প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের অভাব: বাগমারায় ইউরিয়া সার সংকটে রোপা-আমন চাষ ব্যাহত হওয়ার আশংকা

ফাইল ছবি
বাগমারা প্রতিনিধি: রাজশাহীর বাগমারায় মওসুমের রোপা-আমন ধানচাষে ইউরিয়া সার সংকট দেখা দিয়েছে। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না থাকায় রোপা- আমন চাষ মওসুমে ন্যায্য মূল্যে সার না পেয়ে মহাসংকটে পড়েছে বাগমারার চাষীরা।
এক শ্রেণীর অসাধু সারের ডিলার বাজারের সার সংকটের ধুয়া তুলে সার বাইরে থেকে বেশি দাম আমদানী করা হয়েছে বলে প্রচার করে কৃষকদের কাছে থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায় করছেন। এতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ ও দেখার কেউ না থাকায় সার বিক্রেতারা আরো বেপয়ারা হয়ে উঠেছে।
এই পরিস্থিতিতে ন্যায্য মূল্যে সার না পাওয়ায় কৃষকরা বেশী দামেই কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। এতে ডিলারসহ কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা লাভবান হলেও কৃষকরা আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। এমন অবস্থায় এলাকায় রোপা-আমন ব্যাহত ও উৎপাদন কম হবার আশংকা দেখা দিয়েছে।
স্থানীয় কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, দীর্ঘ দিন খরার পর গত ৫/৬ ধরে এলাকায় বৃষ্টি নেমেছে। বৃষ্টি নামার পর পর আগাম জাতের রোপা-আমন ধানে ইউরিয়া প্রয়োগের প্রয়োজনয়ীতা দেখা দিয়েছে। কিন্তু মওসুমের ইরিয়া সার বরাদ্দ কম পাওয়ায় সারের ব্যাপক ঘাটতি দেখা দিয়েছে। বরেন্দ্র এলাকার প্রধান ফসল রোপা-আমন ধান।
এলাকার কৃষকরা বৃষ্টি নির্ভর এই মওসুমে রোপা-আমান ব্যাপক হারে চাষে। তবে এবারে বর্ষা মওসুমেও তেমন বৃষ্টি নেই। ফলে অতিরিক্ত খরচ করে রোপা-আমন ধান রোপন করে কৃষকরা। অনেকে আবার জমি ফেলে রেখে বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে রয়েছেন। অবশেষে গত কযেক দিন ধরে ধানচাষের মত বৃষ্টি নামছে। বৃষ্টির পর পর এলাকার কৃষকদের মধ্যে কিছুটা স্বস্তি নেমে আসলেও প্রয়োজনীয় ইউরিয়া সার সংকটে বিপাকে পড়েছেন দানচাষিরা।
কৃষকদের অভিযোগ সার ব্যাপারে যথাযথ তদারকির অভাবে কিছু সার ডিলাররা কৃত্রিম সার সংকট তৈরি করেছেন। উপযুক্ত সময়ে চাষিরা তাদের চাহিদা মত সার জোগাড় করতে ডিলারদের দোকানে দোকানে ধর্না দিয়েও সরকার নির্ধারিত মূল্যে সার না পেয়ে হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরছেন।
এই অবস্থায় বাগমারায় এবার রোপা-আমন চাষের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ার আশংকা দেখা দিযেছে। এলাকার সারের ডিলারদের কাছে গেলে সার নেই বলে দাবি করা হচ্ছে। পরে ওই সার স্থানীয় ভাবে দোকানীদের কাছে বেশী দামে মিলছে।
সরকারী রেট হিসেবে এক বস্তা (৫০ কেজি) সারের মূল্য ৮০০/- টাকা হলেও গোপনে ওই সারই ১ হাজার থেকে ১২শত টাকায় মিলছে। ভবানীগঞ্জ বাজারে সার ক্রেতা বাসুপাড়া ইউনিয়নের বালানগর গ্রামের আব্দুল মান্নান, আমীনুল ইসলাম সহ কয়েকজন কৃষক জানান, ইউনিয়ন ভিত্তিক সার ডিলারদের কাছে ক্রয় করতে গেলে ডিলাররা সার নেই বলে জানাচ্ছেন। তবে বাজার গুলোর ছোট ছোট দোকানে স্বল্প পরিমান ইউরিয়া সার দেখা মিলছে।
দোকানীদের ভাষ্য মতে তারা অন্য উপজেলা হতে বেশী দামে সার ক্রয় করে এনে বিক্রি করছে। এতে করে তাদের সামান্য লাভ হচ্ছে। তাতে কিছুটা হলেও কৃষকদের উপকারে আসছে।
উপজেলার কয়েকটি বাজারের ছোট সার দোকানীদের সাথে কথা হলে তারা বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, উপজেলায় সার না পেয়ে উপজেলার বাইরের বাজার হতে ৮০০/- টাকা দামের সার ১০০০/- টাকা ক্রয় করতে হয়েছে।
এছাড়া বেশী দামে সার বিক্রির কারণ জানতে চাইলে তার বলেন, বাইরে থেকে বেশি দামে সার আমদানিতে খরচা বাড়ছে। এ কারণে বেশি দামেই সার বিক্রি করা হচ্ছে বলে তারা দাবি করছেন। বালানগর গ্রামের কৃষক গত সোমবার ভবানীগঞ্জ বাজারের সরকারী মূল্যে সার না পেয়ে বাজারের এক গুরুত্বপুর্ণ ব্যক্তির স্বরনাপর্ন হয়ে পার্শ্ববর্তি ভবানীগঞ্জ পৌরসভার এক ডিলারে কাছ থেকে সার নিতে পারে। এমনটির জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট বিভাগের দায়িত্বশীলদের দেখভাল না থাকায় সারের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
এদিকে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ১৫ জন সার ডিলার রয়েছে। এসব ডিলারদের অধিকাংশের গোপন গোডাউন রয়েছে তারা বেশী দাম নিতে ওই সব গোডাউনের সার রাতের অন্ধকারে বাজারে বেশী দামে ছাড়ছেন বলে কৃষকরা অভিযোগ করেছেন। উপজেলা সদর ভবানীগঞ্জ বাজারে বিসিআইসির এক সার ডিলারের বাজারের বিভিন্ন পয়েন্টে গোপনীয় গোডাউন রয়েছে। প্রয়োজনের সময় সার আটকিয়ে কৌশলে বেশী দামে বিক্রি করে বরাবর ওই ডিলার কৃষকদের সাথে প্রতারণা করে আসছেন। বিষয়টি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাকে জানিয়ে কোন লাভ হয় না বলে ভুক্তভোগী কৃষকরা অভিযোগ করেছেন।
এ প্রসঙ্গে বাগমারা উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, উপজেলার কৃষকদের প্রয়োজন মত সব সার রয়েছে। তবে মাছচাষে কিছু সার বের হওয়ায় সমস্যা দেকা দিয়েছে। এছাড়া উপজেলায় ইউরিয়া সারের বরাদ্দ কম। কৃষকদের প্রয়োজনীয় সারে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সামনে মাসের বরাদ্দ আসলে সব সমস্যা দুর হবে। অন্য দিকে ডিলারদের অতিরিক্ত দামে সার বিক্রির সুযোগ নেই বলে তিনি দাবি করেছেন।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর বাগমারা প্রতিনিধি মোঃ আফাজ্জল হোসেন / রাজশাহী। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.