বদলগাছীতে এক কিলোমিটার খালের অভাবে জলাবদ্ধতায় কয়েক হাজার বিঘা ফসলি জমি অনাবাদি


নওগাঁ প্রতিনিধি: নওগাঁর বদলগাছী উপজেলায় একটি খালের অভাবে জলাবদ্ধতায় কয়েক হাজার বিঘা ফসলি জমি অনাবাদি পড়ে থাকে। ওই মাঠে প্রায় ১ কিলোমিটার একটি খাল খনন করা হলে জমিগুলো তিনটি ফসল আবাদ করা সম্ভব। এতে করে এলাকার আর্থসামাজিক উন্নয়ন হবে বলে মনে করছেন স্থানীয় কৃষকরা। বিষয়টি নিয়ে কৃষি বান্ধব সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করছেন এলাকাবাসী।

জানাগেছে, উপজেলার বালুভরা ইউনিয়ন পরিষদের কুশারমুড়ী মাঠের পানি নিষ্কাষণের জন্য একটি ড্রেনেজ ব্যবস্থা ছিল। মাঠের পানি ওই ড্রেন দিয়ে বের হয়ে মাঠের পশ্চিম পাশ দিয়ে খলসি ও নিহনপুর গ্রামের মধ্য দিয়ে মাগুরা গ্রামে অবস্থিত মাগুরা বিলে চলে যেত। এতে করে ওই মাঠের চাঁনপুর, মির্জাপুর, দোনইল, খলসি, পাইকপাড়াসহ কয়েকটি গ্রামের প্রায় আড়াই থেকে তিন হাজার বিঘা জমির ফসলের কোন সমস্যা হতো না। ফলে মাঠে বোরো, আমন ও পাটের আবাদ করা হতো।

কিন্তু ১৫ থেকে ২০ বছর আগে মাগুরা গ্রামের শেষ প্রান্তে ওই ড্রেনের মুখ বন্ধ করে মাটি ভরাট করে দিয়ে সেখানে একটি বাড়ি নির্মাণ করা হয়। এতে করে কুশারমুড়ী মাঠের পানি বের হয়ে খলসি গ্রাম পর্যন্ত যেতে পারলেও মাগুরা বিলে যেতে পারেনা। ফলে পানি বের হয়ে যাওয়ার বিকল্প কোন পথ না থাকায় মাঠে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।

এতে করে সামান্য বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার কারণে মাঠে বোরো, আমন ও পাটের ফসল ডুবে যায়। এভাবে কৃষকরা প্রতি বছর ক্ষতিগ্রস্থ হতে শুরু হলে আমনের আবাদ করা ছেড়ে দেন। পরবর্তীতে আবার পাটের আবাদ করাও ছেড়ে দেন কৃষকরা। সর্বশেষ শুধু একটিমাত্র বোরো আবাদ করা হয়।

কিন্তু বৃষ্টি হলে বোরো আবাদও হাঁটু পানির মধ্যে কাটতে হয়। এতে করে তিন ফসলি জমি এখন এক ফসলে পরিনত হয়েছে। পানি জমে থাকায় জমিতে কচুরি পানার স্তুপ জন্মেছে। খাবারের জন্য স্থানীয়রা এ মাঠ থেকে মাছ শিকার করে থাকেন। এ মাঠের প্রায় ১ কিলোমিটার খাল খনন করে পানি নিষ্কাষনের ব্যবস্থা করা হলে আবারও জমিতে তিন ফসলের আবাদ করা সম্ভব হবে।

কুশারমুড়ী গ্রামের কৃষক মিনহাজ উদ্দিন বিটিসি নিউজকে বলেন, গত ১৫ থেকে ২০ বছর আগে বোরো, আমন ও পাটের ফসল হতো। কিন্তু বর্তমানে জলাবদ্ধতা কারণে শুধু বোরো ফসল করা হয়। ডুবে যাওয়ার কারণে অন্য কোন আবাদ করা সম্ভব হয় না। জলাবদ্ধতা দুরীকরণে খাল খনন করা হলে ওই খালের পানি দিয়ে আবাদ করা হবে।

এছাড়া খালের পানিতে মাছ চাষ ও হাঁস পালন করা হবে।

একই গ্রামের কৃষক আহাদ আলী মিয়া বিটিসি নিউজকে বলেন, খাল খননের সময় যদি আমার জমির উপর দিয়ে যায় সেক্ষেত্রে সরকারকে আমি জমি দিয়ে দিবো। আমার কোন আপত্তি থাকবে না। জলাবদ্ধতার কারণে সারা বছরই কয়েকশ বিঘা জমিতে পানি জমে থাকে। খাল খনন করা হলো কয়েকটি গ্রামের কয়েক হাজার কৃষকরা উপকৃত হবেন। আমাদের সবার জন্যই সুবিধা হবে।

মির্জাপুর গ্রামের সাইদুল, দোনইল গ্রামের আসব আলী, কুশারমুড়ী গ্রামের বয়জ্যেষ্ঠ সাইদুল ইসলাম ও শুম্ভনাথ মন্ডল বিটিসি নিউজকে বলেন, মাঠের উত্তর পাশ দিয়ে প্রায় ১ কিলোমিটার খাল খনন করে মরা নদীতে পানি নামার ব্যবস্থা করতে হবে। মরা নদীর মুখে বাঁধ কেটে সেখানে একটি স্লুইচগেট করা হলে নদীতে পানি নামানো হলে জলাবদ্ধা দুর হবে। আর স্লুইচগেট থাকার কারণে বন্যার সময় মাঠে পানি প্রবেশ করতে পারবে না। আর সামান্য বৃষ্টিতেই বোরো মৌসুমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এতে করে বোরো ফসল ডুবে যায়। গত বছর হাঁটু সমান পানিতে বোরো ধান কাটতে হয়েছে।

জুয়েল ও সাজ্জাদ হোসেন বিটিসি নিউজকে বলেন, মাঠের পানি নিষ্কাষনের জন্য খাল খনন করা হলে একই জমিতে তিনটি ফসল উৎপাদন করা সম্ভব। আবার খালের পানিতে আমাদের মতো বেকার যুবকের মাছ চাষে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। এতে করে এলাকার আর্থসামাজিক উন্নয়ন হবে। কৃষি বান্ধব সরকারের কাছে আমাদের দাবী জলাবদ্ধতা দূরীকরণে দ্রুত খাল খনন করা হোক।

বদলগাছী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো: মাসুম আলী বেগ বিটিসি নিউজকে বলেন, যেহেতু পূর্বে মাঠের পানি নিষ্কাষনে ড্রেনেজ ব্যবস্থা ছিল। মাঠটি পরিদর্শণ করে স্থানীয় জনসাধারন এবং সরকারি সহযোগীতায় প্রকল্পের মাধ্যমে জলাবদ্ধতা দূরীকরণের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নওগাঁ প্রতিনিধি মো: আব্বাস আলী। #

 

 

 

 

 

 

 

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.