পুলিশ ফাঁড়িতে তরুণকে ‘পিটিয়ে হত্যা’

সিলেট ব্যুরো: এক তরুণকে পুলিশ ফাঁড়িতে এনে টাকার জন্য নির্যাতন করে হত্যার অভিযোগ ওঠেছে সিলেট মহানগর পুলিশের বিরুদ্ধে। নিহত রায়হান আহমদ (৩৪) সিলেট নগরীর আখালিয়া এলাকার নেহারিপাড়ার গুলতেরা মঞ্জিলের বাসিন্দা। তিনি দুই মাস বয়সী এক সন্তানের জনক। নগরীর স্টেডিয়াম মার্কেটে ডা. আবদুল গফফারের চেম্বারে তিনি চাকরী করতেন বলে জানা গেছে।

রায়হানের মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর পুলিশ প্রচার করে, গণপিটুনিতে তার মৃত্যু হয়েছে। তবে পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতন ও হত্যার অভিযোগ ওঠার পর নিজেদের বক্তব্য পাল্টে পুলিশ জানায়, নিহত তরুণ ছিনতাইকারী গ্রুপের নির্যাতনের শিকার। মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

রায়হান আহমদের মা সালমা বেগম ও চাচা হাবিবুল্লাহ অভিযোগ করেছেন, কর্মস্থল চিকিৎসকের চেম্বার থেকে ফিরতে দেরী দেখে গতকাল শনিবার (১০ অক্টোবর) রাত ১০টায় রায়হানের মোবাইলে ফোন দিলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। ভোর ৪টা ২৩ মিনিটের দিকে মায়ের মোবাইল ফোনে অপরিচিত একটি নম্বর থেকে কল আসে। ফোনের ওপার থেকে রায়হান জানান, পুলিশ তাকে ধরে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে এসে ১০ হাজার টাকা দাবী করছে। টাকা না পেলে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়েছে।

পরবর্তীতে রায়হানের মা তার চাচাকে ৫ হাজার টাকা দিয়ে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে পাঠান। রায়হানের চাচা হাবিবুল্লাহ আজ রবিবার (১১ অক্টোবর) ফজরের সময় টাকা নিয়ে ভাতিজা রায়হানকে ছাড়িয়ে আনতে বন্দরবাজার ফাঁড়িতে যান।

এ সময় সাদা পোশাকে ফাঁড়িতে থাকা এক পুলিশ সদস্য বলেন, ‘আপনার ১০ হাজার টাকা নিয়ে আসার কথা। আপনি ৫ হাজার টাকা নিয়ে আসলেন কেন? চলে যান, রায়হান এখন ঘুমাচ্ছে। যে পুলিশ কর্মকর্তা তাকে ধরে নিয়ে এসেছেন, তিনিও ফাঁড়িতে নেই। আপনি ১০ হাজার টাকা নিয়ে সকাল ৯টার দিকে আসেন। আসলেই তাকে নিয়ে যেতে পারবেন। তাকে আমরা কোর্টে চালান করব না। ’

রায়হানের চাচা বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, আজ রবিবার (১১ অক্টোবর) সকাল ৯টার দিকে টাকা নিয়ে তিনি আবারও বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে যান। এ সময় পুলিশ সদস্যরা জানান, অসুস্থ হয়ে পড়ায় সকাল ৭টার দিকে রায়হানকে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এ খবরে হাবিবুল্লাহ উদ্বিগ্ন হয়ে তৎক্ষণাৎ ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান। সেখানে গিয়ে জানতে পারেন, রায়হানের লাশ মর্গে রাখা হয়েছে। ময়নাতদন্তের পর বিকেল ৩টার দিকে পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করে।

‘পুলিশি নির্যাতনে’ রায়হানের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় লোকজন আজ আজ রবিবার (১১ অক্টোবর) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের আখালিয়া এলাকায় সড়ক অবরোধ করেন। প্রায় আধাঘণ্টা সড়ক অবরোধের পর পুলিশ তাদের সড়ক থেকে সরিয়ে দেয়।

এদিকে আজ রবিবার ভোরে রায়হানের মৃত্যুর পর পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, ছিনতাইকালে নগরীর কাস্টঘর এলাকায় গণপিটুনিতে রায়হানের মৃত্যু হয়েছে।

তবে পুলিশি নির্যাতনে মৃত্যুর অভিযোগ ওঠার পর তৎপর হয় মহানগর পুলিশ। নিজেদের বক্তব্য বদলে তারা জানায়, ছিনতাইকারী একটি গ্রুপের নির্যাতনের শিকার রায়হানকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায় পুলিশ।

বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন দাবী করেন, ভোররাতে এএসআই আশিক এলাহির নেতৃত্বে রায়হানকে উদ্ধার করা হয়। ছিনতাইকারী একটি গ্রুপ তাকে নৃশংসভাবে নির্যাতন করে ফেলে রাখে। রায়হান নিজেও ছিনতাইয়ের সাথে জড়িত বলে দাবী করে তিনি জানান, কোতোয়ালি থানায় তার নামে দুটি মামলা আছে, তিনি মাদকও গ্রহণ করতেন। তাকে ফাঁড়িতে নিয়ে নির্যাতনের প্রশ্নই আসে না। সিসি টিভির ফুটেজ দেখলেও এমন অভিাযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হবে বলে তিনি দাবী করেন।

নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে রাত পর্যন্ত থানায় লিখিত কোনো অভিযোগ করা হয়নি বলে জানান সিলেট কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সৌমেন মৈত্র।

তবে মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার আজবাহার আলী শেখ বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, যে মোবাইল নম্বর থেকে কল করা হয়েছিল বলে দাবী করা হচ্ছে, সেটিকে সূত্র ধরে তদন্ত করা হচ্ছে। অভিযোগ সত্য হলে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (গণমাধ্যম) জ্যোর্তিময় সরকার বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, পুলিশ গুরুত্বসহকারে বিষয়টি দেখছে। তদন্তে পুলিশের কেউ জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর সিলেট ব্যুরো প্রধান মো. জাকিরুল হোসেন জাকির। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.