ফোর্ডনগর প্রকৃতির ও শিল্প রাজ্যে একদিন

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি: দেখার চোখ থাকলে সবই সুন্দর। প্রকৃতির রূপ-লাবণ্যের নির্যাস পেতে হলে চাই অন্তরদৃষ্টি। এবার প্রকৃতির কাছে যাওয়া ছিল বানিজ্যিক কারনে শিল্পপতি প্রকৌশৈলী নাজমূল হুদা ভাইয়ের নীডস সার্ভিসেস লিঃ এর কালার গ্যাস লাইটার ফ্যাক্টরির প্রিন্টিং এর কাজের ধরন বুঝতে গোলাপের গ্রাম খ্যাত ফোর্ডনগরে আসা।
প্রকৃতির দানের পাশাপাশি এখানে গড়ে উঠেছে শিল্প কাখানাও শুধু নীডস সার্ভিসেসেই প্রায় তিন শত লোক কাজ করছে বি আর সি স্কুলের পাশে (এস পি বাগান) ছয় বিঘা জমির উপর অাধুনিক নির্মাণ শৈলীর তৈয়েরী নীডস এখানে মানুষের সুন্দর জীবন গঠনের ভূমিকাও রাখবে।এবার দেখ নেয় প্রকৃতিকে।
ফোর্ডনগর পরিধির প্রথম খন্ড মানিকগঞ্জ জেলার সিঙ্গাইর ও দ্বিতীয় খন্ড পড়েছে ঢাকা জেলার ধামরাই উপজেলায়। কিন্তু এ দুটো খন্ডতেই সাভার বাজার রোড দিয়ে যাওয়া খুবই সহজ ও কাছে
এবার চলে যাই বংশী নদীর তীরে কাজিয়ালকুন্ডু গ্রামে। যার বুকচিরে নতুন পিচ করা সড়ক চলে গেছে আরিচা মহাসড়কের ঢুলিভিটার দিকে। পথের দুপাশে সৃজন করা হয়েছে বনায়ন। বেশ চমৎকার নিরিবিলি পরিবেশ। সড়কের পাশেই বিশাল বিল। জেলেরা আপন মনে মাছ ধরে। সেই সব মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখতে দেখতেই ছুটি চৌঠাইল গ্রামের দিকে।
মাঝে রূপনগরের দিগন্ত বিস্তৃত মাঠ।

পড়ন্ত বিকেলে গ্রামের পিচঢালা সরুপথে- চড়ে বেড়ানোর মজাই আলাদা। বাইকার আর সাইক্লিস্টদের রাইডের জন্য অন্যতম আকর্ষণীয় একটা জায়গা এই পথগুলো। চলতে চলতে অল্প সময়ের মধ্যেই পৌঁছে যাই চৌঠাইল। এ পাশটায় ধলেশ্বরী সরুখালের রূপ ধারণ করে আছে। সম্ভবত নদী খেকোদের শকুনি দৃষ্টি পড়েছে। তবে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এখনও অসাধারণ।
সবুজ ফসলের ক্ষেত, বাঁশবাগানে নানান পাখির কিচিরমিচির, কৃষকের মিষ্টি হাসি, গ্রামের সহজ-সরল মানুষগুলোর অনুসন্ধানী জিজ্ঞাসাগুলো লেগেছিল বেশ। ঘুরে ঘুরে সব মিলিয়ে ভ্রমণের নির্যাস নিতে নিতে এক সময় দেখি, তেজোদীপ্ত লাল সূর্যটা সেদিনের জন্য নানান রঙ্গের আভার ছটা ছড়িয়ে পশ্চিমাকাশে হেলে পড়েছে।
এ রকম জায়গায় ঘুরতে গেলে, যে কাউকেই আনমনে বিড় বিড় করে গেয়ে উঠতে হবে, আমি একবার দেখি/বারবার দেখি/ দেখি বাংলার মুখ।
ব্রীজ দিয়ে না গিয়ে সাভার থানা রোডের ভাগলপুর গ্রামের বংশী নদীর বালুর ঘাট হতে খেয়ায় পার হই। নদী পার দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে গ্রামের মেঠো পথে ঢুকে পড়ি। যতই যেতে থাকি ততই যেন মুগ্ধতা ভর করে।
দারুণ দারুণ সব নয়নাভিরাম দৃশ্য। এক সময় ফসলের আইল ধরে হাঁটতে থাকি। হাঁটতে হাঁটতে মনে হলো, দেশীয় নানা পদের অধীকাংশ সবজির চাহিদাই যেন মিটিয়ে থাকে এই ফোর্ডনগর।
দূর থেকেই চোখে ধরা দেয় গোলাপ ও গ্ল্যাডিওলাস বাগানের নজরকাড়া সৌন্দর্য। পথেই দেখা মিলে চন্দ্র মল্লিকা ফুলের বাগান। লাল, গোলাপি, সাদা, বেগুনি গ্ল্যাডিওলাস বাগানের সামনে যেতেই হুমড়ি খেয়ে পড়ি। বাংলার রূপ পুরোটাই যেন এপাশটায় ভর করেছে। গাড় লাল আর সাদা এ দুটো রঙের ফুলের বাগানই বেশি। চিক চিক রোদের আলো ফুলের গায়ে খেলা করে।
বাগান ভর্তি ফুটন্ত গ্ল্যাডিওলাস। চারপাশে ঘনসবুজ গাছগাছালি। আহ্ কি অপার্থিব সুখ। প্রকৃতির এ রকম দৃষ্টিনন্দন সৌন্দর্যে- বিমোহিত হয়ে পড়ি। তখন আমার মন বলে উঠে , এই বাংলায় জন্মে আমি হয়েছি ধন্য। যুগের পরিক্রমায় ভাগ হয়ে যাওয়া দুই খন্ডে ফোর্ডনগর জুড়েই, আজও চিরায়িত গ্রাম-বাংলার অনিন্দ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ভর করে আছে। সীমানা ভাগ হলেও, ফোর্ডনগরের নজরকাড়া সৌন্দর্যকে কেউ ভাগ করত।
একদা জলদস্যুদের আক্রমণ হতে নিরাপদ থাকার জন্য, ওলন্দাজ পর্তুগীজদের তৈরি ফোর্ডকালের গর্ভে বিলীন হয়ে গেলেও এখন যেন তা ক্রপ ফোর্ড মানে ফসলের দুর্গ। ফুল চাষীরা যদিও তাদের চাষাবাদ অব্যাহত রাখেন, তাহলে হয়ত একদিন ফোর্ডনগর নামটি মানুষ ভুলে গিয়ে ফুলেরনগর হিসাবেই চিনবে। যেমনটা সাদুল্লাপুর এখন গোলাপ গ্রাম হিসাবেই বেশি পরিচিত।
স্থানীয়দের সঙ্গে আলাপ জমিয়ে জানতে পারলাম, দেশী গরুর খাটি দুধ আর খাসেরচর/মিরেরচর গ্রামে আবহমান বাংলার শীত ঐতিহ্যের খেজুররসের স্বাদও নেয়া যাবে। কিন্তু ততক্ষণে সূর্যমামা মাথার ওপরে। কি আর করা- তাই সেদিনের মতো রসের লোভ সংবরণ করেই ফিরতি পথে চলি।
যাবেন কীভাবে: গুলিস্তান, গাবতলী বা অন্য কোন বাসস্ট্যান্ড হতে আরিচা/সাভারগামী বাসে যেতে হবে সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ড। সেখান হতে রিক্সা/অটোতে নামাবাজার। ব্রিজের সামনে থেকে ভাড়ায়চালিত মোটরবাইক/অটোতে রূপনগর, কাজিয়ালকুন্ডু, চৌঠাইল, খড়ারচর, কাংশাসহ ফোর্ডনগর প্রথম খন্ডের গ্রামগুলোতে যাওয়া যাবে।
খরচপাতি: সারা দিনের ঘোরাঘুরির জন্য জনপ্রতি ৫০০/৬০০ টাকা হলেই চলবে। তবে খরচের ব্যাপারটা অনেকটাই নিজেদের সামর্থ্যরে ওপর নির্ভর করে।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি মোঃ লোকমান হোসেন পলা। #
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.