বগুড়া ছাত্রলীগের কমিটি বাতিল না করলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তালা দেওয়ার হুমকি

বগুড়া প্রতিনিধি: বগুড়া জেলা ছাত্রলীগের নবগঠিত কমিটি বাতিলের দাবি জানানো হয়েছে। অন্যথায় পদবঞ্চিতরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তালা দেওয়াসহ তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলার হুমকি দিয়েছেন।
শনিবার (১৯ নভেম্বর) দুপুরে বগুড়া প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন থেকে এ আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করেন সংগঠনের ১৫ ইউনিটের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পক্ষের নেতৃবৃন্দ।
লিখিত বক্তব্যে বগুড়া সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ওবাইদুল্লাহ সরকার স্বপন বলেন, গত ৭ নভেম্বর প্রেস নোটের মাধ্যমে বাণিজ্যিক উপায়ে অযোগ্যদের দিয়ে জেলা ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। এতে সাধারণ মানুষও হতবাক হয়েছেন। এ কমিটিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে অবিলম্বে বাতিলের দাবি জানানো হয়।
অন্যথায় আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। আর এর জন্য কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে তার দায়িত্বশীলদের দায় নিতে হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ প্রগতিশীল ঐতিহ্যবাহী সংগঠন। যা জন্মলগ্ন থেকে নিজস্ব সাংবিধানিক গঠনতন্ত্র মোতাবেক পরিচালিত হচ্ছে। কিন্তু বগুড়ায় গঠনতন্ত্রের সঙ্গে সাংঘর্ষিক পন্থা অবলম্বন করে অনৈতিক স্বার্থে এ কমিটি ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এতে ত্যাগীদের বঞ্চিত করে মাদক ব্যবসায়ী, মাদকসেবী, চাঁদাবাজ, ছিনতাইকারী, সমকামী, অপহরণকারীসহ অসংখ্য অভিযোগে অভিযুক্তদের স্থান দেওয়া হয়। এর মধ্যে সভাপতি সজীব সাহা ২০২১ সালে দূর্গাপূজায় শহরের চেলোপাড়ায় মদ্যপ অবস্থায় গণপিটুনির শিকার হন। তার ছাত্র রাজনীতির চেয়ে ব্যবসায়ীক পরিচয় বেশি। সাধারণ সম্পাদক আল মাহিদুল ইসলাম জয়কে রাজনৈতিক
অঙ্গনে কেউ চেনেন না।
ছাত্রলীগের এই নেতা আরও বলেন, বগুড়ার কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীও নন। তার মতো অপরিচিতকে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক করায় পুরো ছাত্রলীগকে কলঙ্কিত করা হয়েছে। এ কমিটির বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করলে জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেন। তাদের আশ্বাসে কর্মসূচি স্থগিত রাখা হয়। কিন্তু তারা ব্যর্থ হলে পুনরায় বিক্ষোভ কর্মসূচি শুরু করা হয়েছে। আগামীতে এ আন্দোলন আরও তীব্র হবে। পর্যায়ক্রমে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তালা দেওয়া হবে। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
সংবাদ সম্মেলনে গত মার্চে শহরের সাতমাথায় নিহত ছাত্রলীগ নেতা তাকবির ইসলাম খানের বাবা জহুরুল ইসলাম খান দুলাল বলেন, তার ছেলেকে হত্যাকারী আবদুর রউফকে (বহিষ্কৃত ছাত্রলীগ নেতা) নতুন কমিটির অভিষেক অনুষ্ঠানে দেখা গেছে। সে ছাত্রলীগ নেতাদের সঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগের প্রয়াত সভাপতি মমতাজ
উদ্দিন ও বর্তমান সভাপতি মজিবর রহমান মজনুর ছেলে হাবলুর কবরে ফুলের মালা দিয়েছে। এতে একজন বাবা হিসেবে তিনি চিন্তিত।
সংবাদ সম্মেলনে বগুড়া সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শামীম হোসেন, সরকারি আজিজুল হক কলেজ শাখার সভাপতি কে এম মোজাম্মেল হোসাইন বুলবুল, কাহালু উপজেলা সভাপতি সৌগির আহমেদ রিতু, নন্দীগ্রাম উপজেলা সাধারণ সম্পাদক শুভ আহমেদ, সরকারি শাহ সুলতান কলেজ শাখার সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাব্বী স্বাধীন, শাজাহানপুর উপজেলা সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রঞ্জু, শেরপুর উপজেলা সাধারণ সম্পাদক সোহেল রানা, বগুড়া শহর শাখার সভাপতি সুজিত কুমার দাস, শিবগঞ্জ উপজেলা সাধারণ সম্পাদক মাসুম পারভেজ মুকুল, দুপচাঁচিয়া উপজেলা সাধারণ সম্পাদক নূর ইসলাম, ধুনট উপজেলা সভাপতি জাকারিয়া খন্দকার, গাবতলী উপজেলা সাধারণ সম্পাদক আব্দুল গফুর বিপ্লব, সারিয়াকান্দি উপজেলা সাধারণ সম্পাদক দুলাল, সোনাতলা সরকারি নাজির আখতার কলেজ সভাপতি সুমন এবং সরকারি সান্তাহার ডিগ্রি কলেজ শাখার সভাপতি রাজন কুমার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
জানা গেছে, গত ৭ নভেম্বর রাতে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জেলা ছাত্রলীগের ৩০ সদস্যের কমিটি ঘোষণা দেন। এতে সজীব সাহাকে সভাপতি এবং আল মাহিদুল ইসলাম জয়কে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। নতুন কমিটিতে দায়িত্বশীল পদলাভ করলেও সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক না হওয়ায় পদবঞ্চিতরা আন্দোলনে নামেন। তারা নতুন কমিটি থেকে পদত্যাগ না করেই শহরের টেম্পল রোডে দলীয় কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেন।
কমিটি ঘোষণাকে কেন্দ্র করে জেলা আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতারাও দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েন। কয়েকদিন আগে শহরের সাতমাথায় নতুন কমিটির পরিচিতি সভা ও পাশেই দলীয় কার্যালয়ের সামনে পদবঞ্চিতদের বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে উত্তেজনা দেখা দিলে পুলিশ মাঝে অবস্থান নেয়। জেলা আওয়ামী লীগের
সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ দায়িত্বশীল অধিকাংশ নেতা নতুন কমিটির পক্ষ নেন। অপরদিকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল আলম মোহন পদবঞ্চিতদের পক্ষ নেন। দলীয় কার্যালয়ের তালা খুলে দেওয়া হয় এবং মোহন পদবঞ্চিতদের পক্ষে এ অচলাবস্থা নিরসনে গত ১১ নভেম্বর থেকে দুদিনের সময় নেন। এতে কাজ না হওয়ায় তারা (পদবঞ্চিত) আবারও আন্দোলন শুরু করেন।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর বগুড়া প্রতিনিধি রাহেনুর ইসলাম। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.