প্রিগোজিনের মৃত্যু, ওয়াগনার গ্রুপের ভবিষ্যৎ কী?

বিটিসি আন্তর্জাতিক ডেস্ক: রাশিয়ায় বিমান বিধ্বস্ত হয়ে মারা গেছেন ভাড়াটে সেনাদের সংস্থা ওয়াগনারের প্রধান ইয়েভজেনি প্রিগোজিন। ওয়াগনারের টেলিগ্রাম চ্যানেল গ্রে জোন থেকে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।
তার মৃত্যুর বিষয়টি রহস্যের মতো মনে হচ্ছে বিশ্লেষকদের কাছে। এ ব্যাপারে এখনো নিশ্চিত করে কিছু জানায়নি রাশিয়া। শুধু দেশটি বলছে— উদ্ধার হওয়া লাশটি প্রিগোজিনের বলে মনে হচ্ছে। 
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সময় বুধবার রাত ১১টার দিকে রাজধানী মস্কো থেকে সেন্ট পিটার্সবার্গগামী একটি বিমান বিধ্বস্ত হয়। বিমানে সাত যাত্রী ও তিনজন ক্রু ছিল। যাত্রীদের মধ্যে নাম ছিল প্রিগোজিন ও ওয়াগনারের উপপ্রধান। ব্যক্তিগত বিমানটি উড্ডয়নের আধা ঘণ্টার কম সময়ের মধ্যে বিধ্বস্ত হয়। বিধ্বস্ত হওয়ার পর ওই উড়োজাহাজে আগুন ধরে যায়।
প্রিগোজিনকে বহনকারী বিমানটিতে কী হয়েছিল সে বিষয়টি নিশ্চিত নয়; তবে একটি বিষয় পরিষ্কার— বিদ্রোহের পর প্রথম প্রিগোজিনের গঠিত বাহিনীকে টুকরো টুকরো করা হয়েছে। সর্বশেষ পুরোপুরি শেষ করে দেওয়া হয়েছে।
বিদ্রোহের পর ওয়াগনার গ্রুপের সেনাদের পাঠিয়ে দেওয়া হয় বেলারুশে। তবে সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে জানা গেছে, বেলারুশে যাওয়া সেনাদের মধ্যে অনেকে বেতন নিয়ে অসন্তুষ্ট ছিলেন। এ কারণে অনেকে পূর্ব আফ্রিকার দেশে চলে যাচ্ছেন। বেলারুশে ওয়াগনারের সেনার সংখ্যা প্রথমে পাঁচ হাজার হলেও সেটি চার ভাগের তিন ভাগ কমে গেছে। ইউক্রেন থেকে প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর প্রশ্ন দেখা দিয়েছিল— আফ্রিকার যে দেশগুলোতে ওয়াগনারের শক্ত অবস্থান ছিল, সেখানে তারা তা ধরে রাখতে পারবে কিনা।
যদিও আফ্রিকার দেশগুলোয় অবস্থানরত ওয়াগনার সেনাদের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য আজ্ঞাবহ নতুন কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হবে। তবে প্রশ্ন থাকবে— তিনি প্রিগোজিনের শূন্যস্থান পূরণ করতে পারবেন কিনা।
ব্রিটিশ বিমানবাহিনীর সাবেক ভাইস মার্শাল সিন বেল গত জুনে বিদ্রোহের পর স্কাই নিউজকে বলেছিলেন— ‘প্রিগোজিনকে ছাড়া ওয়াগনারের অস্তিত্ব নেই। যদি ওয়াগনার গ্রুপ ইয়েভজেনি প্রিগোজিনের হয়ে থাকে, তা হলে এটি কীভাবে টিকে থাকবে সেটি দেখা কঠিন হবে।’
রাশিয়া চাচ্ছে ওয়াগনার গ্রুপকে হাতের মুঠোয় রাখতে। লিবিয়ায় তাদের রাখতে চাইছে। এ কারণে রাশিয়ার একজন কর্মকর্তা সম্প্রতি লিবিয়া সফরও করে এসেছেন।
মঙ্গলবার বেনগাজিতে লিবিয়ার কমান্ডার খালিফা হাফতারের সঙ্গে মিটিং করেছেন রাশিয়ার উপপ্রতিরক্ষামন্ত্রী ইউনুস বেক ইভেয়কুরুভ। সেখানে লিবিয়ার একজন কমান্ডারের অধীনে ওয়াগনার গ্রুপকে প্রতিস্থাপন করা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। লিবিয়ার একজন কর্মকর্তা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
জুনে প্রিগোজিন ও ওয়াগনার গ্রুপ পুতিনের সঙ্গে বিদ্রোহ করার পর তাদের সঙ্গে রুশ সেনাদের বৈঠক হয়। তখন রুশ সেনাবাহিনী তাদের বার্তা দেয় যে, এই বাহিনীকে নতুনভাবে পুনর্গঠন করতে চায় রাশিয়া। ওয়াগনারের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে এটাই প্রমাণ হয় যে, রাশিয়া চাচ্ছে ওয়াগনারকে নিজ স্বার্থে ব্যবহার করতে। পুতিন ওয়াগনারকে ভবিষ্যতে ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকায় সামরিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করতে তাতে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
জুনে বিদ্রোহের পর প্রিগোজিন আফ্রিকায় ওয়াগনারের অবস্থান শক্ত করার কথা বলেছিলেন। আফ্রিকার একটি দেশ থেকে সোমবার এক ভিডিওবার্তায় ওয়াগনার বলেছিলেন, সব মহাদেশে বিশেষ করে আফ্রিকায় রাশিয়ার উপস্থিতি জোরালো করতে চায় ওয়াগনার।
প্রসঙ্গত, ১৯৬১ সালের ১ জুন সেন্ট পিটার্সবার্গে জন্মগ্রহণ করেন প্রিগোজিন। তার বেড়ে ওঠাও সেখানে। ১৯৭৯ সালের নভেম্বরে ১৮ বছর বয়সি প্রিগোজিন প্রথম চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়েন। দুই বছর পর ১৯৮১ সালে আবার চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়েন তিনি। এ ছাড়া ডাকাতি, জালিয়াতি ও কিশোর-কিশোরীদের অপরাধে জড়িত করার জন্য ১২ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছিলেন প্রিগোজিন।
১৯৯০ সাল থেকে পুতিনের সঙ্গে পরিচয় প্রিগোজিনের। ক্রেমলিনের বিভিন্ন খাবারের চুক্তি পাওয়ার মাধ্যমে ধনী হয়ে ওঠেন তিনি। এক সময় তিনি ‘পুতিনের শেফ’ হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
২০১৪ সালে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চল দোনবাসে রাশিয়াপন্থি সশস্ত্র গোষ্ঠীর বিদ্রোহের সময় প্রিগোজিন একজন নির্মম সেনাপতি হিসেবে আলোচনায় আসেন। তখনই তিনি গড়ে তোলেন ভাড়াটে বাহিনী ওয়াগনার গ্রুপ। এই বাহিনী ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে লড়াই করে। বিশ্বজুড়ে রাশিয়ার স্বার্থের পক্ষে কাজ করে।
রাশিয়া ও ইউক্রেন ছাড়াও মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র, সুদান, লিবিয়া, মোজাম্বিক, ইউক্রেন ও সিরিয়াতে সক্রিয় ওয়াগনার যোদ্ধারা। বিগত বছরগুলোতে মানবাধিকার লঙ্ঘন করে কুখ্যাতি পেয়েছেন প্রিগোজিন।
২০২২ সালে ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণ শুরুর পর আবারও আলোচনায় আসেন প্রিগোজিন। পূর্ব ইউক্রেনের সলেদার শহর দখলের রুশ অভিযানের নেতৃত্বে ছিলেন ওয়াগনার যোদ্ধারা। এটি বাখমুত থেকে কয়েক মাইল উত্তর-পূর্ব দিকে।
কিন্তু এর পর রাশিয়ার সেনাবাহিনী, সেনাপ্রধান ও প্রতিরক্ষামন্ত্রীর বিরুদ্ধে সমালোচনা করে প্রিগোজিন। মে মাসে হঠাৎ করেই প্রিগোজিন ঘোষণা দেন যে, বাখমুত থেকে তার যোদ্ধাদের প্রত্যাহার করা হবে। পরবর্তী সময়ে তিনি ক্রেমলিনের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.