পাবনায় গণপূর্ত বিভাগে আ. লীগ নেতাদের অস্ত্রের মহড়া

ক্রাইম (পাবনারিপোর্টার: পাবনায় গণপূর্ত বিভাগের কার্যালয়ে অস্ত্র নিয়ে মহড়া দিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। পেশায় ঠিকাদার, আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারা কেন এমন কাণ্ড ঘটিয়েছেন সে বিষয়ে মুখ খুলছেন না গণপূর্ত বিভাগে কর্মরতরা। করেননি লিখিত অভিযোগও।
তবে, সম্প্রতি ঘটে যাওয়া এ ঘটনায় অফিসে কর্মরতদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। লিখিত অভিযোগ না পেলেও বিষয়টি তদন্ত করছে সরকারের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনী।
গণপূর্ত বিভাগ সূত্র জানায়, সম্প্রতি সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক হাজী ফারুক, পৌর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এ আর খান মামুন এবং জেলা যুবলীগের আহবায়ক কমিটির সদস্য শেখ লালুর নেতৃত্বে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ জনের একটি দল একাধিক আগ্নেয়াস্ত্র হাতে নিয়ে গণপূর্ত ভবনে আসেন। এ সময় হেলমেট পরিহিত অবস্থায় ছিলেন অনেকে।
সূত্রটি জানায়, আগতরা বিভিন্ন কক্ষে প্রবেশ করে নির্বাহী প্রকৌশলী আনোয়ারুল আজিমকে খুঁজছেন বলে জানান। এক পর্যায়ে তারা উপ সহকারী প্রকৌশলী মিজানুর রহমানের কক্ষে গিয়ে তার টেবিলে আগ্নেয়াস্ত্র রেখে অপেক্ষা করতে থাকেন। কিছুক্ষণ পর তারা বের হয়ে যান।
সূত্রটি আরও জানায়, ঘটনার পরে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন এসে অফিস থেকে ঘটনার সিটিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে নিয়ে গেছে। বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা ও কানাঘুষা শুরু হলে প্রভাবশালী ঠিকাদার ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের চাপে ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা হয়। কিন্তু সর্বশেষ গত সপ্তাহে জেলা আইন কমিটির বিষয়ক সভায় বিষয়টি উত্থাপন হলে বিষয়টি জানাজানি হয়ে যায়।
গণমাধ্যম কর্মীদের হাতে আসা সে সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, গত (০৬ জুন) দুপুর ১২ টা দুই মিনিটে গোলাপী পাঞ্জাবি ও টুপি পরিহিত আওয়ামী লীগ নেতা হাজী ফারুক আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে জামার হাতা গুটিয়ে পূর্ত ভবনে প্রবেশ করেন। তার পেছনে হাফ শার্ট ও মাস্ক পরিহিত অবস্থায় শর্টগান হাতে আসেন পৌর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এ আর খান মামুন ও সাদাকালো টি শার্ট পরিহিত যুবলীগ নেতা শেখ লালু। অস্ত্র নিয়েই তারা অফিসের বিভিন্ন কক্ষে প্রবেশ করে। বাইরে সশস্ত্র সহযোগীরা অপেক্ষায় করতে থাকে। ১২ টা ১২ মিনিটে তারা অস্ত্র প্রদর্শন করেই বের হয়ে চলে যায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পাবনা গণপূর্ত বিভাগে কর্মকতরা বিটিসি নিউজকে জানান, বিভিন্ন সময়ে স্থানীয় সন্ত্রাসীদের নিয়ে প্রভাব বলয় তৈরি করে উন্নয়ন কাজের কোটি কোটি টাকার টেন্ডার নিজেদের আয়ত্বে নিতে চেষ্টা করেন ক্ষমতাসীন দলের ঠিকাদাররা। এসব লোকজনের দাপটে অনেক পেশাদার ঠিকাদাররা গণপূর্ত বিভাগে টেন্ডার জমা দিতেই পারেন না। টেন্ডার নিয়ে তাদের নিজেদের মধ্যেই বিভিন্ন গ্রুপের দ্বন্দ্ব রয়েছে। পাশাপাশি অফিসের প্রকৌশলী ও কর্মরতদের নিজেদের পক্ষে নিতে তারা নানাভাবে চাপ প্রয়োগ করেন। কিছুদিন ধরে এসবের জেরে প্রভাব ও ক্ষমতার দাপট দেখাতে তারা বিভিন্ন সময় শো ডাউন, শক্তি প্রদর্শন শুরু করেছেন। তবে, অস্ত্র নিয়ে অফিসে মহড়ার ঘটনা নজিরবিহীন। আমরা চরম আতঙ্কে ভুগছি।
গণপূর্ত বিভাগ পাবনার উপ-সহকারী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, ঠিকাদারেরা আমার কক্ষে এসেছিলেন। আমার টেবিলে অস্ত্র রেখে নির্বাহী প্রকৌশলী স্যারের কাছে এসেছেন বলে জানান। খারাপ আচরণ বা গালাগালি করেননি।
বিল কিংবা টেন্ডার নিয়ে ক্ষোভ থেকেই তাদের এমন শোডাউন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, পাবনায় নতুন যোগদান করেছি, এসব বিষয়ে আমার জানা নেই।
এ বিষয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী আনোয়ারুল আজিম বলেন, ঘটনার সময় আমি অফিসের বাইরে ছিলাম। তবে, সিসিটিভি ফুটেজে অস্ত্র হাতে অনেকে এসেছেন দেখেছি। তারা আমাকে সরাসরি বা ফোনে কোনো হুমকি দেয়নি, কথাও হয়নি। তাই, আমরা লিখিত অভিযোগ করিনি।
অস্ত্র নিয়ে সদলবলে গণপূর্ত বিভাগে প্রবেশের কারণ জানতে চাইলে, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক হাজী ফারুক বলেন, আমি গণপূর্ত বিভাগের ঠিকাদার নই। বিল সংক্রান্ত বিষয়ে কথা বলতে মামুন ও লালু আমাকে সেখানে নিয়ে গিয়েছিল। তবে, এভাবে যাওয়া আমাদের উচিত হয়নি। পৌর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এ আর খান মামুন বিটিসি নিউজকে বলেন, নিজের নিরপত্তার স্বার্থে বৈধ লাইসেন্সকৃত অস্ত্রটি নিয়ে আমি ব্যবসায়িক কাজে ইটভাটায় যাচ্ছিলাম। যাবার পথে নির্বাহী প্রকৌশলী আনোয়ারুল আজিমের সাথে কথা বলতে গণপূর্ত বিভাগে যাই। কিন্তু তিনি না থাকায় আমরা ফিরে আসি। তাকে ভয় দেখানোর উদ্দেশে অস্ত্র প্রদর্শন করা হয়নি। প্রতিপক্ষ ঠিকাদাররা বিষয়টিকে অন্যদিকে নেয়ার চেষ্টা করছে।
একই ধরনের বক্তব্য দিয়ে যুবলীগ নেতা শেখ লালু বিটিসি নিউজকে বলেন, ভুলবশত আমরা অস্ত্র নিয়ে অফিসে ঢুকে পড়েছিলাম। এদিকে, গণপূর্ত ভবনে অস্ত্রের মহড়ার ঘটনায় শহরজুড়ে ব্যপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় সরকার বিভাগের এক প্রকৌশলী বিটিসি নিউজকে বলেন, আওয়ামী লীগের নাম ভাঙিয়ে পাবনায় চিহ্নিত কিছু ঠিকাদার সকল দপ্তরের টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করেন। জোর করে কাজ নেয়া, নিম্নমানের কাজ করাসহ এমন কোনও অনিয়ম নেই যে তারা করেন না। তাদের কথামতো না চললেই অকথ্য গালিগালাজ, মারধরের শিকার হন প্রকৌশলীরা।
তিনি বলেন, এর আগেও এই হাজী ফারুক প্রকৌশলীদের মারধর করেছে, জেলা হিসাব রক্ষণ অফিসের সুপারিনটেনডেন্টকে লাঞ্ছিত করেছে। সেসব ঘটনার বিচার না করে জোরপূর্বক আপসরফা করানো হয়েছে। এ কারণেই তাদের দুঃসাহস বেড়েছে।
পাবনা পুলিশ সুপার মুহিবুল হক খান বিটিসি নিউজকে বলেন, বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। অস্ত্র আইনের শর্ত ভঙ্গ হয়েছে কিনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এ বিষয়ে পাবনা জেলা প্রশাসক কবীর মাহমুদ বিটিসি নিউজকে বলেন, আমি ঘটনাটি শুনেছি। আইনশৃংখলা বাহিনী বিষয়টি তদন্ত করছে। তাদের সুপারিশ অনুযায়ী আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর ক্রাইম (পাবনারিপোর্টার মো: ময়নুল ইসলাম লাহিড়ী মিন্টু। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.