বদলে যাওয়া একটি থানার গল্প


নাটোর প্রতিনিধি: নাটোরের বাগাতিপাড়া মডেল থানার কারণে পাল্টে যাচ্ছে পুলিশ সম্পর্কে মানুষের ধারণা।সীমানা প্রাচীরের দেয়ালে লেখা আছে, পুলিশ জনতা, জনতাই পুলিশসহ নানা শ্লোগান। রয়েছে জাতীয় পতাকাসহ নানা চিত্রকর্ম। ফটক দিয়ে ঢোকার সময় হাতের ডান দিকে একটি বাগান। লাগানো হয়েছে নানা ফুলের গাছ। গাছগুলোতে ফুলও এসেছে।
এছাড়া থানার অভ্যন্তরের থাকা ঝোপ ঝঙ্গল পরিস্কার করে লাগানো নানাজাতের আমগাছ ও শাকসবজির বাগান। রয়েছে একটি ছাউনি। যেটি সেবা ছাউনি নামে পরিচিত, জরুরি সেবা দেওয়া হবে সেখানে। মূল ভবনে ঢুকতে ঝোলানো ব্যানারে বড় বড় অক্ষরে লেখা জিডি করতে টাকা নয়; মিষ্টি হেসে ধন্যবাদ দিন।
এছাড়া থানার সামনে এক সময়ের জঙ্গলে পরিপূর্ণ বড়াল নদীর ধার পরিস্কার করে সেখানে তৈরী করা হয়েছে ”বেলাশেষে” নামে অবসর বিনোদন পার্ক। এছাড়া এখানে তৈরী করা হয়েছে পাখিদের বাসা। যেখানে পাখিরা এসে বাসা বেঁধেছে। তৈরী করা হয়েছে ক্যান্টিন। অপেক্ষারত সেবাদানকারীদের জন্য লাইব্রেরী। প্রার্থনা জন্য মসজিদ সংস্কার করে নতুন রুপ দেয়া হয়েছে। তৈরী করা হয়েছে ওজুখানা ও বাথরুম।
মহিলা পুলিশদের থাকার জন্য আলাদা ম্যাচ। থানার প্রতিটি ভবন ঝকঝকে তকতকে করা হয়েছে। এসব দৃশ্য চোখে পড়বে নাটোর জেলার বাগাতীপাড়া মডেল থানায় ঢুকলে। অথচ বছর খানেক আগেও নাটোরের বাগাতিপাড়া মডেল থানা নামেই ছিল মডেল । অনেকের বিরক্তির কারণ ছিল এই থানা প্রাঙ্গণ। পুরো থানা ছিল জঙ্গলে পরিপূর্ণ পাশাপাশি পরিবেশ ছিল নোংরা। দুর্গন্ধ থাকতো নিয়মিত।
কিন্তু সেই দৃশ্য এখন উধাও বাগাতিপাড়া মডেল থানার। এখন থানার পাশ দিয়ে গেলেই মন জুড়িয়ে যায়। নান্দনিক চিত্রকর্ম ও দেয়াল লিখন, অবসর বিনোদন পার্ক, সুরম্য মসজিদ, ক্যান্টিন, নানা প্রজাতির বৃক্ষ আর ফুলের গাছ দিয়ে ভেতরে-বাইরে সাজানো হয়েছে।
প্রবাদে ছিল, বাঘে ছুঁলে আঠেরো ঘা, আর পুলিশে ছুঁলে ছত্রিশ! কিন্তু বাগাতিপাড়া মডেল থানার অনন্য পুলিশিং বদলে দিচ্ছে পুলিশ সম্পর্কে মানুষের ধারণা।এই থানায় যোগ দিয়ে বর্তমান ওসি মোঃ সিরাজুল ইসলাম শুরু করেন সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ।
সরেজমিনে দেখা যায়,বড়াল নদীর তীরবর্তী থানার ভেতরে ও বাইরে খালি জায়গা লাগানো হয়েছে হরেক রকমের ফুলের গাছ। যেটি প্রকৃতিপ্রেমীদের মন ছুঁয়ে যাবে। জরাজীর্ণ থানার ভবনগুলো বদলে গেছে। সংস্কারের পর একসঙ্গে ২৪ জন পুলিশ কর্মকর্তা সেখানে বসে সেবা দিতে পারেন। সেবাপ্রার্থীদের জন্য আনা হয়েছে নতুন চেয়ার।
থানায় সেবা নিতে আসা আইনজীবী রিপন মাহমুদ বলেন, নিজের বাসার পাশের এলাকায় অবস্থান হওয়ায় বাগাতিপাড়া মডেল থানার প্রায়ই আসা হয়। কিন্তু এই থানার পরিবেশ এতা সুন্দর আমি আগে দেখিনি। সত্যি বদলে গেছে বাগাতিপাড়া মডেল থানা।
থানা সংলগ্ন এলাকায় বসবাস করেন রবিউল আলম। তিনি বলেন, আগে থানার পাশ দিয়ে জঙ্গলের কারণে আমরা ভয়ে হাঁটতাম না। ওই এলাকাটা সবসময় নোংরা থাকতো।
তিনি আরও বলেন, কিন্তু এখন আমরা থানার পাশে অবসর বিনোদন পার্কে আমরা পরিবার নিয়ে আড্ডা দিই। দেয়ালে লেখা বাণীগুলো প্রায়ই পড়ি। আসলে বাগাতিপাড়া মডেল থানা এখন জেলার অন্য থানাগুলোর রোল মডেল।
ওসি মোঃ সিরাজুল ইসলাম বলেন, পুলিশ জনগণের বন্ধু সেই কথাটার বাস্তব রূপ দিতে পুলিশের রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি আবদুল বাতেন স্যার এবং নাটোরের বিগত ও বর্তমান পুলিশ সুপারের স্যারের নির্দেশে বাগাতিপাড়া থানা পুলিশের টিম কাজ করছে।একটি সেবা ছাউনি করেছি। সেখানে জরুরি সেবা দেওয়া হবে। সীমানা প্রাচীরের স্বাধীনতা, ইতিহাস, পুলিশিং এর বিভিন্ন বাণী লেখা হয়েছে। এর মাধ্যমে থানায় যারা আসবেন তাদের ভেতর একটি ইতিবাচক ধারণা তৈরি হবে বলে আশা করছি।
ওসি বলেন, থানার অফিসাররা যাতে ভালো পরিবেশে কাজ করতে পারেন সেজন্য অত্যাধুনিক ওয়ার্ক স্টেশন করা হয়েছে। জরুরী সেবা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নাটোর প্রতিনিধি খান মামুন। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.