পানি সংকট কাটাতে রাজস্থানে বিশেষ ট্রেন

বিটিসি আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ভারতের রাজস্থানের যোধপুরে বছরের একটা সময়টাতে তাপমাত্রা প্রায়ই ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি থাকে। তবে এবার সেখানে একটু আগেই তীব্র গরম চলে এসেছে। ফলে বিশেষ ট্রেনে করে যোধপুরের বিভিন্ন এলাকায় পানি সরবরাহ শুরু হয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তন ভারতের প্রায় ১৪০ কোটি মানুষের জীবনকে অসহনীয় করে তুলেছে। প্রবল তাপপ্রবাহে পুড়ে অঙ্গার ভারতের মরুরাজ্য রাজস্থান। এখানে বরাবরই তাপমাত্রা ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি থাকে। এ অবস্থায় নেমে গেছে পানির স্তরও। যোধপুরের আনুমানিক ১৬ লাখ মানুষের হাহাকার শুধু পানির জন্যই। এ মানুষগুলোর পানির চাহিদা কিছুটা হলেও পূরণ করে একটি বিশেষ ট্রেন। গত তিন সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে এই জেলার লাখ লাখ মানুষের জন্য পানি নিয়ে আসছে ওয়াগন ট্রেন।
এটিই এখন জেলার মানুষের পানির একমাত্র উৎস। ট্রেনের অপেক্ষায় প্রতিদিনই বালতি, কলসি আর বিবিধ পাত্র হাতে দাঁড়িয়ে থাকেন স্থানীয় বাসিন্দারা। আর এদেরই একজন ১৩ বছর বয়সি কিশোর আফরোজ। পানির ট্রেন ধরতে প্রতিদিনই স্কুল মিস করতে হয় তাকে।
আফরোজ জানায়, এখানে সবসময় গরম থাকে। আমরা বরাবরই পানির জন্য সংগ্রাম করে আসছি। প্রতিদিন জড়ো হওয়া লোকেরা (অধিকাংশই নারী এবং শিশু) প্লাস্টিকের জার, ক্যান কিংবা ধাতব পাত্র নিয়ে অপেক্ষায় থাকে কখন ট্রেন আসবে। আর্মি-সবুজ রঙের ট্রেন থেকে পানি পেলে তবে তাদের ভূগর্ভস্থ ট্যাংকে নিয়ে ঢালেন। বাড়িতে পানি আছে কিনা, তা নিশ্চিত করার জন্য স্থানীয় পরিবারগুলোর শিশু-কিশোররা স্কুল এড়াতে বাধ্য হয়। আর এটাই তাদের জীবনের বড় আঘাত। তীব্র গরমে তারা খোলা আকাশের নিচে পানির জন্য দাঁড়িয়ে থাকে।
আফরোজের মা নূরজাহান বলেন, ‘আমি পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে এ কাজে সাহায্য করতে বলতে পারি না। কর্তা খাবারের জন্য এবং আমরা পানির জন্য সংগ্রাম ভাগাভাগি করছি।’ তিনি বলেন, ‘যদিও আমার সন্তানের শিক্ষার ওপর প্রভাব পড়ছে। কিন্তু কী করব? আমি নিজে এসব পাত্র বহন করতে পারি না। আমরা আসলে পরিস্থিতির শিকার।’
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে দক্ষিণ এশিয়ার লাখ লাখ মানুষ গ্রীষ্মের প্রথম দিকেই তাপপ্রবাহে পুড়ছে। উষ্ণতম মার্চের রেকর্ড হয়েছে ভারতে। সম্প্রতি আন্তঃসরকারি প্যানেল অন ক্লাইমেট চেইঞ্জ (আইপিসিসি) ল্যান্ডমার্ক রিপোর্টে বলেছে, ‘ভারত ও পাকিস্তানে দীর্ঘ সময়কালের জন্য আরো তীব্র তাপ প্রবাহে ভুগতে পারে বলে অনুমান করা হচ্ছে।’ তাপের শিকারে পরিণত হওয়া ভারতের কৃষি ব্যবস্থাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সরবরাহের শূন্যতা পূরণের অংশ হিসাবে শুক্রবার গম রফতানি নিষিদ্ধ করেছে ভারত। এ সিদ্ধান্ত তাৎক্ষণিক কার্যকর করার কথা বলা হয়েছে। স্থানীয় বাজারে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এদিকে তীব্র খরায় পুড়ছে ভারতের পশ্চিম গুজরাট রাজ্যে। রোববার (৮ মে) রাজ্যটিতে খরা সমস্যা তীব্র আকার ধারণ করেছে। পানির জন্য এ রাজ্যের মানুষের ২ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হচ্ছে। পানির স্বল্পতার কারণে স্থানীয়রা প্রচুর সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। স্থানীয় পানির উৎসগুলো শুকিয়ে গেছে। গেল মাসের শুরুতে রাজ্যের অনেক গ্রামকে ‘আংশিক খরাগ্রস্ত ’ বলে ঘোষণা করেছিল সরকার। ভারতের মোট জনসংখ্যার এক চতুর্থাংশ বা প্রায় ৩৩ কোটি মানুষ এই মুহুর্তে ভয়ঙ্কর খরাকবলিত বলে কেন্দ্রীয় সরকার সে দেশের সুপ্রিম কোর্টকে জানিয়েছে।
তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় শুধু মানুষ নয়, কষ্টে আছে পশু-পাখিসহ নানা প্রাণী। গুজরাটের বৃহত্তম শহর আহমেদাবাদের আশেপাশে কোনও প্রাকৃতিক জলের উৎস না থাকায় পশু-পাখিদের কষ্ট হচ্ছে বেশি। স্থানীয় পশু হাসপাতালের প্রোগ্রাম ডিরেক্টর মৌমিতা জানান, এখানে যেসব পশু-পাখি আসছে তাদের ৭০-৮০ শতাংশের মাঝে পানিশূন্য প্রকট।
এক সময় ভারতের ভৌগলিক আয়তনের অর্ধেকের বেশি অরণ্যাবৃত ছিল। কিন্তু নির্বিচারে গাছ কাটার ফলে এখন দেশটির ১৯ শতাংশ অরণ্যাবৃত, ফলে দ্রুতগতিতে বন উজাড়ের ফলে খরা সমস্যা দিন দিন প্রকট হচ্ছে।
আবহাওয়া অফিসের তথ্য মতে, ভারতে মার্চ মাসে বৃষ্টির ঘাটতি ছিল প্রায় ৭১ শতাংশ। ১১৪ বছরের মধ্যে চেয়ে কম বৃষ্টির রেকর্ড রয়েছে মাত্র দুইবার। সাধারণভাবে মার্চ মাসে দেশে গড়ে ৩০.৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়। কিন্তু এবার মার্চে ভারতে বৃষ্টি হয়েছে মাত্র ৮.৯ মিলিমিটার।
এর আগে ১৯০৮ সালের মার্চে ভারতে বৃষ্টি হয় ৮.৭ মিলিমিটার। ১৯০৯ সালের মার্চে বৃষ্টি হয় ৭.২ মিলিমিটার। এপ্রিল মাসে দিল্লির গড় তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ৪০.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। যা গত ৭২ বছরের মধ্যে দ্বিতীয় উষ্ণতম মাস। এর ফলে রাজধানীসহ সারা দেশে তীব্র দাবদাহ বয়ে যায়। সেই সঙ্গে দেখা দেয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিং বা ব্ল্যাকআউট। সবমিলিয়ে একটা হাঁসফাঁস অবস্থা। (সূত্র: ইন্ডিয়া টুডে)। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.