ফেনীর সীমান্ত হাটে ভারতীয় ব্যবসায়ীদের ধর্মঘট 

ফেনী প্রতিনিধি: ফেনী জেলার ছাগলনাইয়া উপজেলার রাধানগর ইউনিয়নের মোকামিয়া গ্রামে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ সীমান্ত হাট ভারতীয় ব্যবসায়ীদের অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট। গতকাল মঙ্গলবার সীমান্তহাটের ভারতীয় ব্যবসায়ীরা সকল পন্য অনির্দিষ্ট পরিমানে বিক্রি সুবিধা দেয়াসহ বিভিন্ন দাবীতে দোকান বন্ধ রেখে ধর্মঘট কর্মসূচির ডাক দেয়।

গত মঙ্গলবার হাটের বাইরের গেইটে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে তারা। ফলে সীমান্ত হাটে ভারতের কোন ক্রেতা প্রবেশ করতে পারেনি। বাংলাদেশের ক্রেতা-বিক্রেতারা সীমান্ত হাটে গিয়ে হতাশ হয়ে ফেরত আসে। ভারতীয় ব্যবসায়ীরা হাটে বিক্রির জন্য র্নির্ধারিত পণ্যের বাইরেও বহু পণ্য  নিয়ে আসেন।

এসব বিষয়গুলো গত বেশ কিছুদিন থেকে বাংলাদেশী স্থানীয় প্রশাসন অবহিত হওয়ার পর সীমান্ত হাটের গেইটে কর্তব্যরতরাদের সতর্ক করা হলে তালিকা বহির্ভূত এবং অতিরিক্ত পন্য আনা বন্ধ হয়ে যায়। ফলে ভারতের পণ্য বিক্রি কমে যায়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা তাদের সকল পন্য অনির্দিষ্ট পরিমানে বিক্রি সুবিধা দেয়াসহ বিভিন্ন দাবীতে দোকান বন্ধ রেখে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট কর্মসূচি পালন শুরু করে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিজিবির মধুগ্রাম কোম্পানী কমান্ডার আবদুর রহমান বিটিসি নিউজকে বলেন, আমাদের দায়িত্ব হাটের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ধর্মঘট বিষয়ে সীমান্ত হাট ব্যবস্থাপনা কমিটি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

ব্যবসায়ী ও ক্রেতা সূত্রে জানা যায়, ছাগলনাইয়া- শ্রীনগর সীমান্ত হাট অনেকটা ভারতীয় পণ্যের দখলে । দুই দেশের পণ্য বেচাকেনার দিক থেকেও বহু গুন পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। রয়েছে বেশ কিছু অনিয়মের অভিযোগ। দু’দেশের সীমান্তবাসীদের মধ্যে সম্প্রীতি বাড়ানো ও বাণিজ্য প্রসারে বাংলাদেশের ছাগলনাইয়া ও ভারতের শ্রী নগর সীমান্তে ২০১৫ সালের ১৩ জানুয়ারি চালু হয় দেশের তৃতীয় সীমান্ত হাট। হাটের শুরুতে দু’দেশের আশপাশের ৫ কিলোমিটারে বসবাসরত গ্রামবাসীদের নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য বেচাকেনা মূল লক্ষ্য থাকলেও  মানা হচ্ছে না সেই নীতিমালা।

প্রতি  মঙ্গলবার বসা এ হাটে দুর-দূরান্ত থেকে ক্রেতারা গাড়ি হাঁকিয়ে হুমড়ি খেয়ে হাটে ঢুকে অবাধে ভারতীয় মাল কিনছেন। অপরদিকে ভারতীয় অংশে কড়াকড়ি থাকায় অনেকটা ক্রেতা শূন্য হাটের বাংলাদেশি পণ্যের অংশ। দু’দেশের বৈধ পণ্যের ভারসাম্যপূর্ণ ব্যবসা-বাণিজ্য এবং উভয় দেশের জনগণের মধ্যে ভাববিনিময় ও সম্প্রীতির সেতুবন্ধন রচনা ছিল এ হাটের উদ্দেশ্য। কিন্তু বাস্তবে হয়েছে তার উল্টো।

সরেজমিনে দেখা যায়, ভারতীয় পণ্য সেখানে বেশি নির্দিষ্ট পণ্য তালিকার বাইরের অনেক পণ্যসামগ্রীও বেচা-কেনা হচ্ছে। ফেনী, ছাগলনাইয়া ও বারইয়ারহাটসহ বিভিন্ন এলাকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে এ বাজার থেকে পণ্য আমদানি করে। দাম কম হওয়ায় বাংলাদেশিরা অনেকটা হুমড়ি খেয়ে  ভারতীয় পণ্য ক্রয় করছেন ।

বাজারের ব্যবসায়ীরা বিটিসি নিউজকে জানান, এ বাজারে ভারত-বাংলাদেশিদের জন্য আলাদা আলাদা শেডে ৩০টি করে মোট ৬০টি দোকান রয়েছে। ভারতীয় প্রতিটি দোকানে গড়ে সপ্তাহে প্রতি হাটবারের দিন প্রায় ৪ থেকে ৫ লাখ টাকার মতো বেচা-বিক্রি হয়, আর বাংলাদেশিদের দোকানে সর্বোচ্চ ১০ থেকে ১৫হাজার হাজার টাকার মতো বেচা-কেনা হয়।

বাংলাদেশি শেডের ব্যবসায়ীরা বিটিসি নিউজকে জানান, এ বাজারের শতকরা ৯০ শতাংশ ক্রেতাই বাংলাদেশি। আর ১০ শতাংশ ভারতীয়। এখানকার স্থানীয় অধিবাসীরা অভিযোগ করে জানান, এ সীমান্ত হাট দিয়ে বৈধ পথে অবৈধ মালামালের কারবার হয়। সীমান্ত হাটে যাওয়ার জন্য টিকিট (প্রবেশ কার্ড) সংগ্রহে কিছুটা সরকারী বাধ্যবাধকতা থাকায় এখানকার এক শ্রেনীর কালোবাজারি ও দালাল ২০ টাকার প্রবেশ কার্ড ক্ষেত্র বিশেষে বাংলাদেশি লোকদের থেকে ১শ থেকে ২শ টাকায় পর্যন্ত কিনছে। অনেকেই সিন্ডিকেটর মাধ্যমে বেশি সংখ্যক প্রবেশ কার্ড সংগ্রহ করে বাড়তি আয় শুরু করেছে।

 সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর ফেনী প্রতিনিধি মোঃদেলোয়ার হোসেন।#

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.