বদলির-তদবির কালচারকে চিরতরে বিদায় করতে চান ড. বেনজীর আহমেদ

বিশেষ (ঢাকা) প্রতিনিধি: পুলিশ অফিসার এবং ফোর্সের জন্য বাস্তবসম্মত বদলি ও পদায়ন নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়‌নের মাধ্যমে বদলির-তদবির কালচারকে চিরতরে বিদায় করতে চান সংস্থাটির ইন্সপেক্টর জেনারেল (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ।

আজ শনিবার (০৪ জুলাই) রাজারবাগে বাংলাদেশ পুলিশ অডিটরিয়ামে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) আয়োজিত বিশেষ অপরাধ ও আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় আইজিপি এসব কথা বলেন।

ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ডিএমপির সব থানার ওসিসহ ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

ইতিম‌ধ্যেই গতানুগ‌তিক ধারা পা‌ল্টে বদলি‌তে আনা হ‌য়ে‌ছে নতুনত্ব। আই‌জি‌পি মনে করেন, অধিকাংশ পুলিশ অফিসার এবং সদস্য সন্তানদের লেখাপড়ার সুবিধার কথা বিবেচনা করে ঢাকার বাইরে যেতে চান না। এ সংকট নিরসনের লক্ষ্যে ঢাকার বাইরে বিভাগীয় শহরে মানসম্মত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপনের উদ্যোগের কথাও জানান আইজিপি।

এ ছাড়া বিভাগীয় পর্যা‌য়ে পু‌লি‌শের চাক‌রি‌কে আকর্ষণীয় কর‌তে বিভাগীয় শহরগু‌লো‌তে পু‌লিশ সদস্য‌দের জন্য মানসম্মত চি‌কিৎসা সু‌বিধা নি‌শ্চিত করারও প্রত্যয় ব্যক্ত ক‌রেন ইন্সপেক্টর জেনারেল (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ।

আইজিপি বলেন, চলমান করোনাকালে গত তিন মাসে পুলিশ বদলে গিয়েছে। পুলিশ জনগণের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছে। জনগণের অকুণ্ঠ সমর্থন ও বিশ্বাস অর্জন করেছে। করোনায় পুলিশ জনগণের পাশে গিয়ে যেভাবে সেবা দিয়েছে, এর বেশীর ভাগই পুলিশের কাজ ছিল না। এজন্য পুলিশকে বলাও হয়নি, নির্দেশও দেয়া হয়নি। কিন্তু পুলিশ এ কাজটি করেছে একান্তই নিজের দায়িত্ববোধ থেকে।

স্বাধীনতা যুদ্ধের পর পুলিশ এত সম্মান, এত মর্যাদা আর কখনো পায়নি, গত তিন মাসে তা পেয়েছে। এখন জনগণ পুলিশের পক্ষে কথা বলছে, পুলিশের জন্য লিখছে, যারা কথায় কথায় পুলিশের সমালোচনা করতেন, তারাও আজ পুলিশের পক্ষে হৃদয় উজাড় করে বলছেন, পুলিশকে সমর্থন করেছেন। যে সম্মান মর্যাদা আমরা গত তিন মাসে পেয়েছি তা টাকা দিয়ে কেনা যায় না, মানুষের ভালোবাসা পেতে হলে মানুষের সঙ্গে থাকতে হয়, তাদের কাছে যেতে হয়, মানুষকে ভালোবাসতে হয়।

আইজিপি প্রশ্ন রেখে বলেন, একদিন করোনা চলে যাবে। এরপর কী হবে, আমরা কি আবারও আমাদের আগের স্বরূপে আবির্ভূত হব? তিনি বলেন, বাংলাদেশ পুলিশ আর পেছনে ফিরে যাবে না, জনগণের সম্মান ও ভালোবাসা নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাবে।

পুলিশ প্রধান বলেন, জনগণের পুলিশ হতে হলে কী করতে হবে? পুলিশকে সব ধরনের দুর্নীতি মুক্ত হতে হবে। তিনি বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান ‘জিরো টলারেন্স’। পুলিশে কোনো দুর্নীতিবাজের ঠাঁই নেই। মাদকের সঙ্গে কোনো পুলিশ সদস্যের সম্পর্ক থাকবে না। পুলিশকে হতে হবে মাদকমুক্ত। পুলিশের নিষ্ঠুরতা বন্ধ করে আইনি সক্ষমতাকে কাজে লাগাতে হবে। পুলিশকে যেতে হবে জনগণের দোরগোড়ায়। তিনি বলেন, পুলিশ অফিসার এবং ফোর্সেরও সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিত করা হবে।

করোনা আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের সর্বোচ্চ চিকিৎসায় গৃহীত পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে আইজিপি বলেন, রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালকে মাত্র দুই সপ্তাহে ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতাল থেকে ৫০০ শয্যার কোভিড হাসপাতালে পরিণত করা হয়েছে। করোনা পরীক্ষার জন্য মাত্র ১২ দিনে পিসিআর মেশিন স্থাপন করা হয়েছে। ঢাকায় একটি হাসপাতাল ভাড়া করা হয়েছে।

ঢাকার বাইরে বিভাগীয় হাসপাতাল আধুনিকায়ন করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, পুলিশ সদস্যদের সংক্রমণের ঝুঁকি এড়ানোর জন্য আবাসন ব্যবস্থা এবং ডিউটিতে পরিবর্তন আনা হয়েছে। এর ফলে পুলিশ সদস্যদের আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা কমেছে এবং মৃত্যুর হার হ্রাস পেয়েছে।

আইজিপি আশা প্রকাশ করে বলেন, আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকলে, ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করলে আরও ভালো কিছু করা সম্ভব। তিনি বলেন, আসুন, আমরা পরিবর্তিত হই, দেশকে পরিবর্তন করি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আগামী প্রজন্মের জন্য একটি উন্নত বাংলাদেশ গড়ে তুলি।

আইজিপি তার বক্তব্যের শুরুতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে জনগণকে সুরক্ষিত রাখতে গিয়ে দায়িত্ব পালনকালে জীবন উৎসর্গকারী ৪৬ জন শহীদ পুলিশ সদস্যের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

তিনি তাদের পরিবারের সদস্যদের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানান। আইজিপি এসব পরিবারের অংশ হিসেবে সুখে-দুঃখে তাদের সঙ্গে থাকার দৃঢ় অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর বিশেষ (ঢাকা) প্রতিনিধি মো: ফারুক আহম্মেদ। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.