হুমায়ূন আহমেদ পুকুর ঘাটে বসে লিখেছিলেন “কইন্যার চিরল বিরল চুল”: শাওন

 

বিটিসি নিউজ ডেস্ক: “কইন্যার চিরল বিরল চুল/ তাহার কেশে জবা ফুল— সেই ফুল পানিতে ফেইলা কইন্যা করলো ভুল! একটা ছিল সোনার কইন্যা মেঘবরণ কেশ…’। আমার দাদা বাড়ির পুকুর ঘাটে বসে একটা অংক খাতার রুলটানা কাগজে আমাকে উদ্দেশ্য করে এই গান লিখেছিলেন হুমায়ূন।”

নিজের ফেসবুকে এই তথ্য জানালেন হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন। গানটির সুর করেছেন মাকসুদ জামিল মিন্টু। হুমায়ূন আহমেদ পরিচালিত ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ ছবিতে গানটি ব্যবহার করা হয়েছে। গানটিতে কণ্ঠ দিয়েছেন সুবীর নন্দী।

 

 

মেহের আফরোজ শাওন তাঁর সাম্প্রতিক হেয়ারস্টাইলের দুটি ছবি নিজের ফেসবুকে শেয়ার করে লিখেছেন, সেই সময়টায় আমার লম্বা কোঁকড়ানো চুল ছিল। আমার মা আমার চুলের অসহ্য সব যত্ন করতেন। জোর করে তেল দিয়ে দেয়া, টকদই, ডিম (এই ধরনের খাদ্যদ্রব্য টাইপের আরও অনেক কিছু) ভর্তা বানিয়ে উৎকট গন্ধওয়ালা এক বস্তু তৈরী হতো যা মাথায় দিতে দিতে ধারাবাহিক ‘বকাবকি’র সেশন চালু করতেন আম্মু। বলতেন- ‘এখন তো বুঝো না। বুঝবা বুঝবা। যখন পায়ে ধরলেও এগুলো করে দেয়ার কাউকে পাবা না তখন বুঝবা’।

আমার বান্ধবীরা নানান বৈচিত্র্য কেশ কর্তন করতেন আর আমি শুকনো মুখে লোভী লোভী দৃষ্টিতে তাদের পানে চেয়ে ভাবিতাম- দেখিস, একদিন আমিও।

বাসায় মিনমিন করে দুই একবার ছোট করে চুল কাটার শখের কথা বললেই আম্মু ঝাঁঝালো গলায় বলতো- ‘থাকার মধ্যে আছে তো ঐ চুলগুলোই। ওটাও কেটে ফেলতে চান। যা ইচ্ছা তাই করেন’।

অন্য কোনো বিষয় নিয়ে ‘যা ইচ্ছা তাই’ করলেও কেশ কর্তনের ক্ষেত্রে ‘যা ইচ্ছা তাই’ কোনোদিনই করতে পারিনি। অথচ আমার ছোট ভগ্নীদ্বয় কতবার কতো ঢঙে চুল কাটলেন।

 

 

বিবাহের পর ভাবলাম এই সুযোগ। এবার আমার ‘যা ইচ্ছা তাই’ করবো। ওমা, অনুমতি মেললো না। আমি স্বাধীন হলেও আমার কেশগুচ্ছের মালিকানা নাকি আমার না। হুমায়ূন দেখি আমার মা’এর চেয়ে এক ধাপ উপরে। কর্তন তো অতি দূরের ব্যাপার- আমার চুল বাঁধিবারও স্বাধীনতা নাই। মাঝে সিঁথি করে চুলখানা দুই পাশে দিলেই বলতেন ‘মিশরীয় রাজকন্যা’।

আমাকে নিয়ে নুহাশপল্লী যাবার সময় গাড়িতে সলিল চৌধুরীর গান দিয়ে দিতেন— ‘শোনো- কোনো একদিন/ আকাশ বাতাস জুড়ে রিমঝিম বরষায়/ দেখি তোমার চুলের মতো মেঘ সব ছড়ানো/ চাঁদের মুখের পাশে জড়ানো/ মন হারালো, হারালো, মন হারালো…’।

আচ্ছা কেশ নিয়ে এতো গান কবিতা থাকতে হবে কেন! চুলের সাথে মেঘের তুলনা করেন কেন কবিগণ। ‘সোনার রেখার মতো- সোনার রিঙের মতো/ রোদ যে মেঘের কোলে- তোমার গালের টোলে রোদ- তোমার চুলে যে রোদ— মেঘের মতো চুলে…’(জীবনানন্দ দাশ)।

আমার মেঘের মতো চুলগুলোকে ‘যা ইচ্ছা তাই’ করে ফেললাম।#

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.