প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের ছুটে চলা!

লেখক- সুদীপ্ত কুমার সিংহ: সরকার রাষ্ট্রের অর্থনীতির চেয়ে নাগরিকদের  জীবনকে বেশি মূল্যায়ন করে লগ ডাউন ঘোষণা করলো। আর এই লগ ডাউন বাস্তবায়নের জন্য আইনি ক্ষমতা ও দায়িত্ব দিলো প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের।
স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এর নেতৃত্বে পুলিশ, আর্মি, বিজিবিকে মাঠে আপনাদের নিয়ন্ত্রণের জন্য কঠোরতা দেখেন। কেউ কেউ এই কঠোরতার মধ্যে ক্ষমতা দেখেন, আবার কেউবা দেখেন বাড়াবাড়ি। কিন্তু আমাদের মনের ভিতরটা কয়জন দেখেন?
আমাদের খুব খারাপ লাগে যখন পেটের দায়ে বের হওয়া একজন মানুষকে বল প্রয়োগ করে বাসায় পাঠিয়ে দেই, যখন পেশাদারিত্বের কারণে বা দায়িত্ব পালনের জন্য একজন পথচারী বা আগন্তুকের সাথে কড়া ভাষায় কথা বলতে হয় পরমুহূর্তেই আমাদের কষ্ট লাগে।
সবচেয়ে কষ্ট পাই যখন কাউকে অর্থদণ্ড বা কারাদণ্ড প্রদান করি। আর যখন মাছ বাজারে একজন মাছ বিক্রেতাকে নির্ধারিত সময় অতিবাহিত হওয়ার পর তাদের তাজা তরতাজা মাছ গুলোকে দাঁড়িয়ে থেকে বাক্স বন্দী করাই তখন আমাদের অন্তরে ছুয়ে যাওয়া খারাপ লাগাটা কেউ দেখতে পায় না।
নির্দিষ্ট সময়ের পরে অবিক্রিত সবজি গুলোকে যখন দাঁড়িয়ে থেকে বস্তা বন্দী করাই তখন সবজি গুলো নষ্ট হয়ে যাওয়ার আতংকে  বিক্রেতা ফ্যাল ফ্যাল করে আমাদের দিকে তাকিয়ে থাকেন তখন আমাদের চামড়ার চোখটা আইনি কারণে রাগান্বিত দেখায় কিন্তু অন্তরআত্মার ক্রন্দনটা কেউ দেখে না।
দিনশেষে আমরা মানুষ, আমরা এদেশের আলো বাতাসে বড় হওয়া নাগরিক। তাই পেশাদারিত্বের কারণেই হোক বা সরকারের নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্যই হোক আমাদের কঠোরতা আমাদেরকেই ব্যথিত  করে।
মনে প্রাণে বিশ্বাস করি যখন কঠোরতা দেখানোর কথা তখন কঠোরতা না দেখানো, যখন নমনীয়তা দেখানোর কথা তখন নমনীয়তা না দেখানো দায়িত্ব অবহেলার শামিল। তাই সকল ভয়ভীতি, ঝুকিকে অবজ্ঞা করেই নিজের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালনের প্রতিজ্ঞা করেই এই পেশায় আসা।
এখন একবার চিন্তা করুন তো এত কিছুর কি প্রয়োজন হতো,  এত কষ্ট স্বীকার করার কি দরকার হতো, অর্থনীতির এত ক্ষতি করার কি দরকার পড়তো যদি আমরা কেবল এবং কেবলমাত্র সরকার ঘোষিত স্বাস্থ্যবিধিটা মেনে চলতাম, মাস্ক পড়তাম।
সরকারের সবচেয়ে সমালোচক, বিদ্রুপকারী আর মানবতার কাঙ্গাল এই মানুষগুলো নিজেরাই মাস্ক পড়ে না, স্বাস্থ্য বিধি মানে না। আসুন স্বাস্থ্য বিধি মানি, মাস্ক পড়ি নিজেদের চলার স্বাধীনতা ও সুস্থতা নিজেরাই নিশ্চিত করি। কৃতজ্ঞতা-সুমন চন্দ্র দাস স্যার।
লেখক- সুদীপ্ত কুমার সিংহ, সহকারী কমিশনার ভূমি ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, দামুড়হুদা উপজেলা। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.