প্রতারণার শিকার রাজশাহীর সিটি সেন্টারের ব্যবসায়ীরা ! ১৬ বছরেও দোকান বুঝে পাননি

নিজস্ব প্রতিবেদক: এনা প্রোপার্টিজ ২০০৯ সাল থেকেই নির্মাণাধীন সিটি সেন্টারের দোকানের বুকিং নেওয়া শুরু করে এনা প্রোপার্টিজ। কিন্তু দীর্ঘ ১৬ বছরেও রাজশাহীর সিটি সেন্টারের নির্মাণকাজ নির্মান কাজ শেষ করতে পারেনি আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য এনামুল হকের প্রতিষ্ঠান এনা প্রোপার্টিজ।
৩৬ মাসে কাজ শেষ করার স্বপ্ন দেখিয়ে দোকান বিক্রি করে এনা প্রোপার্টিজ দেড় দশক ধরে ব্যবসায়ীদের ঝুলিয়ে রেখেছেন। যাহা রিতিমতো প্রতারণার সামিল।
এ অবস্থায় এনা প্রোপার্টিজের আঞ্চলিক পরিচালক সারওয়ার জাহানের অপসারণ দাবি করেছেন ব্যবসায়ীরা।
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) জমিতে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) ভিত্তিতে সিটি সেন্টার নির্মাণের কাজে হাত দেয় এনা প্রোপার্টিজ। ২০০৯ সালে এ কাজের দরপত্র আহ্বান করা হয়। দরপত্র জমা দেয় শুধু রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনের তৎকালীন এমপি এনামুল হকের প্রতিষ্ঠান এনা প্রোপার্টিজ। ফলে ১৬ তলাবিশিষ্ট ওই ভবন নির্মাণের কাজটি তারাই পায়। চুক্তি অনুযায়ী, ভবনের মাত্র ২৫ দশমিক ২৫ শতাংশ সিটি করপোরেশন পাবে। আর বাকিটা এনা প্রোপার্টিজ ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করবে।
সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, চুক্তি অনুযায়ী কার্যাদেশ পাওয়ার ৩৬ মাসের মধ্যে এই নির্মাণকাজ শেষ করার কথা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ২০০৯ সালে বুকিং নেওয়া শুরু করে এবং ভবনের ১৬ তলা পর্যন্ত কাঠামো উঠলেও শুধু প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ ও সপ্তম তলার কাজ আংশিক শেষ হয়েছে। ওপরের দিকে কোনো কাজেই হাত দেওয়া হয়নি। কথা থাকলেও এখনো সেন্ট্রাল এসি বসেনি। ভবনে একটি কার্গো লিফট, দুটি প্যাসেঞ্জার লিফট ও একটি ক্যাপসুল লিফট থাকার কথা। এত দিন পর শুধু ক্যাপসুল লিফট বসানো হচ্ছে। অন্য তিনটি লিফটের খবর নেই। দোকানের ক্রেতাদের মধ্যে মাত্র ১৮ জন এখন পর্যন্ত দোকান চালু করতে পেরেছেন।
দোকান মালিকেরা বলছেন, এনা প্রোপার্টিজ তাঁদের সঙ্গে প্রতারণা করছেন। তাঁরা নানা হয়রানি, দুর্নীতি ও দুর্ব্যবহারের অভিযোগ তুলে এনার আঞ্চলিক পরিচালক সারওয়ার জাহানের অপসারণ দাবি করেছেন। এ নিয়ে ২৬ মে তাঁরা এনা প্রোপার্টিজের কর্মকর্তাদের নিয়ে একটি জরুরি সভা ডেকেছিলেন। কিন্তু সেখানে এনার কোনো কর্মকর্তা উপস্থিত হননি। দোকানমালিকেরা ঢাকা কার্যালয়ে ফোন করেও কোনো সদুত্তর পাননি। এর পরিপ্রেক্ষিতে তাঁরা সারওয়ার জাহানের অপসারণ চেয়ে আবেদন করেছেন।
সূত্র জানায়, এর আগেও সভা আহ্বান করে তাদের সাড়া পাওয়া যায়নি। এখানে দোকান নিয়েছেন মনিরুল ইসলাম। সংযুক্ত আরব আমিরাতে থাকেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘আমি একজন রেমিট্যান্স যোদ্ধা। আমি খুব কষ্ট করে সিটি সেন্টারে দুটি দোকান কিনেছি। সপ্তম তলার ৭০১ ও ৭০২ নম্বর দোকান দুটি আমার। এনা দোকান হ্যান্ডওভার দিয়েছে ঠিকই, কিন্তু রেজিস্ট্রেশন দিচ্ছে না। আমি খুব সংকটে পড়েছি। ১৫-১৬ বছর ধরে আমার এতগুলো টাকা আটকে আছে। মার্কেটে কোনো সুযোগ-সুবিধা না থাকায় দোকান দুটি কোনোভাবে ভাড়া দিতেও পারছি না।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মুরাদ আলী বিটিসি নিউজকে বলেন, তাঁরা ৮২ জন ভুক্তভোগী দোকানমালিক অনলাইনে সভা করেন। তাঁদের কারও দোকান রেজিস্ট্রি হয়নি। দোকানগুলো প্রস্তুতও হয়নি। এ জন্য কেউ চাইলেও বিক্রি কিংবা ব্যবহার করতে পারছেন না।
তিনি বলেন, সারওয়ার জাহান আওয়ামী লীগের আমলেও যে প্রতারণা করেছেন, এখনো দোকানমালিকদের সঙ্গে সেই প্রতারণা করছেন।
এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য এনা প্রোপার্টিজের আঞ্চলিক পরিচালক সারওয়ার জাহানের মোবাইলে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। এদিকে সাবেক এমপি এনামুল হক বর্তমানে কারাগারে। তাই তাঁর সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নিজস্ব প্রতিনিধি মো. মাসুদ রানা রাব্বানী / রাজশাহী। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.