“প্লিজ ডোন্ট ফায়ার”- শহীদ ড.শামসুজ্জোহা

রাবি প্রতিনিধি: “কোনো ছাত্রের গায়ে একটিও গুলি লাগার আগে সে গুলি আমার বুকে লাগবে” কথাটি পড়ার সাথে সাথে চোখের সামনে ভেসে ওঠে একটি মুখচ্ছবি, শহীদ ড.শামসুজ্জোহা !!

শহীদ ড. শামসুজ্জোহা ১৯৩৪ সালে পশ্চিম বঙ্গে বাঁকুড়ায় জন্ম গ্রহণ করেন। বাঁকুড়া জেলা স্কুলে তিনি লেখাপড়া শুরু করেন এবং ১৯৪৮ সালে এই স্কুল হতে প্রথম বিভাগে চারটি লেটারসহ ম্যাট্রিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। পরে বাঁকুড়া ক্রিশ্চিয়ান কলেজ থেকে প্রথম শ্রেণীতে ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন সম্মান শ্রেণীতে ভর্তি হন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র থাকার সময় তিনি ৫২’র ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ গ্রহণ করেন। ১৯৬১ সালে ২৩ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগে প্রভাষক পদে যোগদান করেন। ১৯৬৫-১৯৬৭ সাল পর্যন্ত তিনি শাহমখদুম হলের আবাসিক শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৮ সালের ১৫ এপ্রিল তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ড. জোহা বিভিন্ন গবেষণা কর্মের সঙ্গেও জড়িত ছিলেন। দেশি-বিদেশি বিভিন্ন জার্নালে তার বেশ কয়েকটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়।
ড.শামসুজ্জোহা শিক্ষার্থীদের জীবন বাঁচাতে আত্মাহুতি দিয়েছিলেন নিজেকে।

আর সেই দিনটি ১৮ফেব্রুয়ারি। বাংলার ইতিহাসে একটি বেদনার দিন। তার আত্মত্যাগের পথ ধরেই জাগ্রত হয়েছিলো বাঙালি জাতির চেতনা। আর অর্জিত হয়েছিলো কাঙ্খিত স্বাধীনতা। ১৯৬৯,২০ শে জানুয়ারি আসাদ হত্যাকান্ডকে ঘিরে গণঅভ্যুত্থান এর সূচনা। তারপর ২৪ শে জানুয়ারি কিশোর মতিউরসহ অন্য তিনজনের হত্যাকান্ড অভ্যুত্থানের মাত্রাকে বাড়িয়ে দেয়। ১৫ ফেব্রুয়ারি সার্জেন্ট জহরুল হক হত্যাকান্ড বাঙালির ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে দেয়। দাবানলের মত ছড়িয়ে পড়ে এই খবর, বিক্ষুব্ধ সারা দেশের মানুষ।

গণ-অভ্যুত্থানের এই আন্দোলনে থেমে থাকেনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও। গড়ে তুলেছিলো আন্দোলন। ছাত্রদের আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণায় পাকবাহিনী জারি করলো ১৪৪ ধারা।

১৮ ফেব্রুয়ারি সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকে এসে উপস্থিত হয় বিভিন্ন হল থেকে আসা হাজার দুয়েক শিক্ষার্থী। উদ্দেশ্য মিছিল নিয়ে শহরের দিকে অগ্রসর হওয়া। বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় পুলিশ ও ইপিআর। মিছিল ঠেকাতে রাইফেল তাক করে প্রস্তুত তারা। এদিকে ছাত্ররাও প্রতিজ্ঞাবদ্ধ মিছিল তারা করবেই। ইতোমধ্যে তারা তর্কে জড়িয়ে পড়ে কর্তব্যরত সেনা অফিসারের সাথে। খবর পেয়ে ছুটে আসেন ড. জোহা। তিনি সেনা কর্মকর্তাকে বার বার বলছিলেন,‘প্লিজ ডোন্ট ফায়ার,আমার ছাত্ররা এখনিই চলে যাবে ক্যাম্পাসের দিকে।’

কিন্তু অবাঙালি অফিসারটি (পাকবাহিনীর ক্যাপ্টেন হাদী) প্রথম থেকেই উত্তেজিত ছিলো। তিনি বারবার জোয়ানদের গুলি করার জন্য তৈরি হতে বলছিলেন। ড.জোহা তাঁর সহকর্মীদের নিয়ে অনেক কষ্টে ছাত্রদের বুঝিয়ে গেটের ভেতরে পাঠাতে সক্ষম হয়েছিলেন। এবং অধিকাংশ ছাত্ররই তখন গেটের ভেতরে চলে এসেছে। পরিস্থিতি যখন শান্ত হওয়ার পথে তখনই হঠাৎ করে গুলির শব্দ। মুহূর্তের মধ্যেই আতঙ্ক ও উৎকণ্ঠা ছড়িয়ে পড়ে ছাত্র ও শিক্ষকদের মাঝে। প্রথম দিকে ছাত্ররা বুঝতে পারছিলো না কী ঘটেছে ড. জোহা ও তার সহকর্মীদের ভাগ্যে।

আজ দুপুর ১২ টার দিকে ক্যাম্পাসে খবর আসে ড. জোহাকে প্রথমে কাছ থেকে গুলি ও পরে বেয়নেট চার্জ করে গুরুতর আহত করা হয়। তিনি মরণাপন্ন অবস্থায় রাজশাহী পেীরসভার একটি পুলিশভ্যানে প্রায় দেড়ঘন্টা ধরে পড়ে ছিলেন। পরে ডিসি সাহেবসহ কিছু সিভিল অফিসার সেখানে এলে তাদের নির্দেশে তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। এরই মধ্যে এই খবর ছড়িয়ে পড়ে রাজশাহীতে। খবর পেয়ে ছাত্র-জনতা ভিড় জমায় হাসপাতালে। তবে অনেক দেরির কারণে প্রচুর রক্তক্ষরণ হওয়ায় অপারেশন থিয়েটারে অনেক চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন ড. দত্ত। দুপুর ১টা ৪০ মিনিটে ড. জোহা মৃত্যুবরণ করেন।

ইতিহাসের পাতায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে প্রথম শহীদ বুদ্ধিজীবী হিসেবে নিজের নামটি লেখান। তাঁর মৃত্যুর সংবাদ দাবানলের মত ছড়িয়ে পড়ে চারিদিকে। এরপর দেশের মানুষ কারফিউ ভঙ্গ করে রাস্তায় নেমে আসে একাত্ব হয়ে যায় সকল মানুষ সরকার বাধ্য হয়ে কারাগার থেকে মুক্তি দেয় শেখ মুজিবকে। অন্যদিকে পরিস্থিতির ভয়াবহতা দেখে পদত্যাগ করেন আইয়ুব খান। তাঁর আত্মত্যাগের পথ ধরে গণআন্দোলন পরিণত হয় গণঅভ্যুত্থানে ।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর রাবি প্রতিনিধি মো: মুজাহিদ হোসেন।#

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.