প্রথমবার ক্যাপসিকাম চাষে লাভবান আইনজীবী ময়েজ

লালমনিরহাট প্রতিনিধি: ময়েজুল ইসলাম ময়েজ পেশায় সফল আইনজীবী হলেও একজন গাছপাগল মানুষ। তবে প্রথাগত গাছপালা নয়, একটু ব্যতিক্রমী চাষাবাদে আগ্রহী তিনি।
এ কারণেই আবাদের জন্য বেছে নিয়েছেন ক্যাপসিকামকে। এক বিঘা জমিতে ক্যাপসিকামের চাষ করছেন তিনি। ফলনও ভালো। বিক্রি করছেন ৪০০ টাকা কেজি দরে।
লালমনিরহাটের আদিতমারীর সাপ্টিবাড়ী হরিদাস টেপারহাট এলাকায় শখের বশে ক্যাপসিকাম চাষ করে চমক দেখিয়েছেন ময়েজ।
ক্যাপসিকামের চাষাবাদ লালমনিরহাট জেলায় নাই বললেই চলে। প্রচারও কম। জেলার বহু কৃষক এর নামও শোনেননি। ক্যাপসিকামের এটি মূলত একটি সালাদজাতীয় সবজি। যা টমেটোর মতো কাঁচা বা পাকলেও খাওয়া যায়। খেতেও সুস্বাদু।
সরেজমিনে অ্যাডভোকেট ময়েজের ক্যাপসিকামের বাগান ঘুরে দেখা যায়, একটি বিশেষ শেডের নিচে শ শ গাছে লাল, হলুদ ও সবুজ রঙের ক্যাপসিকাম ঝুলে আছে। তিনি উচ্চফলনশীল জাতের ক্যাপসিকাম চাষ করছেন। পরিচ্ছন্ন বাগানজুড়েই পাতার ফাঁকে উঁকি দিচ্ছে ক্যাপসিকাম। শেডের ভেতরে কাজ করছেন কয়েকজন কর্মী। ময়েজ নিজেও গাছের পরিচর্যায় কাজ করছেন।
বাগানের ভেতর অসংখ্য ছোট ছোট কালো রঙের পানির নল। সেগুলো থেকে নির্দিষ্ট সময় অন্তর স্বয়ংক্রিয়ভাবে পানি ছড়িয়ে পড়ছে গাছে গাছে। কর্মীরা কেউ কেউ ঝুড়ি নিয়ে বাগান ঘুরে পরিণত ক্যাপসিকাম তুলে রাখছেন।
বাগানে দাঁড়িয়ে কথা হয় তার সঙ্গে। ক্যাপসিকাম চাষ সম্পর্কে ময়েজ বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, ‘এরই মধ্যে আমি প্রায় ৮ থেকে ১০ মণ ক্যাপসিকাম তুলে বিক্রি করেছি। ‘ক্যাপসিকাম লাগাতে গিয়ে আমাকে মালচিং পেপার সংগ্রহ করতে হয়েছে। মালচিং পেপারের অনেক গুণাগুণ আছে। এটি মাটিকে ঠান্ডা রাখে। মাটির আর্দ্রতা ধরে রাখে। এ পেপার যেকোনো প্রকার আগাছার উপদ্রব থেকে অনেকটা রক্ষা করে। এই পেপারের কারণে পানিও কম লাগে। অর্থাৎ মালচিং পেপার দিয়ে চাষ করলে সবদিক থেকেই লাভবান হবে কৃষক। এটি কোনো সাধারণ পলিথিন না। এর ভেতরটা কালো বাইরেরটা সিলভার কালার। এটি আলো নিরধক ও তাপকে শোষণ করতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, উচ্চফলনশীল জাতের ক্যাপসিকাম চাষে এক বিঘা জমিতে চার হাজার গাছ লাগানো যায়। এক কেজিতে তিনটা থেকে চারটা ক্যাপসিকাম ধরে। কিন্তু অন্য জাতেরগুলো এক কেজিতে ছয় থেকে আটটা ধরে।
তিনি আরও বলেন, ‘আমার এসব ক্যাপসিকামে পানিতে দ্রবনীয় সার লাগে। আমি সেটা পাইনি। তবে তারপরও যথেষ্ট ভালো ফলন হয়েছে। একটি গাছ থেকে তিন থেকে চার কেজির মতো ফলন পাওয়া যায়। এপ্রিল, মে, জুন পর্যন্ত গাছ থেকে ক্যাপসিকাম পাওয়া যায়। একটি গাছ ছয় থেকে আট ফুট লম্বা হয়।’
এই জাতের ক্যাপসিকাম বর্তমানে বাজারে ৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হচ্ছে। এক গাছে তিন কেজি ক্যাপসিকাম ধরলে তার দাম পড়ে ১ হাজার ২০০ টাকা। একটি গাছের দাম মাত্র ১০ থেকে ১২ টাকা। অন্যান্য খরচ মিলিয়ে একটি গাছের পেছনে খরচ হয় ১৫০ টাকার মতো। তাহলে বুঝতেই পারছেন কেমন লাভবান হবে কৃষকরা যদি তারা চাষাবাদ করেন।
তিনি বলেন, ‘আমি প্রায় ২০ বছরের বেশি সময় ধরে ফলের চাষ করে আসছি। বাংলাদেশে যে সমস্ত ফল হয় তার প্রায় সবই আমার বাগানে রয়েছে। এ ছাড়াও বিদেশি অনেক ফলমূল রয়েছে। এর মধ্যে আছে ডুরিয়ান, লুকেট, এফ্রিকট, ডুমুর যেটা মিসরীয় ডুমুর, টিনাট, ম্যাংগোস্টিন, জাপানের জাতীয় পার্শিমন, কফি, সুরিনাম চ্যারি, জাবাটি কাবা, কোরাসল, সিগ্রেভসহ বহু জাতীয় দেশি ও বিদেশি ফল। আমি খুবই আশাবাদী। আমাদের এই আবহাওয়ায় বিদেশি ফলের উৎপাদন ভালো হবে।’
লেবার মজমুল বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমরা ক্যাপসিকাম লাগাইছি। এখানে বহুদিন থাকিয়া কাজ করি দিন হাজিরায়। দিন হাজিরা পাই ৩০ টাকা।
লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক, কৃষিবিদ মো. শামীম আশরাফ বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমাদের লালমনিরহাটের ময়েজ আড়াই একর জমিতে মিশ্র ফল বাগান করেছেন এবং দেশি-বিদেশি নানান জাতের ফলের চাষ করেছেন। আমি মনে করি, এই এলাকার চাষিদের জন্য এটি উৎসাহব্যঞ্জক হবে।’
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর লালমনিরহাট প্রতিনিধি হাসানুজ্জামান হাসান। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.