পালমারের চার গোলের ম্যাচে পেনাল্টি নিয়ে মাঠেই বিবাদ চেলসির ফুটবলারদের

 

বিটিসি স্পোর্টস ডেস্ক: ছয় গোলের দারুণ জয়। একজনের গোল চারটি। অনেক দিন পর দুর্দান্ত ফুটবলের পসরা সাজিয়ে প্রায় নিখুঁত এক ম্যাচ। দুঃসময়ের প্রহরে এমন জয়ে স্বস্তিই পাওয়ার কথা চেলসি কোচ মাউরিসিও পচেত্তিনোর। কিন্তু সেই অবকাশ তিনি পেলেন না বিব্রতকর এক ঘটনায়। পেনাল্টি শট নেওয়ার জন্য মাঠে প্রকাশ্যেই দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়লেন তার ফুটবলাররা! জয়ের আনন্দের চেয়ে ম্যাচ শেষে ওই ঘটনার ক্ষোভ প্রকাশ নিয়েই বেশি ব্যস্ত থাকতে হলো কোচকে।
ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে সোমবার ঘরের মাঠে চেলসি ৬-০ গোলে উড়িয়ে দেয় এভারটনকে। দুর্দান্ত ফর্মে থাকা কোল পালমার একাই করেন চার গোল।
ম্যাচের ২৯ মিনিটের মধ্যে হ্যাটট্রিক পূরণ করে ফেলেন পালমার। ৪৪তম মিনিটে নিকোলাস জ্যাকসনের গোলে ৪-০ গোলের ব্যবধান দিয়ে বিরতিতে যায় চেলসি।
৬৪তম মিনিটে পেনাল্টি থেকে গোল করে ব্যবধান আরও বাড়ান পালমার। ২০ গোল নিয়ে এবারের লিগের সর্বোচ্চ গোল স্কোরারের তালিকায় শীর্ষে আর্লিং হলান্ডকে স্পর্শ করেন ২৪ বছর বয়সী ফুটবলার।
এই গোলটির আগেই সেই বিতর্কিত ঘটনা। এভারটনের বক্সে ননি মাদুয়েকে ফাউলের শিকার হলে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। বল হাতে নিয়ে পেনাল্টি নিতে উদ্যত হন মাদুয়েকে নিজেই। তখন এগিয়ে গিয়ে বল চান পালমার। দল থেকে পেনাল্টি নেওয়ার দায়িত্ব তারই।
কিন্তু পালমারকে বল দিচ্ছিলেন না মাদুয়েকে। পালমার বারবার বল চাওয়ার পরও তা নিজের কাছে রেখে দেন তিনি। পাশেই ছিলেন চেলসি অধিনায়ক কনর গ্যালাগার। তিনি বোঝানোর চেষ্টা করছিলেন মাদুয়েকেকে। এক পর্যায়ে তার কাছ থেকে বল একরকম কেড়েই নেন গ্যালাগার। বলটি পালমারের হাতে তুলে দেন তিনি।
এ সময় দূরে থেকে হুট করে ছুটে আসেন নিকোলাস জ্যাকসন। পালমারের হাত থেকে বল কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন তিনি। এ সময় তাকে বেশ জোরে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেন পালমার। 
মাদুয়েকে, জ্যাকসন ও পালমারের একটা ত্রিমুখী লড়াই জমে যায় পেনাল্টি নেওয়ার জন্য। গ্যালাগার তখন মাঝখানে দাঁড়িয়ে তাদেরকে থামানোর চেষ্টা করেন। জ্যাকসনকে সরিয়ে দেন তিনি। দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়ে যান তিনি মাদুয়েকের সামনে। এরপর স্পটে বল বসিয়ে ঠাণ্ডা মাথায় ম্যাচে নিজের চতুর্থ গোল করেন পালমার।
শেষ সময়ে আরও একটি গোল করে বিশাল জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে চেলসি। কিন্তু ম্যাচের পর মূল আলোচনা ওই পেনাল্টির ঘটনা ঘিরেই। চেলসি কোচ পচেত্তিনোও কোনো রাখঢাক না রেখে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করলেন।
“ফুটবলাররা ও স্টাফরা, সবাই জানে যে, পেনাল্টি নেওয়ার দায়িত্ব কোল পালমারের। আজকে যা হলো, এটা নিয়ে আমি এত হতাশ… এত বেশি বিরক্ত! আমাদের দলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার শৃঙ্খলা…।”
“আমরা সবাই একমত যে তারা (জ্যাকসন ও মাদুয়েকে) ভুল করেছে। এই ধরনের আচরণ আমরা দেখাতে পারি না। কোনোভাবেই না। মনে হচ্ছিল ওরা স্কুলের বাচ্চা। কনর গ্যালাগার খুব ভালোভাবে পরিস্থিতি সামলে নিয়েছে।”
এবারের মতো অবশ্য কোনো শাস্তি দেওয়া হচ্ছে না ঘটনায় জড়িত থাকা ফুটবলারদের। তবে ভবিষ্যতে এরকম হলে কোনো রকম ছাড় না দেওয়ার হুমকি দিয়ে রাখলেন কোচ।
“আমাদের কাজ হলো ওদেরকে দেখিয়ে দেওয়া যে, এটা ভুল। এতে তারা শিখতে পারবে। এবার কোনো শাস্তি হচ্ছে না, তবে আবার এরকম হলে তা মেনে নেওয়া হবে না। পালমার মাঠে থাকলে পেনাল্টি নেবে সে-ই।”
“ওরা (জ্যাকসন ও মাদুয়েকে) অভিজ্ঞ ফুটবলার নয়, দুজনই তরুণ।  তরুণ ফুটবলাররা কখনও কখনও দলের আগে নিজের কথা ভাবতে পারে। তবে ওদেরকে দ্রুত শিখতে হবে যে, পারফর্ম করতে হয় দলের জন্য। পরের মৌসুমে এই ব্যাপারগুলি আমরা অবশ্যই বিবেচনায় নেব। তারা যদি শিখতে না পারে, তাহলে আমরা কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হব।”
মাঠে এমন বাজে ঘটনাকে ক্লাবের ভাবমূর্তির জন্য তো বটেই, ফুটবল খেলাটির জন্যও ক্ষতিকর বলে মনে করেন পচেত্তিনো। ফুটবলারদের করণীয় আবারও কড়া ভাষায় মনে করিয়ে লেন কোচ।
“যে ছবিটি আমরা তুলে ধরেছি, প্রতিটি দেশের যারা দেখেছেন, সবার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। এই আচরণ মেনে নেওয়ার মতো নয় এবং অসাধারণ এক খেলাটিকে লজ্জায় ফেলার জন্য এটা নিয়ে কথা বলতে হবে আমাদের।”
“গোল করার তাড়না অবশ্যই থাকতে হবে ফুটবলারদের, তবে সেটা এরকম পরিস্থিতির জন্ম দিয়ে নয়। আমি এটা মেনে নেব না, কথা দিচ্ছি।” #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.