পুরো টাকা যেন খরচ না হয়, তাই অর্ধেক থাকবে সঞ্চয়পত্রে : পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী

ছবি: সংগৃহীত

বিটিসি নিউজ ডেস্ক: আগামী ৩ দিনের মধ্যেই পাটকল শ্রমিকদের পাওনা টাকার পরিমাণ জানা যাবে বলে জানিয়েছেন পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী। চলতি সপ্তাহের মধ্যেই জুন মাসের বেতন দেয়া হবে বলেও জানান তিনি।

আজ শুক্রবার (০৩ জুলাই) ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান পাটমন্ত্রী।

তিনি বলেন, পুরোনো টেকনোলজি দিয়ে কাজ হচ্ছে না। অব্যাহত লোকসান হওয়ায় পিপিপিতে যাচ্ছে সরকার।

পাটমন্ত্রী আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী তাদের পুনর্বাসন করতে হবে বলেছেন। তিনি দায়িত্ব নিয়েছেন, একজন শ্রমিককেও অবহেলা করা হবে না। ২০১৫ সালের মজুরি কমিশনসহ সব ধরনের সুবিধা নিশ্চিত করা হবে শ্রমিকদের। এছাড়া শ্রমিকদের পুরো টাকা যেন খরচ না হয়ে যায় সে জন্যই তাদের অর্ধেক টাকা সঞ্চয়পত্র হিসেবে রাখা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

এর আগে, গতকাল বৃহস্পতিবার (০২ জুলাই) রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল শ্রমিকদের শতভাগ পাওনা পরিশোধের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গণভবনে এক সভায় তিনি এ নির্দেশ দেন বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব ড. আহমদ কায়কাউস। পাওনা ২ লক্ষ টাকা হলে পুরোটা দেয়া হবে নগদ। এর বেশী হলে অর্ধেক দেয়া হবে সঞ্চয়পত্রে, অর্ধেক নগদে।

প্রায় ২৫ হাজার পাটকল শ্রমিক অবসরকালীন সুবিধাসহ প্রায় ৫ হাজার কোটি পাবেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব ড. আহমদ কায়কাউস বলেন, আগামী তিন দিনের মধ্যে শ্রমিকদের তালিকা তৈরীর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

গত ৪৪ বছরে মধ্যে মাত্র চারবার লাভ করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলো। বেসরকারী খাতের পাটকলগুলো লাভ দেখাতে পারলেও বিজেএমসির আওতাধীন মিলগুলো বছরের পর বছর লোকসান করে যাচ্ছে। ৪৮ বছরে পাটকলগুলোর ক্ষতির পরিমাণ ১০ হাজার ৬৭৪ কোটি টাকা। এমন অবস্থায় অব্যাহত পাটকল শ্রমিকদের গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের মাধ্যমে বিদায় জানানোর ঘোষণা দেয় সরকার।

সরকারের এ সিদ্ধান্ত মেনে নিলেও বকেয়া পাওনা এককালীন পরিশোধের দাবী ওঠে শ্রমিকদের পক্ষ থেকে। এবার সরকার থেকে এলো সে ঘোষণাও। গণভবনে এক সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল শ্রমিকদের শতভাগ পাওনা পরিশোধের নির্দেশ দেন।

প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব ড. আহমদ কায়কাউস জানান, পাওনা বাবদ পাঁচ হাজার কোটি টাকা বাজেট থেকে দেয়া হবে।

বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, কর্মরত ও অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিকের পাওনা ২ লক্ষ টাকা হলে পুরোটাই নগদে পরিশোধ করা হবে। পাওনা এর বেশী হলে অর্ধেক নগদে বাকীটা তিনমাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে পরিশোধ করা হবে। নগদ পরিশোধ ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে এবং সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে পাওনা সরাসরি সংশ্লিষ্ট শ্রমিককে নির্ধারিত ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পরিশোধ করা হবে।

প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব ড. আহমদ কায়কাউস জানান, পাটকলগুলোর শ্রমিক-কর্মচারীদের পাওনা বুঝিয়ে দিতে সরকার কয়েকটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ২ লক্ষ টাকার কম যাদের পাওনা হবে, তাদের পুরো টাকা তাৎক্ষণিকভাবে নগদ দেয়া হবে।

২ লক্ষের বেশী পাওনা হলে ৫০ শতাংশ টাকা তাৎক্ষণিকভাবে নগদ দেয়া হবে। বাকি ৫০ শতাংশ টাকা তাদের দেয়া হবে তিন মাস মেয়াদি সঞ্চয়পত্রের আকারে।

তার মানে হচ্ছে, এই সঞ্চয়পত্র থেকে তিনি ইন্টারেস্ট পাবেন। আমরা একটা হিসেব করে দেখেছি, যদি গড়ে ১১ শতাংশ হারে মুনাফা দেওয়া হয়, তাহলে তিন মাসে গড়ে ১৯ হাজার ৩২০ টাকা থেকে ৭৪ হাজার ৫২০ টাকা পর্যন্ত মুনাফা পেতে পারেন তারা, বলেন আহমদ কায়কাউস।

তিনি বলেন, প্রকৃত অর্থে একজন শ্রমিক যা এখন নগদে পেত তার চেয়ে বেশী পাবে যদি আমি মাসিক মুনাফাটা হিসাব করি। নিম্নআয়ের শ্রমিক ভাই-বোনদের জীবনের নিশ্চয়তার জন্যই প্রধানমন্ত্রী এটি করেছেন।

মুখ্য সচিব বলেন, তাদের হিসাব অনুযায়ী, চাকরির অবসায়নের মাধ্যমে পাটকল শ্রমিকরা গড়ে ১৩.৮৬ লক্ষ টাকা পাবেন। কারও কারও ক্ষেত্রে তা ৫৪ লক্ষ টাকাও হবে।

গত ২৫ মে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বৈঠকের পর শুরু হয়েছে স্থায়ী শ্রমিকদের বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর প্রক্রিয়া। রাষ্ট্রায়ত্ত ২৫টি পাটকলের স্থায়ী শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ২৫ হাজার, চুক্তির ভিত্তিতে কর্মরত আরও প্রায় ২৬ হাজার শ্রমিক। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.