পানি কমলেও বেড়েছে ভাঙন, দুর্ভোগে তিস্তা ও ধরলা পাড়ের মানুষ 

লালমনিরহাট প্রতিনিধি: তিস্তা নদীর পানি কমলেও দুর্ভোগে রয়েছেন লালমনিরহাটের নদী পাড়ের বানভাসি মানুষ। নদী ভাঙনে দিশেহারা হয়ে পড়েছে তিস্তা ও ধরলা নদীতীরবর্তী মানুষগুলো। প্রতিদিনই নদীগর্ভে হারিয়ে যাচ্ছে আবাদি জমি, ঘর-বাড়ি ও বসতভিটা।
কৃষক পরিবারগুলো হারাচ্ছে জীবিকা, ঘরবাড়ি এবং বেঁচে থাকার শেষ অবলম্বনটুকুও। গত ১০ বছরে তিস্তা ও ধরলার কড়াল গ্রাসে হাজার হাজার পরিবার আবাদি জমি ও বসতভিটা হারিয়ে ভূমিহীন হয়ে চরম দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে আছেন। ভাঙন আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটছে তিস্তা-ধরলাপাড়ের মানুষের।
চলতি বন্যায় জেলার পাঁচটি উপজেলার প্রায় পাঁচ হাজার পরিবার পানিবন্দী ছিল। অনেকেই বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের উপর চুলা জ্বালিয়ে রান্না করছেন। কেউ কেউ রাস্তায় একচালা ঘর তুলে গবাদি পশু নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন।
গত মঙ্গলবার মধ্যরাতে হঠাৎ করে তিস্তার পানি বিপদসীমার সাত সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হতে শুরু করে। এতে তীরবর্তী এলাকায় আকস্মিক বন্যা দেখা দেয়। পানিতে তলিয়ে যায় হাতীবান্ধা, কালীগঞ্জ, আদিতমারী ও সদর উপজেলার অন্তত ১৫টি গ্রামের প্রায় ১০ হাজার মানুষ। বুধবার সকাল থেকে পানি কিছুটা কমলেও বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত তা বিপদসীমার ১১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। শনিবার বিপদসীমার ৩৫ সেমি নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট খুলে দেওয়া হয়।বন্যার ফলে অনেক ঘরবাড়িতে পানি উঠে গেছে। রাস্তা ভেঙে গেছে, পশু-পাখি নিয়ে বিপাকে পড়েছেন অনেকে।
এছাড়া পানিতে তলিয়ে গেছিল জেলার ১২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। কোনো কোনো স্কুলের শ্রেণিকক্ষেও পানি ঢুকেছে। এ কারণে লালমনিরহাট সদরের ৬টি ও আদিতমারীর ৬টি স্কুলে পাঠদান বন্ধ ছিল।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার লিটন দাস বলেন, শিশুদের নিরাপত্তার জন্য এসব বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ রাখা হয়েছে। রবিবার পাঠদান যথারীতি চালু রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
মহিষখোঁচা ইউনিয়নের কুটিরপাড় গ্রামে তিস্তার তীরে বসে কূলভাঙার দৃশ্য অপলক দৃষ্টিতে দেখছিলেন কৃষক আকবর আলী (৬৫)। তার চোখে-মুখে পৈতৃক একখণ্ড জমি হারানোর শঙ্কা। তিস্তা নদীর পানিও কমছে, ভাঙনও বাড়ছে। বালা পাড়া গ্রামের ষাটোর্ধ্ব কৃষক মনছুর আলী বলেন, ভিটেমাটি গিলেছে তিস্তা। সব হারিয়ে পরিবার নিয়ে আজ নিঃস্ব আমি।
তিস্তাপাড়ের অলিমা খাতুন (৪৫) আহাজারি করে বিটিসি নিউজকে বলেন, ‘হামাক বাঁচান ব্যাহে, হামার শোগ শ্যাষ। সব নদীত ভাঙিয়া গেইছে ব্যাহে। হামাক বাঁচান। হামরা কই যাম কী খামো, শোগ নদী ভাঙি নিয়া যাবার লাগছে।
তিস্তাপাড়ের অপর এক ভুক্তভোগী তসর উদ্দিন (৫০) বলেন, ‘নদীর মাঝখানে আমার বাড়ি ছিল। বাড়ি ভাঙতে ভাঙতে আজ যেখানে বাড়ি দেখতেছেন তার পাশ পর্যন্ত ভাঙন আসছে। আমার বাড়িটা যেকোনো সময় ভাঙতে পারে। নদীর কিনারত (কাছাকাছি) আসছে ভাঙন। সরকার শুধু হামাক বুঝ দেয়।’
তিস্তাপাড়ের আবুল হোসেন বিটিসি নিউজকে বলেন, ‘আমরা রিলিপ-টিলিপ কিছু চাই না বাহে, বালুর বাঁধ থাকি শুরু করি নদীর পাশে যদি বস্তা দিত তাহলে আর নদী ভাঙত না।
লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শুনীল কুমার বিটিসি নিউজকে জানান, জেলায় তিস্তা ও ধরলা নদীতে এরকম প্রায় ২৫টি এলাকায় কমবেশি ভাঙন দেখা দিযেছে। ভাঙন অব্যাহত থাকায় সেখানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়নে ভাঙন প্রতিরোধে কিছু কিছু জায়গায় কাজ চলমান রয়েছে। তিনি আরো বলেন, ‘উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। বরাদ্দ পেলেই জিও ব্যাগ ফেলার কাজ শুরু করা হবে।’
জেলা প্রশাসক এইচএম রকিব হায়দার বিটিসি নিউজকে জানান, বন্যার্তদের সহায়তায় জেলা প্রশাসন কাজ করছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে আশ্রয়কেন্দ্র। এখন পর্যন্ত পাঁচ শতাধিক পরিবারকে ৩০ কেজি করে চাল, ডাল, চিড়া ও শুকনো খাবার দেওয়া হয়েছে। তালিকা অনুযায়ী ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত থাকবে।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর লালমনিরহাট প্রতিনিধি হাসানুজ্জামান হাসান। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.