পূর্ব ভারতে এই প্রথম, নেভিগেশনের সাহায্যে হাঁটু বদল

 

বিটিসি নিউজ ডেস্ক: বছর কুড়ি আগে একটি দুর্ঘটনায় উরুর হাড় খানিকটা বেঁকে গিয়েছিল। সঙ্গে আর্থারাইটিসও ধরা পড়েছিল ঋদ্ধিমা চট্টোপাধ্যায়ের (নাম পরিবর্তিত)। গত আট বছর ধরে হাঁটুর ব্যথায় মারাত্মক কষ্ট পাচ্ছিলেন তিনি। এ বার সেই হাঁটুবদল হল অভিনব এক পদ্ধতিতে, নেভিগেশনের সাহায্যে। কলকাতারই এক বেসরকারি হাসপাতালে। অস্ত্রোপচারের পর ৬ মাস রোগীকে পর্যবেক্ষণে রেখে শুক্রবার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দিলেন, ওই অস্ত্রোপচার সফল হয়েছে।

ইংরেজির শিক্ষিকা ঋদ্ধিমা দেবীর বয়স ৬৩। বাড়ি গড়িয়াহাটের অভিজাত এলাকায়। হাঁটু ব্যথা এবং আর্থারাইটিসের কারণে দৈনন্দিন কাজকর্ম শুধু নয়, হাঁটাচলা, সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা সবই প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছিল শেষ এক বছর ধরে। সব মিলিয়ে রীতিমতো অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন তিনি। স্ত্রীর স্বাভাবিক চলাফেরা কী ভাবে সম্ভব তা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েন ঋদ্ধিমা দেবীর স্বামী। শেষে চিকিৎসকরা পরামর্শ দেন, নেভিগেশন পদ্ধতিতে হাঁটুবদলের। মেডিকা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে গত বছরের ১৫ই ডিসেম্বর নেভিগেশন পদ্ধতির সাহায্যে ঋদ্ধিমা দেবীর হাঁটুবদলের অস্ত্রোপচার করেন চিকিৎসক বিকাশ কপূর। পূর্ব ভারতে এমন অস্ত্রোপচার এই প্রথম বলেই হাসপাতালের তরফে দাবি করা হয়।

এমনিতে ঘণ্টাচারেক লাগে হাঁটুবদলের অস্ত্রোপচারে। কিন্তু, চিকিৎসক বিকাশ কপূর এবং তাঁর টিম বিশেষ পদ্ধতিতে ঋদ্ধিমা দেবীর অস্ত্রোপচার করেন মাত্র এক ঘণ্টায়। এ দিন বিকাশ বলেন, ‘‘হাঁটু বেঁকে যাওয়ার ফলে চলাফেরার স্বাভাবিক ছন্দে সমস্যা হচ্ছিল ঋদ্ধিমা দেবীর। তাই প্রথামাফিক হাঁটু বদলের অস্ত্রোপচারের জায়গায় কম্পিউটারচালিত নেভিগেশন ব্যবহার করা হয়েছিল। পূর্ব ভারতে এই কম্পিউটারচালিত নেভিগেশনটি অর্থোলাইন নামে পরিচিত। উনি এখন সম্পূর্ণ সুস্থ আছেন। স্কুলে যাওয়ার পাশাপাশি স্বাভাবিক কাজকর্মও করছেন।’’

স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পেরে খুশি ঋদ্ধিমা দেবীও। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘অস্ত্রোপচারের কারণে দু’মাস ছুটিতে ছিলাম। ফের যখন স্কুলে যোগ দিলাম, সহকর্মী শিক্ষক-শিক্ষিকারা অসম্ভব খুশি। হাঁটাচলায় আর কোনও কষ্ট নেই।’’ ঋদ্ধিমা দেবীর স্বামী জানিয়েছেন, পুরোদস্তুর সেরে উঠতে তাঁর স্ত্রীর বেশ খানিকটা সময় লেগেছে। অস্ত্রোপচারের মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই হাঁটু ভাঁজ করতে পেরেছিলেন তিনি। তিন দিন পর নিজেই হাঁটাচলা শুরু করেন। সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামার ক্ষেত্রেও কোনও সমস্যা ছিল না। তাঁর কথায়, ‘‘আমার এনে দেওয়া শৌখিন জুতোগুলো পরতে আর একটুও অসুবিধা হয় না ওঁর।’’

ওই হাসপাতালের ডিপার্টমেন্ট অব ফিজিক্যাল থেরাপি ও রিহ্যাবিলিয়েশনের তরফে কবিতা রায় বলেন, ‘‘এই ধরনের অস্ত্রোপচারের ক্ষেত্রে নিয়মিত ব্যায়াম করা অত্যন্ত জরুরি। হাঁটু বদলের অস্ত্রোপচারের পর সেরে ওঠার জন্য ব্যায়াম করা বাধ্যতামূলক। রোগীকেও সেই পরামর্শই দেওয়া হয়েছিল।’’(সূত্র: আনন্দ বাজার) #

 

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.