ফেসবুকে নেতিবাচক মন্তব্যেসহ নানা কারণে হতাশা গ্রস্থ, নাটোরের ভাইরাল সহকারী অধ্যাপক নাহার আত্মহত্যা করেছেন, স্বামী আটক

নাটোর প্রতিনিধি: নাটোরে কলেজ ছাত্রকে বিয়ে করে সারা দেশে ভাইরাল হওয়া খুবজিপুর ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক খায়রুন নাহার আত্মহত্যা করেছেন। অসম বিয়ের কারণে ফেসবুকে নেতিবাচক মন্তব্যেসহ নানা কারণে হতাশা গ্রস্থ হয়ে পড়া এই শিক্ষিকা রোববার ভোরে নাটোর শহরের বলারীপাড়ার ভাড়া বাসায় আত্মহত্যা করেন।
তবে হত্যা না আত্মহত্যা বিষয়টি নিশ্চিত হতে বাসা থেকে আটক স্বামী কলেজ ছাত্র মামুনকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। প্রায় ৪৭ বছর বয়সী শিক্ষিকা খায়রুন নাহার তার ২২ বছর বয়সী স্বামী মামুনকে নিয়ে নাটোর শহরের বলারীপাড়ার হাজী নান্নু মোল্লা ম্যানশনের চারতলায় ভাড়া থাকতেন।
পুলিশ, ভবনের পাহাড়াদার নাজিম উদ্দিন ও নিহতের স্বজনেরা জানায়, নাটোরের বলারীপাড়ার হাজী নান্নু মোল্লা ম্যানশনের ফটক নিয়োমিত রাত ১০টায় বন্ধ করে দেয়া হয়।
শনিবার রাত ১১টার পর খায়রুন নাহারের স্বামী মামুন বাসায় আসেন। আবার রাত আনুমানিক আড়াইটার দিকে পাহাড়াদারকে দিয়ে গেট খুলে মোটর সাইকেল নিয়ে বেড়িয়ে যান। এ সময় বাসার পাহাড়াদার নাজিম উদ্দিন তাকে এতো রাতে বাহিরে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে অসুস্থ্যতার জন্য হাসপাতালে যাওয়ার কথা বলেন।
পরে রোববার সকাল ৬টার দিকে মামুন বাসায় ফিরে আসে। একটু পরেই সে বাসার পাহাড়াদারকে জানায় তার স্ত্রী খায়রুন নাহার সিলিং ফ্যানের সাথে গলায় ওড়না পেচিয়ে আত্মহত্যা করেছে। সাথে সাথে তিনি ঐ বাসায় গিয়ে দেখতে পান বাসার বসার ঘরের মেঝেতে অধ্যাপিকার লাশ পড়ে রয়েছে।
বিষয়টি তার সন্দেহ হওয়ায় তিনি মামুনসহ কক্ষের দরজা বাহির থেকে আটকে দিয়ে সাথে সাথে বাসার মালিক নান্নু হাজীকে বিষয়টি জানান। বাসা মালিক নাটোর থানায় ফোন করে পুলিশকে বিষয়টি জানান। সহকারী অধ্যাপক খায়রুন নাহার গুরুদাসপুর উপজেলার চাঁচকৈড় পৌর এলাকার মো.খয়ের উদ্দিনের মেয়ে। তার স্বামী মামুন হোসেন একই উপজেলার ধারাবারিষা ইউনিয়নের পাটপাড়া গ্রামের মোহাম্মদ আলীর ছেলে ও নাটোর নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা সরকারী কলেজের ডিগ্রি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র।
খায়রুন নাহার ছাত্রজীবনেই রাজশাহী জেলার বাঘা উপজেলার আড়ানী এলাকায় বিয়ে করেন। সেই স্বামীর সাথে তালাকের এক বছর পর ফেসবুকের মাধ্যমে মামুনের সাথে তার পরিচয় হয়। পরিচয়ের ছয় মাস পর গত বছরের ১২ ডিসেম্বর কাজী অফিসে গিয়ে দুজন গোপনে বিয়ে করেন। বিয়ের প্রায় ৬ মাস পর গত জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহে ঘটনাটি এলাকায় জানাজানি হলে বেশ আলোচনা সমালোচনা শুরু হয়।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সারাদেশের সচেতন মানুষ ছাত্রকে শিক্ষিকার বিয়ের পক্ষে ও বিপক্ষে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে হাজারো মন্তব্য করেন। তার ঘনিষ্ঠজনেরা জানিয়েছেন, বিয়ের পর নিজের কর্মস্থলের কোন সহকর্মী খায়রুন নাহারের সাথে কথা বলতো না। আত্বীয় স্বজনেরাও তাকে ত্যাগ করেছিল। এর মধ্যে অসম বয়সের বিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা কটুক্তি তাকে হতাশাগ্রস্ত করে তুলেছিল।
রোববার সকালে পুলিশ মামুনকে আটকের সময় উপস্থিত সাংবাদিকদের সামনে মামুন বলেন, খায়রুন নাহারের বিভিন্ন ব্যাংক ও এনিজও তে ১৬লাখ টাকার বেশি ঋন রয়েছে। এর মধ্যে তার ছেলে ৬লাখ টাকা দামের একটি মোটরসাইকেল কিনে দেয়ার জন্য চাপ দিচ্ছিল। এ সব বিষয়ে খায়রুন নাহার মানসিক ভাবে খুবই চাপে ছিল। তাই তিনি আত্মহত্যা করেছেন।
নিহত সহকারী অধ্যাপক খায়রুন নাহারের ভাতিজা নাহিদ হাসান বলেন, নতুন এই বিয়ের পর থেকেই মামুন তার ফুফুর কাছে পালসার মোটরসাইকেলসহ প্রায় পাঁচলাখ টাকা নিয়েছে। নতুন করে আবার আর ওয়ান-৫ মোটর সাইকেল কিনে দেয়ার জন্য বউকে চাপ দিচ্ছিল। তিনি বলেন, মামুন নেশা করতো। মামুনের চাপেই তার ফুফু আত্মহত্যা করেছে। নিহত সহকারী অধ্যাপক খায়রুন নাহারের চাচাতো ভাই সাবির উদ্দিন বলেন,অসম বয়সের বিয়ে হওয়ায় খায়রুন নাহারের কলেজের কোন সহকর্মী তার সাথে কথা বলতো না। বাবা মাসহ আত্বীয় স্বজনরা যোগাযোগ রাখতো না। বিয়ের বিষয়টি গণমাধ্যমে আসার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ব্যাপক সমালোচনা হওয়ায় খাযরুন নাহার মানসিক ভাবে বিপযদস্ত ছিলেন।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য মামুনের কোন স্বজনকে খুজে পাওয়া যায়নি। তার পিতা মোহাম্মদ আলীর মোবাইল ফোন বন্ধ। তার চাচা আহম্মদ আলী মেম্বারকে মোবাইল ফোনে পাওয়া যায়নি।
এদিকে ঘটনার পর নাটোরের পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা, পিবিআই পুলিশ সুপার শরিফ উদ্দিন ও সহকারী পুলিশ সুপার মহসিনসহ প্রশাসনের উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এ সময় পিবিআই পুলিশ সুপার শরিফ উদ্দিন বলেছেন, সব আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট ও তদন্ত অগ্রসর হলে এ বিষয়ে পরিস্কার কিছু বলা যাবে।
নাটোরের পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা বিটিসি নিউজকে বলেন, বিষয়টি আত্মহত্যার মতোই মনে হচ্ছে। সিলিং ফ্যানে ওড়না দিয়ে ঝুলন্ত অবস্থা থেকে যে ভাবে ওড়না আগুন দিয়ে পুড়িয়ে খায়রুন নাহারকে তার স্বামী নামিয়েছেন এটা বিশ্বাসযোগ্য। কাপড় এবং ফ্যানের কিছু অংশ পোড়া অবস্থায় দেখা গেছে। তারপরও মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত স্বামী মামুন বাহিরে থাকাসহ সব গুলো পয়েন্ট মাথায় রেখেই পুলিশ তদন্ত কাজ শুরু করেছে। মামুনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পেলে এবং পুলিশের প্রাথমিক তদন্ত শেষ হলে এ বিষয়ে বিস্তারিত বলা যাবে।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নাটোর প্রতিনিধি খান মামুন। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.