমাবেশ করবে। তারা বিভিন্ন জায়গায় মানুষকে ভুল বুঝিয়ে বিভ্রান্ত করছে। এতে যেন কোনো ধরণের সমস্যা না হয়, সেই জন্যই আমরা নগরীতে তদারকি করছি।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার ফজলুল করিম বলেন, আবাসিক হোটেলে অভিযান পরিচালনা করা নিয়মিত বিষয়। বিএনপির নেতা-কর্মীরা থাকবে হোটেলে, সেটা কোনো সমস্যা নয়। আমরা অভিযান চালাচ্ছি কোনো চোর, বাটপার বা ছিনতাইকারী হোটেলে আছে কি না সেই খোঁজ নিতে।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর বরিশাল ব্যুরো প্রধান আল মামুন। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.