ফেসবুকে মরহুম (এমপি) বাবার উদ্দেশ্যে লেখা সাবেক এমপি কন্যার হৃদয় বিদারক স্টেটাস! 

রাণীশংকৈল (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধি: ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলায় ৪ অক্টোবর মঙ্গলবার মরহুম আলী আকবর এমপি’র ২৯ তম মৃত্যু বার্ষিকী। প্রত্যন্ত এ এলাকার মানুষ শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা রেখে এ দিনটি পালন করে আসছেন প্রতিবছর। রাণীশংকৈল উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আলী আকবর (এমপি) ছিলেন গনমানুষের সুখে-দুখে ভালোলাগা ও ভালোবাসার মানুষ। এই মহান মানুষটি প্রয়াত হবার ২৯ বছরেও এলাকার সাধারণ মানুষের হৃদয়ের মধ্যে আজও আছেন শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায। 
তারই উত্তরসূরী হয়ে উপজেলায় আওয়ামী রাজনীতিতে যোগ দেন আলী আকবর এমপি’র জৈষ্ঠ্য কন্যা সেলিনা জাহান লিটা। তিনি গত সংসদে মহিলা সংরক্ষিত  (ঠাকুরগাঁও- পঞ্চগড়) আসনে এমপি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
সাবেক এমপি সেলিনা জাহান লিটা চার ভাই ও চার বোনের মধ্যে সবচেয়ে বড়। বাবার রাজনৈতিক মেধা আর শ্রদ্ধা এবং আওয়ামী লীগের প্রতি ভালোবাসার সূত্র ধরেই তার এগিয়ে চলা রাজনীতির পথে। বাবার আদর্শে আদর্শিত হয়ে মরহুম বাবাকে স্মরণীয় করে রাখতে প্রতিষ্ঠা করেন ‘আলী আকবর মেমোরিয়াল অটিস্টিক ও প্রতিবন্ধী স্কুল’,এতিমখানা, ফুটবল একাডেমি।
সাবেক এমপি সেলিনা জাহান লিটা তার ফেসবুক ওয়ালে মরহুম এমপি বাবার উদ্দেশ্যে স্মৃতিচারণমূলক একখানি বার্তা লেখেন।  তার লেখা হৃদয়ের মনিকোঠায় মিশানো চিঠি-‘খুদে বার্তা’ খানি দর্শকদের পাঠকের জন্য অনুরূপ ভাবে তুলে ধরা হলঃ
“ঊনত্রিশ বছর পরও তোমার স্মৃতিতে এতটুকু ধুলো পড়েনি আব্বা! ঠিক ঠিক আছে সব।
আমিও পার করেছি অনেকগুলো বছর কিন্তু আমিতো এখনো দাঁড়িয়ে আছি ভীত সন্ত্রস্ত বইয়ের ব্যাগ হাতে নিয়ে।সেদিনই তো কলেজের সামনে এসে দাঁড়ালে একসাথে বাড়ি যাবো বলে। আমি কলেজের আমগাছ তলায় মিটিং করছিলাম তখন আমি ছাত্রলীগের থানা মহিলা বিষয়ক সম্পাদক। বাকী বেটা, বশির বেটার নেতৃত্বে মিটিং চলছিল। আমি ভয়ে ভয়ে গাড়িতে বসলাম কিন্তু তুমি কিছুই বললেনা।
একদিন আমি আমার বান্ধবীদের নিয়ে বাজারের দিকে যাচ্ছিলাম তুমি পার্টি অফিসে বসে, ডাকলে আমায়, অনেকগুলো টাকা দিলে হাতে, আমি অবাক হয়ে বললাম ‘কি করবো?’ তুমি বললে খরচ কর।
তুমি মনে করেছিলে যেহেতু কলেজে পড়ি বান্ধবীরাও আছে তাই টাকার হয়তো প্রয়োজন আছে। এখনো স্মৃতিতে অমলিন একদিন স্কুল শেষে বাড়ি ফেরার পথে ভীষণ ঝড় বৃষ্টি রাস্তার পাশে বড় আম গাছের নিচে দাঁড়ালে বৃষ্টি থেকে বাঁচার জন্য আমার মাথায় তোমার রুমাল বিছিয়ে দিলে আব্বা!
মনে আছে কারো অসুস্থতায় তুমি নিজেই ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে। রাজনীতি কর তাই পরিবারকে সময় দিতে পারতেনা তেমনভাবে।
কিন্তু তুমিতো কখনো ভুলোনি আমার দাদির ঔষধের কথা।ছোট ফুপার কষ্ট হচ্ছিল কোর্ট করতে যানবাহনের জন্য নিজের মোটরসাইকেলটা দিয়ে দিয়েছিলে। মনে আছে সব। খুব আদরের ছিল ছোট ফুপু। তাঁর জন্য সুখ কিনতে অনেক চেষ্টা করেছো, পারোনি আব্বা! তোমার কোন ত্রুটি ছিলনা তার ভাগ্যে নাই আজ সেও পরপারে!
রাজনৈতিক নেতা হিসেবে দুর্ধর্ষ নয় বরং উল্টো অত্যন্ত সাধারণ।
ভাল একজন সমাজ সেবক, একজন নিবেদিতপ্রাণ দেশপ্রেমিক।
নিজ দলের প্রতি প্রচন্ড ভালবাসা।
কর্মীবান্ধব একজন মানুষ।
রাজনীতিতে গ্রুপিং আছে কিন্তু তুমি সার্বজনীন।
তোমার কাছে কেউ কোনো কাজে গেছে আর নিরাশ হয়ে ফিরে এসেছে এমন কখনো হয়নি আমার জানামতে।
মহান মুক্তিযুদ্ধে অসাধারণ ভুমিকা তোমার। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ক্লাব, সামাজিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিলে।
 অনেক ঝড় এসেছে রাজনীতি করতে যেয়ে।
অনেক বড় বড় নেতা বঙ্গবন্ধু হত্যার পর দল ছেড়েছে কিন্তু তুমি তোমার দেশপ্রেমিক কর্মীদের নিয়ে পার্টি অফিসে হ্যারিকেনের টিম টিম আলোয় দলটিকে জীবনের শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত ধরে ছিলে।
এখনো জ্বল জ্বল করছে তোমার মায়াবী মুখের হাসিখানা।
সাদা শার্ট প্যান্টে অসাধারণ সুপুরুষ তুমি তোমার মত কাউকেই আর দেখিনি আমি! তুমি পরিচ্ছন্ন মানুষ শুধু  পোষাকে নয় সুন্দর একটি মন ছিল তোমার। তুমি ভরসাস্থল ছিলে শুধু পরিবারের নয় সর্বসাধারণেরও বটে।
তোমার চলে যাওয়ার ২৯ বছর আমিও খুব কাছাকাছি হয়ত চলে এসেছি আব্বা!
আল্লাহ্ তোমাকে বেহেস্তবাসী করুন।”
সাবেক এমপি সেলিনা জাহান লিটা’র ফেসবুকে লেখা স্ট্যাটাস পড়ে ‘আব্দুর রাজ্জাক রাজ নামের একজন লেখেছেন,এমন একজন মাটি ও মানুষের নেতার প্রতি রইলো বিনম্র শ্রদ্ধা, পরম করুনাময় আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে জান্নাতের সর্বোচ্চ মাকাম দান করুন।’ জাকিয়া লিপি লিখেছেন- ‘অনেক অনেক দোয়া রইল, আল্লাহ তাআলা উনাকে বেহেস্ত নসিব করুন।’ মোহাম্মদ মুনতাসীর আল মামুন লেখেছেন -‘মহান আল্লাহ এই মহান মানুষকে পরপারে ভালো রাখুন।’ তারেক আজিজ নামে একজন লেখেন – এখনো মানুষ খুব ভালোবাসে উমাকে। রানীশংকৈলে নেতার মতো নেতা উনি একজনই ছিলেন। যদিও উনাকে দেখার সৌভাগ্য হয়নি আমার। ‘
এছাড়াও মরহুম এমপি আলী আকবরের ছবি সম্বলিত অসংখ্য স্টেটাস ভক্তদের ফেসবুকের ওয়ালে ছড়িয়ে আছে।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর রাণীশংকৈল (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধি সফিকুল ইসলাম শিল্পী। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.