BTC News | বিটিসি নিউজ

আজ- মঙ্গলবার, ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৮ই পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ৩রা রজব, ১৪৪৭ হিজরি

আজ- ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

পাবনার বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ জুড়ে এখন শোভা পাচ্ছে হলুদ সরিষার ফুল 

পাবনার বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ জুড়ে এখন শোভা পাচ্ছে হলুদ সরিষার ফুল 

নিজস্ব প্রতিবেদক: শীত মৌসুমে পাবনার বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ জুড়ে এখন শোভা পাচ্ছে হলুদ সরিষা ফুল। হলুদের চাদরে মোড়ানো এমন অপরূপ দৃশ্য দেখতে ফসলের মাঠে ভির করছে প্রকৃতিপ্রেমীরা।

প্রতিবছরই শীতের এই সময়টাতে পাবনার প্রায় সকল উপজেলার ফসলের মাঠে সৌন্দর্যের এক নতুন বার্তা নিয়ে আসে হলুদ সরিষা ফুল। পাশাপাশি শীতের হিমেল হাওয়ায় দোল খাওয়া হলুদ ফুলে মৌমাছির গুঞ্জন তো আছেই। কাঁচা হলুদের মৌ মৌ গন্ধ আর মৌমাছির গুঞ্জনে মুখরিত হয়ে উঠে চারপাশ। প্রতিবছরই ভালো ফলন আর দাম পেয়ে খুশি কৃষকেরাও। পাশাপাশি গ্রামীণ অর্থনীতিতেও ফেলছে ইতিবাচক প্রভাব। আবহাওয়া অনূকূলে থাকলে এবছরও ভালো ফলনের আশা কৃষকের।

কৃষকরা বিটিসি নিউজকে জানান, বিগত বছরে ভালো ফলন ও দাম পাওয়ায়, এবছরেও অনেক জমিতে সরিষার আবাদ করা হয়েছে। চলতি মৌসুমে ফসলের ভালো ফলন আসতে দেখে হাসি ফুটছে কৃষকের মাঝে। আবহাওয়া অনূকূল ও কোন প্রকার রোগবালাই বা পোকা মাকড়ের আক্রমণ না হলে এবছরও ভালো ফলন আর দামের আশা কৃষকের।

কৃষিবিভাগ বিটিসি নিউজকে জানায়, চলতি মৌসুমে সরিষা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৯ হাজর ৮২ হেক্টর জমিতে, এখন পর্যন্ত আবাদ হয়েছে ৪২ হাজার ৫৪৫ হেক্টর। কৃষিবিভাগ জানায়, চলতি মৌসুমে কৃষক তার জমিতে উচ্চ-ফলনশীল বারি-১৪, বারি-১৫, বারি-১৮ ও বিনা-৯ জাতের সরিষার বেশি আবাদ করছে। এছাড়াও এবছরে সরিষার ক্ষেতে মৌবক্স স্থাপনের মাধ্যমে ১১০ মেট্রিকটন মধু উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানায় কৃষিবিভাগ। উৎপাদিত এসকল মধু স্থানীয় ক্রেতার পাশাপাশি বিভিন্ন কোম্পানির মাধ্যমে বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে বলে জানা যায়।

সরেজমিনে, চলনবিল অধ্যুষিত চাটমোহর ও ভাঙ্গুড়া উপজেলার দিলপাশার ইউনিয়নে গিয়ে দেখা যায়, যতদূর চোখ যায়, মাঠ জুড়ে শুধু হলুদ সরিষা ফুলের সমারোহ। শীতের সোনাঝরা রোদে ছড়িয়ে পড়েছে কাঁচা হলুদের মিষ্টি সুবাস। যেনো দিগন্ত বিস্তৃত বিলের বুক জুড়ে সবুজের মাঝে হলুদ আল্পনা আঁকা গালিচা। ফুলে ফুলে ছোটপাখি আর মৌমাছির গুঞ্জরণে মুখরিত উঠছে ফসলের মাঠ। পাবনার চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া, ফরিদপুর, নাটোরের সিংড়া, গুরুদাসপুর কিংবা সিরাজগঞ্জের তাড়াশ, উল্লাপাড়া সহ পুরো চলনবিল জুড়ে এখন নয়নাভিরাম হলুদ ফুলের সাজ। এমন নৈসর্গিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে দূর দূরান্ত থেকে ছুটে আসছেন, ভ্রমণ পিপাসুরা। চোখ জুড়ানো সৌন্দর্য্য জানান দিচ্ছে পর্যটনে অপার সম্ভাবনাময় রূপসী চলনবিলের কথা।

শুধু চলনবিলই নয়, পুরো পাবনা জেলা জুড়েই এখন হলুদ সরিষা ফুলে ভরে আছে কৃষকের মাঠ। ফুলের ফাঁকে উঁকি দিচ্ছে, সবুজ সরিষার শীষ। স্বল্প খরচ আর কম পরিশ্রমে লাভবান হওয়ায় খুশি চাষীরা।

কথা হয় চাটমোহর উপজেলার দরাপপুর গ্রামের কৃষক শরিফুল ইসলামের সাথে তিনি বিটিসি নিউজকে জানান, এবছর তিন বিঘা জমিতে সরিষা আবাদ করেছেন তিনি। তিনি জানান, উচ্চ ফলনশীল জাতের সরিষা বপনের মাত্র ৫৫-৬০ দিনের মধ্যে ফলন পাওয়া যায়। আমন ধান কেটে জমিতে বীজ ছড়িয়ে দিলেই সরিষা হয়ে যায়। লাগেনা কোন সেচ। এছাড়া সরিষা উত্তোলন করে বোরো আবাদের মৌসুমও ধরা যায়। এজন্য সরিষা আবাদে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন তারা। তিনি আরও জানান, সরিষা পাতা মাটিতে ঝরে জৈব সারের কাজ করে এবং জমির উর্বরতা বাড়ায়। সরিষা আবাদের পর জমিতে বোরো ধান আবাদে সারের পরিমান অনেকটা কম লাগে। ফলে ধান চাষের খরচ অনেকটা কমে যায়। এবং বাজারে ভালো দাম থাকায় কৃষক বেশ লাভবান হয়।

কথা হয় একই উপজেলার হান্ডিয়াল পাকপাড়া গ্রামের কৃষক আব্দুর রাহিমার সাথে তিনি বিটিসি নিউজকে জানান, এ মৌসুমে ৪ বিঘা জমিতে সরিষার আবাদ করেছেন তিনি। সার, বিজ, কীটনাশক ও সেচ সহ ১ বিঘা জমিতে তার খরচ হয়েছে প্রায় ৯ হাজার টাকা। তিনি জানান, ভালো ফলন হলে বিঘাপ্রতি ৬ থেকে ৭ মণ সরিষা হয়ে থাকে। এবং বাজারে ভালো দাম পেলে ১ মণ সরিষা ২৮’শ থেকে ৩ হাজার টাকা দরে বিক্রি করা যায় বলে জানান তিনি।

এদিকে, সরিষার পাশাপাশি ক্ষেতে মধু চাষেও আগ্রহ বাড়ছে মৌ চাষিদের। গুণগত মান ভালো হওয়ায় মিলছে ভালো দাম। দেশের চাহিদা মিটিয়ে উৎপাদিত মধু রপ্তানি হচ্ছে বিদেশেও। আধুনিক পদ্ধতিতে মৌবাক্সে পালিত মৌমাছির মাধ্যমে মধু সংগ্রহে গত কয়েক বছরে অনেকে হয়েছেন স্বাবলম্বী। এছাড়া মৌমাছির আনাগোনা ও পরাগায়নেও বৃদ্ধি পাচ্ছে ফলন।

ভাঙ্গুড়ার অষ্টমনীষা গ্রামে সাতক্ষীরার কালিগঙ্গা থেকে মধু সংগ্রহ করতে আসা নয়ন মৌচাষী বিটিসি নিউজকে জানান, সরিষার মৌসুমে আমরা ক্ষেতের পাশে বাক্স বসিয়ে মধু সংগ্রহ করি। এবং প্রতিকেজি মধু ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করি। সরিষা ফুলে মৌমাছি বসলে ফলন বাড়ে, তাই চাষিরাও আমাদের সহযোগিতা করে। এই মৌসুমে ৫৩ টি মৌবাক্সে থেকে ১ হাজার ৫৯০ কেজি মধু সংগ্রহের আশা করছেন বলে জানান তারা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর পাবনার উপ-পরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম প্রামাণিক বিটিসি নিউজকে বলেন, আমদানি নির্ভর ভোজ্যতেলে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ঔষধিগুণ সম্পন্ন সরিষা তেলের চাহিদা বাড়ায় গত কয়েক বছর ধরে বেশ লাভবান হচ্ছেন কৃষক। সেই সাথে তেলের আমদানি নির্ভরতা কমাতে এবং সরিষার চাষাবাদ বাড়াতে কৃষকদের মাঝে সব ধরনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। সামনের দিনে সরিষার চাষাবাদ আরও সম্প্রসারিত করা হবে। এতে কৃষকরা আরও লাভবান হবে।

তিনি আরো জানান, এর পাশাপাশি, সরিষা ক্ষেতে আধুনিক পদ্ধতিতে মৌবাক্সে পালিত মৌমাছির মাধ্যমে মধু সংগ্রহে অনেক মৌচাষি স্বাবলম্বী হচ্ছে কৃষি বিভাগের তালিকাভুক্ত খামারিসহ অনেক মৌ-খামারি এখন মাঠে মধু সংগ্রহে কাজ করছেন।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নিজস্ব প্রতিনিধি জহুরুল ইসলাম / পাবনা। #

এইরকম আরও খবর

সর্বশেষ খবর

ব্রেকিং নিউজ
বকশীগঞ্জ পৌরসভার জনগুরুত্বপূর্ণ দুই রাস্তার সংস্কার কাজের উদ্বোধন  নির্বাচন নিয়ে যড়যন্ত্রকারীদের সব কিছু ২৫ ডিসেম্বর বিনষ্ট হয়ে যাবে : মিলন বিএনপি নেতা বিরু মোল্লা হত্যা মামলার প্রধান আসামি জহুরুল গ্রেপ্তার; অস্ত্র-গুলি জব্দ প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে রাজশাহী থেকে ঢাকায় যাচ্ছেন ৫০ হাজারেরও বেশি নেতাকর্মী রুয়েটে বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে আরপিএল ক্রিকেট টুর্নামেন্টের উদ্বোধন নবীগঞ্জে মোবাইল কোর্টে কৃষিজমি থেকে মাটি কাটায় দেড় লাখ টাকা জরিমানা Huawei Hosts Tower Riggers’ Safety Awareness Program শুভ বড়দিন উপলক্ষে রাজশাহী মহানগর এলাকায় আতশবাজি, পটকা ও ফানুস নিষিদ্ধ সংক্রান্ত রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের গণবিজ্ঞপ্তি তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে জামালপুরে আলোচনা সভা ও মিছিল চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরকে পরিচ্ছন্ন ও পরিবেশবান্ধব নগরী গড়ে তোলা হবে-হারুনুর রশীদ