প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে দূরে ঠেলে দিচ্ছেন পুতিন?

বিটিসি আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের মধ্যেই নিজ দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগুকে দূরে ঠেলে দিচ্ছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। যুদ্ধের মধ্যেই একজন প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে যেন নিয়মিতভাবে উপহাস করা হচ্ছে। বিভিন্ন বিষয়ে রীতিমতো তাকে পাশ কাটিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এমনটাই উঠে এসেছে যুক্তরাজ্যের গোয়েন্দা প্রতিবেদনে।
সোমবার প্রকাশিত ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার যুদ্ধে এক ধরনের স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। দৃশ্যত এর জেরেই কিছুটা গুরুত্ব হারিয়েছেন সের্গেই শোইগু।
টুইটারে দেওয়া গোয়েন্দা আপডেটে ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, প্রথমবারের মতো যুদ্ধের অভিজ্ঞতার নেওয়া রুশ অফিসার ও সেনারা সম্ভবত নিয়মিতভাবে শোইগুকে তার ‘অকার্যকর নেতৃত্বের’ জন্য উপহাস করে আসছে। ইউক্রেনের রণাঙ্গনেও রাশিয়ার অগ্রগতি ক্রমেই ধীর হয়ে গেছে।
সের্গেই শোইগু মূলত রাশিয়ার প্রত্যন্ত টুভা অঞ্চলের মানুষ। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের সময় উদ্ভূত পরিস্থিতিতে মন্ত্রীর দায়িত্ব পান তিনি। রাশিয়ায় সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে মন্ত্রীর দায়িত্ব পালনের রেকর্ড তার। কোনও সামরিক পটভূমি বা যুদ্ধের অভিজ্ঞতা না থাকা সত্ত্বেও ২০১২ সালে প্রবীণ এই রাজনীতিককে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেন পুতিন। ২০১৪ সালে ইউক্রেনের কাছ থেকে ক্রিমিয়ার দখল নেয় রাশিয়া। ওই সময়ে ক্রিমিয়ার রাশিয়ায় সংযুক্তির বিষয়টি তদারকি করেন সের্গেই শোইগু।
যুক্তরাজ্যের গোয়েন্দা আপডেটে বলা হয়েছে, সের্গেই শোইগুকে হয়তো তার যথেষ্ট সামরিক অভিজ্ঞতা না থাকার দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে দীর্ঘ সংগ্রাম করতে হয়েছে। কেননা নিজের ক্যারিয়ারের বেশিরভাগ সময় তিনি নির্মাণ খাতে এবং জরুরি পরিস্থিতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে কাটিয়েছেন।
সাম্প্রতিক স্বতন্ত্র রুশ মিডিয়ার প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, সের্গেই শোইগু এখন রাশিয়ার নেতৃত্বের পর্যায় থেকে ছিটকে পড়ছেন। অপারেশনাল কমান্ডাররা সরাসরি যুদ্ধের বিষয়ে সরাসরি প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে ব্রিফ করছেন।
২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে কথিত বিশেষ সামরিক অভিযান শুরু করে রাশিয়া। এর ছয় মাসের মাথায় গত ২৪ আগস্ট ছিল ইউক্রেনের স্বাধীনতা দিবস। এদিন উজবেকিস্তানে সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার সদস্য দেশগুলোর প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের বৈঠকে ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে কথা বলেন সের্গেই শোইগু। তার দাবি, ইউক্রেনে রুশ অভিযানের গতি ইচ্ছাকৃতভাবে ধীর করা হয়েছে। বেসামরিক নাগরিকদের হতাহতের সংখ্যা কমাতেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে মস্কো।
সের্গেই শোইগু বলেন, বেসামরিক মানুষের হতাহতের ঘটনা এড়াতে সবকিছু করা হচ্ছে। এতে করে হামলার গতি কমে যায়। তবে মস্কো ইচ্ছাকৃতভাবেই এই পথ বেছে নিয়েছে।
শোইগুর দাবি, ইউক্রেনে রুশ অভিযান মস্কোর পরিকল্পনা অনুযায়ী সামনের দিকে অগ্রসর হয়েছে এবং রাশিয়া তার কাঙ্খিত সব লক্ষ্য অর্জন করবে।
যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশগুলো ইউক্রেনে অস্ত্র সরবরাহের কারণে সংঘাত দীর্ঘায়িত হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তার ভাষায়, ‘যুক্তরাষ্ট্র এবং তার সহযোগীদের লক্ষ্য হলো অন্য দেশগুলোকে সতর্ক করা যারা একটি স্বাধীন পররাষ্ট্র নীতি অনুসরণ করে।’
ইউক্রেনে ক্রেমলিনের পরিকল্পনা অনুযায়ী অগ্রসর হচ্ছে মস্কো, সের্গেই শোইগুর এমন দাবি অবশ্য নাকচ করে দিয়েছে যুক্তরাজ্য। এ সংক্রান্ত মন্তব্যগুলোকে ‘ইচ্ছাকৃতভাবে ছড়ানো ভুল তথ্য’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে ব্রিটিশি প্রতিরক্ষা দফতর। তারা বলছে, ইউক্রেনে দ্রুত অগ্রগতি করতে ব্যর্থ হওয়ার কারণে অন্তত ছয় জন জেনারেলকে বরখাস্ত করেছেন পুতিন। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.