প্রশান্তির ছায়া


নওগাঁ প্রতিনিধি:  এক সময় জঙ্গলে ভরপুর ছিল। সেখানে শিয়াল বসবাস করতো। এমনকি দিনের বেলাও সেখান থেকে শিয়াল বেরোতো। মানুষ সেখানে প্রসাব করতো। ছিল দূর্গন্ধময় স্থান। এমন অবস্থা ছিল নওগাঁ জেলা প্রশাসক কার্যালয় ও আদালতে প্রবেশের মুল গেটের বাম দিকের চত্বর। বর্তমানে সেখানে এখন ‘প্রশান্তির ছায়া’ বিরাজ করছে। জেলা প্রশাসক কার্যালয় ও আদালতে সেবা নিতে আসা মানুষরা সেখানে বিশ্রাম গ্রহণ করছেন। জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এমন বিশ্রামাগার তৈরী করা হয়েছে।

মুল গেট থেকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের দুরুত্ব প্রায় ২শ মিটার। জেলা প্রশাসক সহ সকল কর্মকর্তাকে মুল গেটের বাম দিকে দিয়ে প্রবেশ করে ওই জঙ্গলের পাশ দিয়ে কার্যালয়ে যেতে হতো। ওই জঙ্গলটি খুবই দৃষ্টিকটু দেখাতো। সেখানে সুন্দর পরিবেশ তৈরী এবং বিশ্রামের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করে জেলা প্রশাসন।

জানা গেছে, তৎকালীন জেলা প্রশাসক মো: মিজানুর রহমান ২০১৯ সালের ৯ জুন ওই জায়গাটি সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহন করেন। সেখানে জেলা প্রশাসনের বাস্তবায়নে প্রায় সাড়ে ১৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ৩ টি বাথরুম (নারী ও পুরুষ আলাদা), প্রতিটি উপজেলার নামে ১১ টি ড্রিল শেড তৈরী করা হয়েছে। যেখানে ১৮টি স্টিলের বেঞ্চ আছে। এছাড়াও প্রতিবন্ধী ও বয়স্ক এবং মহিলা ও শিশুদের জন্য আলাদা শেড রয়েছে। শিশুদের জন্য একটি ভারসাম্য রক্ষা ও একটি দোলনা তৈরী করা হয়েছে। বিশ্রামাগারটি নাম দেয়া হয়েছে ‘প্রশান্তির ছায়া’। এ বিশ্রামাগারটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তদারকি করেছেন নওগাঁ সদর উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মো: মাহব্ুুবুর রহমান।

গত তিন মাস থেকে ‘প্রশান্তির ছায়া’ এ বিশ্রামাগারে সুবিধা ভোগ করছে সেবা নিতে আসা হাজারো মানুষ।

সদর উপজেলার হাঁসাইগাড়ী গ্রামের রেজাউল হক। তিনি পেশায় একজন ব্যবসায়ী। গত তিন বছর জমিজমা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে ২৫ কিলোমিটার দুর থেকে আদালতে আসা-যাওয়া করছেন। তিনি বলেন, এক সময় সেবা নিতে এসে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত আদালত চত্বরের বিভিন্ন স্থানে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়ত। বসার কোন জায়গা ছিলনা। আদালত চত্বরে কয়েকটি চা স্টল আছে, যেখানে চা খেতে যেটুকু সময় বেঞ্চে বসা যেত। চা পানের পর আবার চলে যেতে হতো। এখন অনেক সুবিধা হয়েছে বিশ্রামাগারের জন্য।

শহরের উকিলপাড়ার বাসীন্দা আইনজীবির সহকারী শওকত হোসেন বিটিসি নিউজকে বলেন, এখানে জঙ্গল ও মশার কারখানা ছিল। মানুষ প্রসাব করায় চারিদিকে দূর্গন্ধ ছড়াতো। সেখানে এখন প্রশান্তির ছায়া নামে বিশ্রামাগার করা হয়েছে। মানুষ যে কোন সময় সেখানে বিশ্রাম নিতে পারছেন। সর্বপরি খুবই ভাল হয়েছে ওই বিশ্রামাগার। সেখানে নিজেও বিশ্রাই নিই মাঝেমধ্যে।

জেলার মহাদেবপুর উপজেলার সুলতানপুর গ্রামের গোলাম মোস্তফা বিটিসি নিউজকে বলেন, গত ২০ বছর থেকে আদালতে আসা যাওয়া করছেন। বর্তমানে চেকের মামলা নিয়ে আদালতে ঘুরছেন। দীর্ঘদিন আদালতে আসা যাওয়া করা হলেও কোথায়ও একটু বিশ্রাম করার জায়গা পাইনি। দাঁড়িয়ে থেকে ক্লান্ত ও পা ব্যথা হয়ে গেলে আদালতের মেঝেতে ধুলা বালির মধ্যে বসে থাকতে হতো। কিন্তু এখন বিশ্রামাগারে এসে একটু আরাম করে বসতে পারছি। আমার মতো অনেক মানুষ বসতে পারছে। এমন উদ্যোগের জন্য জেলা প্রশাসন ধন্যবাদ জানিয়েছেন তিনি।

প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মো: মাহব্ুুবুর রহমান বিটিসি নিউজকে বলেন, এটি একটি খুবই জনগুরুত্বপূর্ন স্থান। গত ৩ মাস আগে ওই বিশ্রামাগারটি তৈরী করা হয়েছে। যেখানে মানুষ জেলা প্রশাসক কার্যালয় ও আদালতে সেবা নিতে এসে অবসরে একটু বিশ্রাম এবং প্রশান্তির ছায়ায় নিজেকে জিরিয়ে নিতে পারছেন। বাচ্চারাও আনন্দের সাথে দুলনায় দোল খেতে পারছেন। যা খুবই প্রশংসনিয় একটি কাজ বলে মনে করি।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নওগাঁ প্রতিনিধি মো: আব্বাস আলী। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.