ফিলিপাইনে থাকছে মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র, বাড়ছে ওয়াশিংটন-বেইজিং উত্তেজনা

বিটিসি আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ফিলিপাইনে মোতায়েনকৃত মাঝারি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা সরিয়ে নেওয়ার আশু কোনও পরিকল্পনা নেই বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। চীনের বিরোধিতার পরও মার্কিন প্রশাসন এই অবস্থানে অটল রয়েছে। আঞ্চলিক সংঘাতে এগুলোর ব্যবহারের উপযোগিতা পরীক্ষা করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাতে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
চলতি বছর যৌথ মহড়ার সময় ফিলিপাইনে আনা হয় টাইফুন ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা। এগুলোকে চীনের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে সজ্জিত করা যেতে পারে। মহড়া শেষ হলেও ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা সেখানে মোতায়েন রয়েছে। তাইওয়ানের প্রতিবেশী দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দ্বীপপুঞ্জটি যুক্তরাষ্ট্রের এশীয় কৌশলের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি চীনের সম্ভাব্য আক্রমণের ঘটনায় তাইপেইকে সহযোগিতায় একটি গুরুত্বপূর্ণ সামরিক স্থান হিসেবে কাজ করবে।
চীন ও রাশিয়া ইন্দো-প্রশান্ত অঞ্চলে এই প্রথমবারের মতো ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা মোতায়েনের নিন্দা করেছে। দেশ দুটি যুক্তরাষ্ট্রকে অস্ত্র প্রতিযোগিতায় ইন্ধন দেওয়ার জন্য অভিযুক্ত করেছে। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বৃহস্পতিবার বলেছে, ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থাটি ফিলিপাইনে রাখার পরিকল্পনায় তারা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লিন জিয়ান বলেন, এটি আঞ্চলিক দেশগুলোর নিরাপত্তাকে গুরুতর হুমকির মুখে ফেলছে এবং ভূ-রাজনৈতিক সংঘাতকে তীব্রতর করছে।
এই মোতায়েনের কিছু বিস্তারিত তথ্য এর আগে জানা যায়নি। ফিলিপাইন ও মার্কিন বাহিনী দক্ষিণ চীন সাগর ও তাইওয়ান প্রণালির নিকটবর্তী উত্তর লুজোন দ্বীপে ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা নিয়ে যৌথভাবে প্রশিক্ষণ চালিয়ে যাচ্ছে। ফিলিপাইনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যৌথ মহড়া চলতি মাসে শেষ হলেও এগুলো ফিরিয়ে নেওয়ার কোনও আশু পরিকল্পনার কথা তাদের জানা নেই।
ফিলিপাইন সেনাবাহিনীর মুখপাত্র কর্নেল লুই ডেমা-আলা বুধবার রয়টার্সকে বলেছেন, প্রশিক্ষণ চলছে এবং ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা কতদিন থাকবে তা নির্ধারণ করবে মার্কিন সেনাবাহিনীর প্যাসিফিক কমান্ড। ইউএস আর্মি প্যাসিফিকের এক জনসংযোগ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ফিলিপাইন সেনাবাহিনী জানিয়েছে সেপ্টেম্বরের পরেও টাইফুন থাকতে পারে। গত সপ্তাহে সর্বশেষ এগুলো ব্যবহার করা হয়েছে। তারা ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থার কার্যকারিতা নিয়ে আলোচনা করেছে এবং এটিকে কীভাবে স্থানীয় ব্যবস্থার সঙ্গে সংযুক্ত করা যায় তা নিয়ে পর্যালোচনা হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ফিলিপাইনের এক সিনিয়র সরকারি কর্মকর্তা এবং এই বিষয়ে জ্ঞাত আরেক ব্যক্তি জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ফিলিপাইন সংঘাতময় পরিস্থিতিতে ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থার ব্যবহারযোগ্যতা পরীক্ষা করছে এবং এটি সেই পরিবেশে কতটা কার্যকর তা পর্যালোচনা করছে।
সরকারি কর্মকর্তা বলেন, টাইফুন এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যে এটি প্রয়োজনে সরানো যেতে পারে। এটি ফিলিপাইনে একটি পরীক্ষামূলক অবস্থানে আছে, যাতে প্রয়োজনের সময় এটি সহজেই মোতায়েন করা যায়।
ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট ফের্ডিনান্ড মার্কোস জুনিয়রের কার্যালয় এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেনি।
‘চীনের নিদ্রাহীন রাত’
টাইফুন ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা এসএম-৬ এবং টমাহক ক্ষেপণাস্ত্রের মতো অস্ত্র উৎক্ষেপণ করতে পারে। এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্র প্রথমবার এই অস্ত্র ফিলিপাইনে নিয়ে আসে। এই ব্যবস্থা ১ হাজার ৬০০ কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করতে সক্ষম। ফিলিপাইনের ইলোকোস নর্তে প্রদেশের লাওয়াগ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গত বুধবার তোলা একটি স্যাটেলাইট চিত্রে টাইফুন ব্যবস্থাকে মোতায়েন অবস্থায় দেখা গেছে।
সিনিয়র সরকারি কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, টাইফুন ব্যবস্থা সরানোর আশু কোনও পরিকল্পনা নেই। তবে লক্ষ্য অর্জনের পর এগুলো সরানো হলেও মেরামত বা নির্মাণকাজ শেষ হলে পুনরায় মোতায়েন করা হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, ফিলিপাইনের জন্য এই ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা মোতায়েন রাখার কৌশলগত মূল্য রয়েছে। এগুলো চীনের জন্য একটি বাধা হিসেবে কাজ করবে। আমরা চীনের নিদ্রাহীন রাত নিশ্চিত করতে চাই।
জাহাজ বিধ্বংসী অস্ত্র
এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র জাহাজ বিধ্বংসী বিভিন্ন অস্ত্র সংগ্রহ করছে। কারণ যুক্তরাষ্ট্র ইন্দো-প্রশান্ত অঞ্চলে চীনের তুলনায় ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিযোগিতায় অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে কতগুলো ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করবে তা জানায়নি। তবে মার্কিন সামরিক ক্রয় সংক্রান্ত নথি অনুসারে, আগামী পাঁচ বছরে ৮০০টিরও বেশি এসএম-৬ ক্ষেপণাস্ত্র কেনা হবে। ইতোমধ্যে কয়েক হাজার টমাহক মার্কিন অস্ত্রাগারে রয়েছে।
চীন একাধিকবার টাইফুন মোতায়েনের নিন্দা করেছে। মে মাসে চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র উ কিয়ান বলেছিলেন, ম্যানিলা ও ওয়াশিংটন এই অঞ্চলে যুদ্ধের বড় ঝুঁকি নিয়ে এসেছে।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন জুন মাসে ঘোষণা দিয়েছিলেন, তার দেশ মাঝারি ও স্বল্প পাল্লার পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন আবারও শুরু করবে। পুতিন ফিলিপাইনে টাইফুন মোতায়েনের প্রসঙ্গ টেনে বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপ তার সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলেছে।
ফিলিপাইনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এনরিক মানালো জুলাই মাসে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে আশ্বস্ত করে বলেছিলেন যে, ফিলিপাইনে থাকা এই ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা চীনের জন্য কোনও হুমকি নয় এবং এটি এই অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করবে না।
যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, চীন দক্ষিণ চীন সাগরের স্প্র্যাটলি দ্বীপপুঞ্জে নির্মিত তিনটি দ্বীপ সম্পূর্ণরূপে সামরিকীকরণ করেছে এবং সেখানে জাহাজ বিধ্বংসী ও আকাশ প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করেছে। ২০১৬ সালের এক আন্তর্জাতিক রায়ে স্প্র্যাটলি দ্বীপপুঞ্জের বেশিরভাগ অংশে ফিলিপাইনের দাবি সমর্থন করা হয়েছিল। তবে চীন পুরো অঞ্চলটিকেই তার নিজের বলে দাবি করে আসছে।
চীন বলেছে, স্প্র্যাটলি দ্বীপপুঞ্জে তাদের সামরিক কাঠামো শুধু প্রতিরক্ষামূলক। নিজের ভূখণ্ডে যা ইচ্ছা করার অধিকার তাদের রয়েছে। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.