বদলগাছীতে চেক জালিয়াতির অভিযোগে জনতার হাতে মুকুল আটক


নওগাঁ প্রতিনিধি: নওগাঁর বদলগাছীতে সুদ ব্যবসায়ী মুকুল হোসেন (৩৫) নামে এক যুবককে চেক জালিয়াতির অভিযোগে আটক করেছে স্থানীয় এলাকাবাসী। গতকাল বুধবার বিকেলে তাকে বদলগাছী উপজেলার ব্রীজের পাশ থেকে তাকে আটক করা হয়। মুকুল হোসেন উপজেলার ভগবানপুর গ্রামের মৃত এচাহাক আলীর ছেলে।

পরে সাবেক শ্রমিক নেতা শাহিন হোসেন তাকে নিয়ে ভগবানপুর গ্রামে নিয়ে এসে একটি পরিত্যাক্ত ঘরে আটক করে রাখে। এলাকায় মাইকিং করে সন্ধ্যায় সালিশ বৈঠক করে গ্রামবাসী। এসময় বদলগাছী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শামসুল আলম খান এবং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জালাল উদ্দিনসহ গণ্যমাণ্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে।

জানা গেছে, মুকুল হোসেন প্রাথমিকের গন্ডি পেরোতে পারেননি। উপজেলা পর্যায়ে সরকারি দলের শীর্ষ পদেও ছিলেন না। বদলগাছী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের সেই সময়কার চেয়ারম্যান শফি মাহমুদের সঙ্গে তার সখ্যতা ছিল। উপজেলা চেয়ারম্যান যেখানে যেতেন সেখানে তার সঙ্গে থাকতেন। একারণে এলাকায় তার পরিচিতি ছিল উপজেলা চেয়ারম্যানের ‘দেহরক্ষী’ হিসেবে। এ সুবাদে তিনি এলাকায় ধীরে ধীরে প্রতারণার জাল বুনেছিলেন। তিনি এলাকার সহজ সরল লোকজনদের পটিয়ে সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে চাকরি দেওয়ার নামে মোটা অংকের টাকা নিয়েছিলেন।

দীর্ঘদিন থেকে সুদের ব্যবসার সাথে জড়িত মুকুল হোসেন। এলাকার লোকজন তার কাছ থেকে প্রয়োজনে উচ্চ সুদে টাকা নিতে। আর এ সুযোগে তিনি তাদের কাছ থেকে ফাঁকা চেন নিয়ে রাখতেন। পরবর্তিতে ওই ফাঁকা চেকে নিজের ইচ্ছেমত টাকার অঙ্ক বসিয়ে ডিজঅনার করে। পরে আদালতে মামলা দিয়ে বিভিন্ন ভাবে হয়রানি করা হতো। তার এমন কর্মকান্ডে এলাকাবাসী অতিষ্ট হয়ে উঠেছে। এভাবে প্রায় অর্ধশতাধিক মানুষকে তিনি হয়রানি করেছেন।

সর্বশেষ আবারও তিনটা চেক ডিজঅনার করে উকিল নোটিশ দেওয়ায় গ্রামবাসীর মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। বুধবার বিকেলে সাবেক শ্রমিক নেতা শাহিন হোসেন বদলগাছী উপজেলা সদরের ব্রীজের পাশ থেকে মুকুলকে আটক করে সিএনজি যোগে ভগবানপুর গ্রামে নিয়ে গিয়ে একটি পরিত্যাক্ত ঘরে আটক করে রাখা হয়। এরপর এলাকায় মাইকিং করে সন্ধ্যায় সালিশ বৈঠক করা হয়। ভূক্তভোগীরা ব্যাংক চেক ও চাকরি দেওয়ার নামে নেওয়া টাকা তার কাছে ফেরত চান। পরবর্তিতে কোন ফায়সালা না হওয়ায় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জালাল উদ্দিন তাকে থানায় নিয়ে আসেন। এ খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে প্রতারিত লোকজন থানায় গিয়ে ভীড় জমায়।

উপজেলার নন্দাহার গ্রামের ভুক্তভোগী আমিনুর হোসেন বিটিসি নিউজকে বলেন, মুকুলের কাছ থেকে কয়েকমাস আগে ৭০ হাজার টাকা ঋণ নেয়ার সময় দুইটি ফাঁকা চেক দিয়েছিলাম। কিন্তু টাকা পরিশোধের আগেই তার একটি চেকে ১৪ লাখ টাকার মামলা দিয়েছে। বারফালা গ্রামের শাজাহান বলেন, ফাঁকা চেক নিয়ে ৩৫ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিলাম। সেই চেকে ১০ লাখ টাকার অঙ্ক বসিয়ে আমার বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে।

উপজেলার লক্ষীপুর গ্রামের তোফাজ্জল হোসেন বিটিসি নিউজকে বলেন, ২০১৭ সালে আমার ছেলেকে দপ্তরি কাম নৈশপ্রহরি পদে চাকরি দেওয়ার নামে করে ৫ লাখ ৮০ হাজার টাকা নিয়েছিল। সেই টাকা ফেরত চাইলে মুকুল আমাকে বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখান। মুকুল হোসেনকে আটক করা হয়েছে শুনে ভগবানপুর গ্রামে গিয়েছিলাম।

এব্যাপারে মুকুল হোসেন বিটিসি নিউজকে বলেন, আমার ভগবানপুর মৎস্যজীবি সমবায় সমিতি আছে। সেই সমিতি থেকে আমিনুর ৫ লাখ টাকার অধিক ঋণ নিয়েছিল। সুদে আসলে হয়েছে ১৪ লাখ টাকা। এছাড়া শাজাহান ৪ লাখের অধিক টাকা ঋণ নিয়েছিল। তা সুদে আসলে হয়েছে ১০ লাখ টাকা হয়েছে। তারা টাকা দিতে বিভিন্ন ভাবে তালবাহনা করছিল দীর্ঘদিন থেকে। এজন্য চেক দিয়ে মামলা দিয়েছি।

সাবেক শ্রমিক নেতা শাহিন বিটিসি নিউজকে বলেন, মুকুলের প্রতারনার কারণে এলাকার মানুষ বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্থ ও হয়রানীর শিকার হচ্ছে। গ্রামবাসীর অনুরোধে মুকুলকে আটক করেছিলাম একটা আপোষ মিমাংসার ব্যবস্থা করার জন্য।

উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শামসুল আলম খান বিটিসি নিউজকে বলেন, যাদের কাছ থেকে চেক নেয়া হয়েছিল তাদেরকে চেক ফেরত দেয়ার জন্য রাতে আপোষ মিমাংসার চেষ্টা চলছিল। পরবর্তীতে তাকে থানা পুলিশে দেয়া হয়, যাতে কোন ধরনের অপ্রীতিকার পরিস্থিতি না ঘটে।

বদলগাছী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জালাল উদ্দিন বিটিসি নিউজকে বলেন, তাকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। এলাকাবাসী যদি অভিযোগ দেয় তাহলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নওগাঁ প্রতিনিধি মো: আব্বাস আলী। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.