ফিরে দেখা হাবিপ্রবির ২০১৯

হাবিপ্রবি (দিনাজপুর) প্রতিনিধি: ২০১৯ এর শুরুতে শিক্ষকদের একাংশের আন্দোলনের মুখে পড়ে দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ( হাবিপ্রবি )। যার খেসারতস্বরূপ ২০১৮ সালের ভর্তি পরীক্ষার সময়সূচী দুইবার নির্ধারণ করার পরও পরীক্ষা নিতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। অবশেষে ভর্তিচ্ছুক শিক্ষার্থীদের সকল প্রতিক্ষার অবসান ঘটিয়ে গত বছরের শুরুতে অনুষ্ঠিত হয় বহুল প্রত্যাশিত ভর্তি পরীক্ষা।
শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ২০১৮ সালের শুরুর দিকে প্রকাশিত হলেও অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে তা আলোর মুখ দেখ গতবছরের জুলাই মাসে। উক্ত নিয়োগে ৩২ জন শিক্ষক, ২১ জন কর্মকর্তাসহ ২২ জন কর্মচারী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে যোগদান করেন।
এদিকে ২০১৮ সালের মে মাসে বর্তমান উপাচার্য ” বিশ্ববিদ্যালয় প্রধান গেটের ” ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করলেও কাজের ধীরগতির কারণে কয়েকদফা সময় বাড়িয়ে দৃষ্টিনন্দন প্রবেশ পথ জনসাধারণের জন্য খুলে দেয়ে হয় গত বছরের ১লা ডিসেম্বর। গেটটি নির্মানে ব্যায় হয় প্রায় ৮৫ লাখ টাকা।
পরিবহন পুলে যুক্ত হয়েছে বেশ কয়েকটি নতুন যানবাহন (বাস, মাইক্রোবাস)। শিক্ষার্থীদের পরিবহন সংকট নিরসনের লক্ষ্যে এবছর কমপক্ষে ২ টি বাস হাবিপ্রবির পরিবহন শাখায় যুক্ত হবে বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন শাখার পরিচালক অধ্যাপক ড. মোঃ মফিজউল ইসলাম। তবে ভেটেনারি মোবাইল ক্লিনিক গতবছর বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার কথা থাকলেও নানা কারণে তা সংযুক্ত হতে পারেনি।
শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষ ও ল্যাব সংকট নিরসনের লক্ষ্যে দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে দশ তলা বিশিষ্ট একাডেমিক ভবনের নির্মাণ কাজ,ছাত্রীদের অাবাসন সংকট নিরসনের লক্ষ্যে ৭২০ আসন বিশিষ্ট ছাত্রী হল নির্মাণ কাজের অগ্রগতি চোখে পরার মতো পাশাপাশি মেডিকেল সেন্টারের সম্প্রসারণের কাজ এগিয়ে চলছে দ্রুত গতিতে।এছাড়া মেডিকেল সেন্টারে সংযুক্ত হতে চলেছে শিক্ষার্থীদের জন্য ফ্রি ঔষুধ, হাচ্যারি, পোল্ট্রি ফার্ম, কাউ শেড, শিক্ষক- কর্মকর্তাদের কোয়ার্টারসহ আরো গুরুত্বপূর্ণ কিছু অবকাঠামোগত উন্নয়নের কাজ চলমান।
সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের অন্যতম প্রাণের দাবি ছিল সমাবর্তন। সেটিও বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে বর্তমান বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। রাষ্ট্রপতি সম্মতি পেলেই আগামী বছরের নভেম্বর/ডিসেম্বরের দিকে সমাবর্তন অনুষ্ঠান আয়োজন করার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। শিক্ষক সংকট নিরসনের লক্ষ্যে গতবছরের শেষ দিকে প্রকাশিত হয় নতুন শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞাপ্তি।
আবার, শিক্ষক লাঞ্চনা, মাদকের সাথে সংশ্লিষ্টতা এবং অসামাজিক কার্যকলাপের কারনে বহিস্কৃতও হয়েছেন বিদেশীসহ ১০ জন শিক্ষার্থী। তবে বিগত বছরের তুলনায় গবেষণা ক্ষেত্র অনেকটা প্রসারিত হয়েছে। ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজি বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর ড. মোঃ সাজ্জাদ হোসেন সরকার ও তাঁর নেতৃত্বে একদল গবেষকদল আবিষ্কার করেন “টু স্টেজ গ্রাইন ড্রায়ার” যন্ত্রের। যার মাধ্যমে বর্ষা মৌসুমে ধান, গম, ভুট্টা কম খরচে শুকানো যাচ্ছে।
অন্যদিকে সবকিছুকে ছাপিয়ে পানিতে ডুবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ শিক্ষার্থীর অকাল মৃত্যু ঘটে , রহস্যজনক ভাবে ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় মেলে শিশির নামে ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের এক শিক্ষার্থীর লাশ, সড়ক দুর্ঘটনায় কর্মকর্তার মৃত্যু যেন সকল কিছু ম্লান করে দিয়েছে। এছাড়া নিউমোনিয়ার কাছে হার মেনে সামাজবিজ্ঞান বিভাগের দুখু মিয়া মৃত্যুর কোলে ঢেলে পরেন।
উপাচার্য প্রফেসর ড. মু.আবুল কাসেম বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন,” আমি শুরু থেকেই চেয়েছি এই বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি আন্তর্জাতিক মানের বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিনত করতে। কিন্তু ক্যাম্পাসে আসার পর থেকে আমাকে বিভিন্ন সময়ে নানারকম বাঁধার সম্মুখীন হতে হয়েছে। অনেকেই মিথ্যাচার করে আমাকে হেয়প্রতিপন্ন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা চালিয়েছে। তারপরও আমি আমার সাধ্যমত শিক্ষার্থীদের জন্য কাজ করে যাওয়ার চেষ্টা করেছি, আগামীতেও কাজ করে যাবো ইনশাআল্লাহ। আমি বিশ্বাস করি সৎ ও সত্যের পথে থাকলে,কেউ কখনো কারো ক্ষতি করতে পারবে না। বর্তমানে যে উন্নয়নের ধারা চলমান রয়েছে আগামীতেও যেন এই উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকে সে জন্য সকলের সহযোগিতা কামনা করছি। সবাইকে ইংরেজি নববর্ষের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি “।
প্রাপ্তির খাতাতেও রয়েছে কিছু অর্জন। এর অংশ হিসাবে গত বছরের শুরুতে আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় ফাইনালে গিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে হেরে প্রথমবার রানারআপ হয় এইচএসটিইউ ক্রিকেট ক্লাব। পক্ষান্তরে ডিবেটিং সোসাইটি অব এইচএসটিইউ নিজেস্ব আয়োজনে দিনব্যাপী বিতর্ক উৎসব আয়োজন করে। যেখানে প্রায় সাত শতাধিক বিতার্কিক অংশগ্রহণ করে।
পক্ষান্তরে ব্যক্তিগত অর্জনেও পিছিয়ে ছিলনা হাবিপ্রবির শিক্ষার্থীরা। বুয়েট, কুয়েটকে টেক্কা দিয়ে সেরা অ্যাম্বাসেডর হওয়ার খ্যাতি অর্জন করেন উষ্ণ দাস। বছরের শেষদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গনিত বিভাগ কর্তৃক আয়োজিত গণিত অলিম্পিয়াডে ষষ্ঠ হন হাবিপ্রবির সুজন। এছাড়া তেঁতুলিয়া থেকে টেকনাফ পর্যন্ত পায়ে হেটে সচেতনতা বাড়িয়ে সকলের নজরে আসেন সাইফুল ইসলাম শান্তি।
উল্লেখ্য যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সার্বিক নিরাপত্তার স্বার্থে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার আওতায় ক্রমাগত আসছে হাবিপ্রবি। ইতিমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশপথ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল, শেখ রাসেল হল, প্রশাসনিক ভবন, ড. এম.এ ওয়াজেদ ভবনসহ বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থান এসেছে সিসি ক্যামেরার আওতায় ।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর হাবিপ্রবি (দিনাজপুর) প্রতিনিধি মোঃ মিরাজুল আল মিশকাত। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.