প্রতিশোধ নিতে ওমান উপসাগরে ‘মার্কিন’ তেলের ট্যাংকার জব্দ করল ইরান

বিটিসি আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ওমান উপসাগরে ইরান-যুক্তরাষ্ট্রের দ্বন্দ্বের সঙ্গে জড়িত মার্শাল আইল্যান্ডের পতাকাবাহী একটি তেলবাহী ট্যাংকার জব্দ করেছে ইরান। তবে ট্যাংকারটি আমেরিকান বলে দাবি করেছে ইরানের তাসনিম নিউজ।
গত বছর ইরানের একটি তেলবাহী ট্যাংকার জব্দের প্রতিশোধে আজ বৃহস্পতিবার মার্কিন ওই তেল ট্যাংকার জব্দ করা হয়েছে বলে ইরানের বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যমের খবরে জানানো হয়েছে।
অপরিশোধিত ইরাকি তেলবাহী ওই ট্যাংকার তুরস্কের উদ্দেশে যাচ্ছিল।
ব্রিটিশ সমুদ্র নিরাপত্তাবিষয়ক সংস্থা অ্যামব্রে বলেছে, মার্শাল দ্বীপপুঞ্জের পতাকাবাহী সেন্ট নিকোলাস নামের ওই ট্যাংকারটি গত বছর ইরানি তেল পরিবহন করায় জব্দ করেছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। জাহাজের গতিবিধি শনাক্তকরণ প্রযুক্তি ব্যবহার করে অ্যামব্রে ওমানের সোহার শহরের কাছাকাছি পৌঁছানোর পর আজ কিছু সশস্ত্র ব্যক্তি সেই ট্যাংকারটির নিয়ন্ত্রণ নেয় বলে জানিয়েছে।
পরে সেটিকে ইরানের বন্দর-ই-জাস্কের দিকে নিয়ে যাওয়ার সময় ট্র্যাকিং সিস্টেম বন্ধ করে দেওয়া হয়। বর্তমানে ট্যাংকারটির অবস্থান শনাক্ত করা যাচ্ছে না। গত বছর ওই ট্যাংকারটি যুক্তরাষ্ট্র জব্দ করার পর ওয়াশিংটনকে সতর্ক করে দিয়ে তেহরান বলেছিল, এর সমুচিত জবাব দেওয়া হবে।
ইরানের সামরিক বাহিনীর এক বিবৃতির বরাত দিয়ে দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যম ফারস নিউজের খবরে বলা হয়েছে, ‘ইরানের সামরিক বাহিনীর বিচারিক আদেশের মাধ্যমে ওমান উপসাগরে একটি আমেরিকান তেল ট্যাংকার জব্দ করার ঘোষণা দিয়েছে।’
তবে এই ট্যাংকারকে কেন আমেরিকার বলে ইরানের গণমাধ্যমে বর্ণনা করা হয়েছে, সেটি পরিষ্কার নয়। গত বছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইরানের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞার আওতায় সেন্ট নিকোলাস ট্যাংকারটি জব্দ করেছিল। তখন এই ট্যাংকারটির নাম ছিল সুয়েজ রাজন।
যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, ওই সময়ে ইরানের ইসলামিক বিপ্লবী গার্ড বাহিনী (আইআরজিসি) মার্কিন নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করে চীনে ইরানি তেল পাঠানোর চেষ্টা করছিল।
এদিকে আজ ট্যাংকারটি ইরাকের বসরা বন্দরে ১ লাখ ৪৫ হাজার মেট্রিক তেল লোড করার পর সুয়েজ খাল হয়ে পশ্চিম তুরস্কের আলিয়াগা যাচ্ছিল। ট্যাংকারটির পরিচালনাকারী সংস্থা এম্পায়ার নেভিগেশন ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছে, ট্যাংকারটির সঙ্গে তাদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতা গোষ্ঠী হামাসের প্রতি সমর্থনের অংশ হিসেবে গত নভেম্বর থেকে লোহিত সাগরে ইসরায়েল ও অন্য পশ্চিমা দেশের জাহাজগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করছে ইয়েমেনের ইরান-সমর্থিত হুথি বিদ্রোহীরা।
তাদের এই হামলায় বিশ্বের অনেক বড় শিপিং কোম্পানি সুয়েজ খাল দিয়ে যাওয়ার পরিবর্তে আফ্রিকার উত্তমাশা অন্তরীপের দীর্ঘ এবং অত্যধিক ব্যয়বহুল রুটে জাহাজ পরিচালনা করছে। বিশ্ববাণিজ্যের প্রায় ১২ শতাংশ পণ্যসামগ্রী সুয়েজ খালের মাধ্যমে পরিবহন করা হয়।
আজ এ ঘটনা ওমান ও ইরানের মধ্যে হরমুজ প্রণালির কাছাকাছি এলাকায় ঘটেছে। এম্পায়ার নেভিগেশন বলেছেন, জাহাজটিতে মোট ১৯ জন ক্রু আছেন। তাঁদের মধ্যে ১৮ জন ফিলিপিনো এবং একজন গ্রিক নাগরিক।
ব্রিটেনের সমুদ্র নিরাপত্তাবিষয়ক সংস্থা মেরিটাইম ট্রেড অপারেশন এজেন্সি (ইউকেএমটিও) আজ বলেছে, ওমান উপকূল থেকে প্রায় ৫০ নটিক্যাল মাইল পূর্বে একটি ট্যাংকারে চার থেকে পাঁচজন সশস্ত্র ব্যক্তি উঠে পড়েছে বলে তারা খবর পেয়েছে। সশস্ত্র অনুপ্রবেশকারীরা সামরিক ধাঁচের ইউনিফর্ম এবং কালো মুখোশ পরা ছিল বলে জানা গেছে।
ট্যাংকারটির প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা জাহাজটি ইরানের আঞ্চলিক জলসীমার দিকে গতিপথ পরিবর্তন করেছে এবং ট্যাংকারের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন। ট্যাংকারটির সঙ্গে আর যোগাযোগ করা যাচ্ছে না এবং কর্তৃপক্ষ এ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.