ফের উত্তাল মণিপুর, পুলিশসহ নিহত-৪

বিটিসি আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় মণিপুর রাজ্যে শান্তি ফিরছেই না। ফের নতুন সংঘর্ষে উত্তাল রাজ্যটি। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যের সীমান্তবর্তী বিষ্ণুপুর ও চুরাচাদপুর জেলায় পৃথক ঘটনায় চারজনকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। এদের মধ্যে একজন পুলিশ সদস্য ও এক কিশোর আছে।
পুলিশ সূত্র এনডিটিভিকে জানিয়েছে, গতকাল সন্ধ্যায় সন্দেহভাজন জঙ্গিদের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে একজন পুলিশ নিহত হয়। এছাড়া বাকি তিনজন আজ সকালে নিহত হয়েছেন। গত দুই মাস থেকে রাজ্যটির সীমান্তবর্তী এ দুই জেলায় ব্যাপক সংঘর্ষ-হানাহানির খবর পাওয়া যাচ্ছে।
সেনা সূত্র জানিয়েছে, বর্তমানে বিষ্ণুপুর জেলার কাংভাই এলাকা অত্যন্ত সংবেদনশীল জায়গা। দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী ওই এলাকায় বাফার জোন তৈরি করেছে এবং পরিস্থিতি সামলাতে নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার থেকেই দুই জাতিগোষ্ঠীই জড়ো হয়েছে। তবে নিরাপত্তা বাহিনীর পদক্ষেপের কারণে কোনো পক্ষই কারো বাড়িঘর পুড়িয়ে দিতে পারেননি।
তবে এরপরেও উভয় পক্ষের দুষ্কৃতীরা কাংভাই, সোংডো এবং আওয়াং লেখাই গ্রামের অবস্থান থেকে একে অপরের ওপর গুলি চালায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থলভাগে অভিযানে থাকা একজন সিনিয়র কর্মকর্তা বলেছেন, গোলাগুলির কারণে তিনজন নিহত হয়েছে এবং দুই পক্ষেরই বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে।
মণিপুর পুলিশ কন্ট্রোল রুম থেকে শুক্রবার এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় পরিস্থিতি বেশ উত্তপ্ত এবং কিছু জায়গায় বিক্ষিপ্ত গোলাগুলি হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় পাঁচটি অস্ত্র, ৭২ পিছ বিভিন্ন ধরনের গোলাবারুদ এবং পাঁচটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বিস্ফোরক হাতবোমা উদ্ধার করা হয়েছে।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মণিপুরের সংখ্যাগুরু সম্প্রদায় হিন্দু মেইতেই জনগোষ্ঠীর। এদের অনেকেই বৈষ্ণব। রাজ্যের জনসংখ্যার প্রায় ৬৫ শতাংশ তারাই। অন্যদিকে পাহাড়ি অঞ্চলে বাস করেন যেসব নাগা এবং কুকি উপজাতির মানুষ, তাদের একটা বড় অংশ খ্রিস্টান। এরকম ৩৩ টি উপজাতি গোষ্ঠীর বসবাস রাজ্যের ৯০ শতাংশ পাহাড়ি অঞ্চলে।
গত কয়েক বছর ধরেই মেইতেইরা দাবি জানিয়ে আসছিলেন যে তাদের তপশিলি উপজাতি (এসটি) হিসাবে শ্রেণীভুক্ত করার জন্য। ভারতে যে সব সম্প্রদায় ঐতিহাসিকভাবে সমান সুযোগসুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছে – তাদেরকে এসটি শ্রেণীভুক্ত করে তাদের জন্য সরকারি চাকরি, কলেজে ভর্তি ও নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির আসন সংরক্ষণ করা হয়।
এরপর মে মাসে মণিপুর হাই কোর্ট রাজ্য সরকারকে মেইতেই সম্প্রদায়ের দাবি বিবেচনার নির্দেশ দেয়। কিন্তু রাজ্যের অন্য উপজাতিগুলোর মধ্যে এতে উদ্বেগ সৃষ্টি হয় যে মেইতেইদেরকে এসটি মর্যাদা দেওয়া হলে তাদের চাকরির জন্য তীব্র প্রতিযোগিতার মুখে পড়তে হবে। এর পরেই সেখানে সংঘর্ষ শুরু হয়েছে। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.