ফরিদপুরে আ.লীগ নেতার বালু উত্তোলনে এক রাতে পদ্মায় বিলীন ৯ বাড়ি

ফরিদপুর প্রতিনিধি: ফরিদপুরে এক রাতে ৯টি বাড়ি পদ্মা নদীতে ভেঙে পড়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ২টা থেকে শুক্রবার সকাল ৬টার মধ্যে ফরিদপুর সদরের ডিক্রিরচর ইউনিয়নের ধলার মোড় সংলগ্ন পালডাঙ্গী এলাকায় বাড়িগুলো নদীতে বিলীন হয়ে যায়।
এলাকাবাসী জানায়, এক আওয়ামী লীগ নেতা নদী থেকে গভীর গর্ত করে অবৈধভাবে বালু কাটায় ভেঙে গেছে তাদের ঘরবাড়ি। এক রাতের মধ্যেই শহর রক্ষা বাঁধ সংলগ্ন ৯টি বসতবাড়ি ধসে পড়ায় ঝুঁকিতে পড়েছে শহররক্ষা বাঁধ।
যাদের ঘরবাড়ি ভেঙেছে তারা হলেন- আফজাল শেখ, মজলু শিকদার, মো. হাসান মাস্টার, বাদশা শেখ, সাহেব শেখ, দেলোয়ার শেখ, সাদ্দাম শেখ, সালাম শেখ ও জাহানারা বেগম। বাড়িঘর ছাড়াও বাঁশবাগান ও বেশকিছু গাছপালাও পানিতে ধসে পড়েছে।
ঘরবাড়ি হারিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন ভুক্তভোগীরা। অনেকের টয়লেট ও রান্নাঘর ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে। এতে প্রসাব-পায়খানা ও রান্নাবান্না নিয়েও ভোগান্তিতে পড়েছেন তারা। সারাদিন নাওয়া-খাওয়া বাদ দিয়ে ঘরের মালামাল সরিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। 
ক্ষতিগ্রস্তরা অভিযোগ করে বলেন, পদ্মা নদীতে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অবৈধভাবে বালু তোলায় ধলারমোড়ের কাছে পালডাঙ্গীতে পদ্মার তীরে তীব্র ভাঙন শুরু হয়েছে।
সদর উপজেলার ডিক্রিরচর ইউনিয়নের পালডাঙ্গীতে শহররক্ষা বাঁধের কাছে পদ্মা নদীতে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করেন মো. আজম মিয়া (৪৫) নামে এক বালু ব্যবসায়ী। তিনি আওয়ামী লীগ নেতা। ফরিদপুর পৌরসভার ২৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি। তিনি তিন মাস আগে ওই এলাকায় গভীর গর্ত করে বালু কাটেন। ওই সময় পানি উন্নয়ন বোর্ড অভিযান চালিয়ে এ উদ্যোগ বন্ধ করে দিয়েছিল। এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ড একটি মামলাও করে।
ভাঙনে ঘরবাড়ি হারানো মজলু শিকদার বলেন, ৮৮ সালের বন্যার সময় পদ্মা নদীতে ঘরবাড়ি হারানোর পরে আমরা এই বেড়িবাঁধের পাশে সরকারি জমিতে এসে আশ্রয় নেই। এরপর স্থানীয় প্রশাসনের অনুমতি নিয়েই আমরা এখানে ঘরবাড়ি তুলে বসবাস করছি। কিন্তু স্থানীয় আজম নামে এক ব্যক্তি এখানে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অবৈধভাবে বালু তুলে বিক্রি করছেন। বালু তোলার কারণে আমাদের বাড়িঘর নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, এই জায়গায় পঞ্চাশ ফুট গভীর করে বালু তুলে নিয়েছে। এ কারণে এভাবে ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে। এখন এই বেড়িবাঁধও ভাঙার উপক্রম।
আফজাল শেখ বলেন, রাতের বেলায় আমাদের ঘর-দুয়ার সব ভাইঙ্গ্যা নিয়ে গেছে। পায়খানা-পেসাব করবো সেই কায়দাও নাই। টিউবওয়েল নাই, পায়খানা নাই, রান্নার জায়গাও নাই। সব ভাইঙ্গ্যা নিয়ে গেছে।
ডিক্রিরচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেহেদি হাসান ফকির বলেন, অনেকদিন  ধরে তারা মানুষের ক্ষতি করছে। যখন আমরা অভিযোগ দেই, তারপর দুই তিন দিন হয়তো বন্ধ থাকে। তারপর আবার শুরু হয়। তবে এবার তারা যা করছে তাতে বেড়িবাঁধ ধরে গেছে। আর মাত্র চার-পাঁচ ফুট ভাঙলেই শহররক্ষা বাঁধে ভাঙন ধরে যাবে।
ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী পার্থ প্রতিম সাহা বিটিসি নিউজকে জানান, খবর পেয়ে বিকেল ৪টার দিকে তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। ভাঙন প্রতিরোধে জরুরি ভিত্তিতে জিওব্যাগ ফেলা হবে।
ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান তালুকদার বিটিসি নিউজকে বলেন, যে বালু কেটে এ সর্বনাশ করেছে তার বিরুদ্ধে মামলা হবে। তাকে আইনের আওতায় আনা হবে। পাশাপাশি ভাঙন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। অবৈধ কাজ যখন চলে আমরা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিই।
অভিযোগ সম্পর্কে ফরিদপুর পৌরসভার ২৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আজম মিয়া বলেন, আমি একজন বালু ব্যবসায়ী। যে জায়গা ভেঙে গেছে সে জায়গার মালিক আমি। বিআইডব্লিউটিএর কাছ থেকে বালু কিনে ওই জায়গায় রেখেছিলাম। যারা ওই জায়গায় বসবাস করতেন তারা ১৯৮৮ সালে নদী ভাঙনের শিকার হয়ে এসেছিলেন। আমি মানবিক কারণে আমার জায়গায় তাদের থাকতে দিয়েছি। বালু বলেই এত দ্রুত ভেঙে গেছে। এখানে আমার কী দোষ তা বুঝতে পারছি না।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর ফরিদপুর প্রতিনিধি মো. নাসির উদ্দিন নাসির। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.