বেনাপোল (যশোর) প্রতিনিধি: একটানা ৪ দিনের বৃষ্টিতে বেনাপোল বন্দরের ওপেন ইয়ার্ড ও সেডের সামনে পানি জমেছে। এতে বন্দরের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। অপরিকল্পিত উন্নয়ন ও পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে দেশের সর্ববৃহৎ বেনাপোল স্থলবন্দরে।
বন্দরের বিভিন্ন ইয়ার্ড ও গুদামে হাঁটু সমান পানি জমে থাকায় পণ্য খালাস ও পরিবহন কার্যক্রমে বিপর্যয় নেমে এসেছে। এ ঘটনায় কয়েকটি প্রবেশগেট সাময়িক ভাবে বন্ধ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। বন্দরের ইয়ার্ডগুলো জলাশয় মনে হলেও আসলে সেখানে ট্রাক পার্কিং ও আমদানি পণ্য খালাস হয়।
বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে রেল কর্তৃপক্ষ বন্দরের পাশ দিয়ে নতুন রেল রাস্তা নির্মাণ করতে কালভার্ট না রেখে মাটি ভরাট করায় পানি নিষ্কাশন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। যে কারণে বৃষ্টির পানিতে বন্দর জুড়ে সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতা।
বেনাপোল বন্দরের ট্রান্সপোর্ট মালিক সমিতির সভাপতি আতিকুজ্জামান সনি বিটিসি নিউজকে জানান, একটু ভারী বৃষ্টিপাত হলেই বন্দর এলাকার বিভিন্ন স্থানে সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। ফলে পণ্যবোঝাই ট্রাক চলাচলে বিঘ্ন ঘটে এবং নিরাপত্তাকর্মীদের চলাফেরাও দুরূহ হয়ে পড়ে। এমনকি কোথাও কোথাও কেমিক্যাল মিশ্রিত পানি জমে থাকায় শ্রমিক মধ্যে চর্মরোগসহ স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে।
বেনাপোল বন্দরের শ্রমিক নেতা মাকসুদুর রহমান রিন্টু বিটিসি নিউজকে জানান প্রতিদিন হাঁটুপানির মধ্য দিয়ে কাজ করতে গিয়ে চুলকানি ও নানা অসুস্থ্যতায় পড়তে হচ্ছে শ্রমিকদের। বন্দর সড়কের উচ্চতার চেয়ে গুদামগুলো নিচু হওয়ায় পানির স্বাভাবিক নিষ্কাশন সম্ভব হয় না। ফলে পণ্যের গুণগত মান নষ্ট হচ্ছে এবং চলাফেরায় ভোগান্তি বাড়ছে। বন্দরে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্ত কেমিক্যাল সামগ্রী এখনো পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে যা বৃষ্টির পানিতে মিশে শ্রমিকরা চর্মরোগে আক্রান্ত করছে। এ নিয়ে পণ্যবোঝাই ট্রাকের চালকেরাও একই অভিযোগ করেছেন।
সি এন্ড এফ এজেন্ট ব্যবসায়ী মতিয়ার রহমান বিটিসি নিউজকে জানান, অপরিকল্পিত উন্নয়ন ও পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এ নিয়ে ব্যবসায়ীরা একাধিকবার বন্দরের কাছে অভিযোগ করলেও কার্যকর কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি।
আমদানি ও রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি মহসিন মিলন বিটিসি নিউজকে বলেন, দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর হলো বেনাপোল। সরকার এই বন্দর থেকে বছরে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করে থাকে। এত বড় বাণিজ্যিক স্থাপনায় বছরের পর বছর এই দুর্দশা চললেও সরকার কোন পদক্ষেপ না নেওয়া দুর্ভাগ্যজনক। বৃষ্টির পানি পণ্যাগারে ঢুকে পড়লে লোকসানের শিকার হতে হয় ব্যবসায়ীদের।
বেনাপোল বন্দরের ব্যবসায়ী বকুল মাহবুব বিটিসি নিউজকে বলেন, বন্দরে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় চলাচলে মারাত্মক অসুবিধা হচ্ছে। পণ্যাগারে যেকোনো সময় পানি ঢুকে পড়তে পারে। এই বন্দরে বছরে ২২ থেকে ২৪ লাখ টন পণ্য আমদানি হয়। এসব পণ্য সংরক্ষণে রয়েছে ৩৩টি শেড ও তিনটি ওপেন ইয়ার্ড, একটি ট্রান্সশিপমেন্ট ইয়ার্ড। কিন্তু অধিকাংশ অবকাঠামোই দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ছাড়া তৈরি হওয়ায় বৃষ্টির সময় জলাবদ্ধতা তৈরি হচ্ছে। অথচ এই বন্দর থেকে বছরে ১০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায় হয়।
বেনাপোল বন্দরের ডেপুটি পরিচালক মামুন কবীর তরফদার বিটিসি নিউজকে জানান আমরা দ্রুত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করছি। সহযোগিতা চেয়েছি বেনাপোল পৌরসভাকে। আগামী রোববারে মধ্যে বন্দরে জমে থানা পানি আর থাকবে না।
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.