পুলিশ ও দালালদের বিরুদ্ধে দফারফার অভিযোগ: চাঁপাইনবাবগঞ্জে ‘মহানন্দা স্পেশালাইজড হাসপাতালে’ ভূল চিকিৎসায় প্রসূতির মৃত্যু-স্বজন ও এলাকাবাসীর ক্ষোভ

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি: চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের শান্তিমোড় এলাকার ‘মহানন্দা স্পেশালাইজড হাসপাতাল’ এ ভূল চিকিৎসায় সিজারিয়ান প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। এঘটনায় নিহতের স্বজন ও এলাকাবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করে এঘটনার সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী করেছেন।
শনিবার বিকেল ৪টার দিকে এঘটনা ঘটে। ঘটনার পর পলাতক রয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের লোকজন। নিহত তামিমা (২১), চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার নয়নশুকা বিশ্বাসপাড়ার রুবেল আলীর স্ত্রী।
সম্প্রতি গড়ে উঠা ‘মহানন্দা স্পেশালাইজড হসপিটাল’ নামে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় তামিমা আক্তার (২২) নামে এক প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ উঠে। ঘটনার পর প্রায় এক ঘণ্টা ওই হাসপাতাল ঘেরাও করে রাখে রোগীর আত্মীয় স্বজন ও স্থানীয়রা।
এব্যাপারে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানায় অভিযোগ দিতে গিয়ে পুলিশ ও দালালদের খপ্পরে পড়েন মৃত তামিমা আক্তারের স্বামী রুবেল আলী। রুবেলকে নানাভাবে প্রভাবিত করা হয়। চাঁপাইনবাবগঞ্জের মহানন্দা স্পেশালাইজড হাসপাতালে ভূল চিকিৎসায় সিজারিয়ান প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ করেন পরিবারের সদস্যরা।
ঘটনার পর থেকে হাসপাতালে কাউকে পাওয়া যায়নি। আর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি অস্বীকার করেন। কিন্তু বিষয়টি মিমাংসার জন্য সদর থানায় নিয়ে আসেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পরিবারটিকে।
জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার নয়নশুকা মহল্লার রুবেল আলীর স্ত্রী তামিমা আক্তার। শনিবার (২৯ জুন) সকালে প্রসূতি তামিমা আক্তারের প্রসববেদনা উঠলে মহানন্দা স্পেশালাইড হাসাপাতালে নিয়ে আসে তার পরিবারের সদস্যরা। পরে দুপুর ১২ টার দিকে সিজারিয়ার প্রসূতি তামিমা আক্তারের সিজার করেন ডাঃ শওকত আক্তার জাহান বৃষ্টি। সিজারের পরে রোগীর পেট ফুলে যায় এবং প্রচুর জ্বর আসলে আবারো অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যান হাসপাতালের নার্সরা। এসময় প্রসূতি মৃত্যুর দিকে ঢলে পড়ে।
ডাঃ শওকত আক্তার জাহান বৃষ্টি প্রসূতির অবস্থা খারাপ দেখে বিকেলে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। পরিবারটি ডাক্তার ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কে বলেন, প্রসূতি মারা গেছেন, কিন্তু তারা না শুনে রাজশাহী পাঠিয়ে দেন। সদর উপজেলার হরিপুর এলাকা থেকে মৃতু তামিমা কে আবারো হাসপাতালটিতে নিয়া আসা হয়। পরিবারের অভিযোগ, রেফার্ডের পূর্বেই প্রসূতির মৃত্যু হয় ভুল চিকিৎসায়। মৃত্যুর আগে প্রসূতি মা তামিমা আক্তারকে দুইবার ওটিতে নিয়ে যান হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পরিবারসহ স্থানীয়দের অভিযোগ ভুল চিকিৎসায় প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে। ডাক্তারসহ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কঠোর শাস্তি দাবি করেন পরিবারসহ স্থানীয়রা।
প্রসূতি তামিমা আক্তারের মৃত্যুর পরে মহানন্দা স্পেশালাইজড হাসপাতালের ডাক্তার শওকত আক্তার জাহান বৃষ্টিসহ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে হাসপাতালে পাওয়া না গেলেও পরে থানায় মিমাংসার জন্য ব্যবস্থাপনা পরিচালক জহরুল ইসলামকে পাওয়া যায়। তবে ব্যবস্থাপনা পরিচালক জহুরুল ইসলাম ভুল চিকিৎসায় মারা যাওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করলেও মিমাংসার জন্য থানায় এসেছেন বলে স্বীকার করেন সাংবাদিকদের সামনে।
নিহত তামিমার পরিবার ও স্বজনদের অভিযোগ, মহানন্দা স্পেশালাইজড হসপিটালে ১০ টার দিকে সিজার অপারেশনের মাধ্যমে তিনি সন্তান প্রসব করেন। বিকেলে তার শারীরিক অবস্থা খারাপ হতে থাকে এবং একপর্যায়ে তার শরীর একেবারেই নিস্তেজ হয়ে যায়। বিষয়টি বুঝতে পেরে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ তড়িঘড়ি করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায় তামিমাকে। রাজশাহী নেয়ার পথেই মারা যায় তামিমা।
তবে, স্বজনদের অভিযোগ মহানন্দা স্পেশালাইজড হসপিটালে রোগি মারা যাওয়ার পর রেফার্ড করা হয়েছে এবং নানভাবে হয়রানী করা হয়েছে। পরে বিকেলে তামিমার স্বজনরা মহানন্দা স্পেশালাইজড হসপিটাল ঘেরাও করে। রোগীর স্বজনদের অভিযোগ ভুল চিকিৎসার কারণেই মারা গেছে তামিমা। এ সময় খবর পেয়ে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে এবং তামিমার মরদেহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।
তামিমার মামি শামীমা খাতুন, স্বজন মুকিবসহ অন্যান্য স্বজনরা জানান, ২৯ জুন শনিবার সকাল সাড়ে ৯ টার দিকে প্রসব ব্যথা নিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের শান্তি মোড়ে অবস্থিত মহানন্দা স্পেশালাইজড হসপিটালে ভর্তি হন তামিমা। ১০ টার দিকে সিজার অপারেশনের মাধ্যমে তিনি সন্তান প্রসব করেন। বিকেলে তার শারীরিক অবস্থা খারাপ হতে থাকে এবং একপর্যায়ে তার শরীর একেবারেই নিস্তেজ হয়ে যায়। বিষয়টি বুঝতে পেরে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ তড়িঘড়ি করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায় তামিমাকে। রাজশাহী নেয়ার পথেই মারা যায় তামিমা। এ সময় খবর পেয়ে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে এবং তামিমার মরদেহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।
তিনি বলেন, ভুল চিকিৎসা এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলায় তামিমা মারা গেছে। টাকা দিয়ে চিকিৎসা নিতে এসে রোগীকে মেরে ফেলেছে। এদের কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক। যেন আর কোন পরিবারের বুক খালি না হয়।
তিনি আরও বলেন, রোগীকে মেরে ফেলে প্রতারণা করে আবার রেফার্ডও করেন, এরা তো সেবা দিতে কাজ করে না। কাজ করে অর্থের জন্য। এরা মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে। এদের কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা হোক, বলে অঝোরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। অন্যদিকে, হাসপাতাল চত্বরে নিহত তামিমার পরিবারের সদস্যরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে প্রলাপ বকছিলেন।
এদিকে, থানায় অভিযোগ দিতে এসে নিহত তামিমার স্বামী রুবেল থানায় অভিযোগ জমা দেয়ার কথা বলে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে গেলে, তাৎক্ষনিক থানার দালাল, সদর মডেল থানার জনৈক পুলিশ কর্মকর্তা এবং ‘মহানন্দা স্পেশালাইজড হসপিটাল’ এর দালালরা রুবেলকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে চলে যায়। পরে বিষয়টি নিয়ে দেখা যাবে বলেও জানান দালাল চক্র। তবে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বিষয়টি নিয়ে ধামাচাপা দেয়ার কথা শোনা গেছে। বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে গেলে, সাংবাদিকদের সাথেও এলামেলো কথা বলেন দালালচক্র ও সদর থানা পুলিশ।
এব্যাপারে সিভিল সার্জন ডাঃ এসএম মাহমুদুর রশিদ বিটিসি নিউজকে জানান, সাংবাদিকদের কাছে বিষয়টি জেনেছি। ভূল চিকিৎসায় কোন প্রসূতি মৃত্যু কখনোই কাম্য নয়। বিষয়টি জেনে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, চিকিৎসকের ভুলে প্রসূতির মৃত্য হয়েছে কি-না তা তদন্ত করে বলা যাবে। আমরা বিষয়গুলো খতিয়ে দেখব। তবে, এব্যাপারে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মেহেদি হাসান কথা বলতে রাজি হননি।
তবে তিনি মুঠোফোনে বলেন, আইনের বাইরে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ঘটনার সঠিক তদন্ত করে জড়িতদের শাস্তির ব্যবস্থা হোক, এমনটায় দাবি নিহতের স্বজনদের ও এলাকাবাসীর। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.