পানিচুক্তি নিয়ে ‘মাইনকার চিপায়’ ভারত!

বিটিসি আন্তর্জাতিক ডেস্ক: গত ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার জেরে ১৯ দিনব্যাপী ভয়াবহ এক সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে ভারত-পাকিস্তান। এই মুহূর্তে পরিস্থিতি ঠান্ডা থাকলেও, সংঘাতের রেশ রয়ে গেছে এখনও। তলানিতে নেমে দুই দেশের সম্পর্ক ঠিক হওয়ার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না কোনও। সংঘাতের শুরুতে স্থগিত করে দেওয়া সিন্ধু পানি চুক্তি (আইডব্লিউটি) আর কখনও পুনর্বহাল করবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার।
তবে, বিষয়টা যতটা সরল মনে করা হচ্ছে, ততটা নয়। ভারতের কাছে বর্তমানে যে অবকাঠামো আছে, তা দিয়ে পাকিস্তানে নদীর প্রবাহ সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করা সম্ভব নয় তাদের পক্ষে।
অবশ্য, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারত যদি সিন্ধু অববাহিকার নদীর প্রবাহ বন্ধ করতে সক্ষম হয়, তাহলে সামান্য পরিবর্তন বা অবরোধও পাকিস্তানের বড় ক্ষতি করতে পারে। আর তেমনটা হলে দুই দেশের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের ক্ষেত্র তৈরি হতে পারে বলেও সতর্ক করে দিয়েছেন তারা। একই কথা বারবার বলে আসছে পাকিস্তানও। দেশটির প্রধানমন্ত্রী ও সেনাপ্রধান থেকে শুরু করে অনেক নেতাই হুঁশিয়ার করেছেন, পানি প্রবাহের যেকোনো পরিবর্তনকে যুদ্ধ হিসেবে বিবেচনা করবে পাকিস্তান।
সম্প্রতি টাইমস অব ইন্ডিয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেন, সিন্ধুর পানিবণ্টন চুক্তি আর কখনই পুনর্বহাল হবে না। পাকিস্তানে যাওয়া পানি আমরা খালের মাধ্যমে বরং রাজস্থানে পাঠাব। অন্যায্যভাবে এতদিন অনেক পানি পেয়েছে পাকিস্তান, এখন তাদেরকে বঞ্চিত রাখা হবে।
১৯৬০ সালের সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি অনুযায়ী ভারত থেকে উৎপন্ন তিনটি বড় নদীর পানি ব্যবহারের অধিকার পেয়েছিল পাকিস্তান। এতে পাকিস্তানের ৮০ শতাংশ কৃষিজমি সরাসরি উপকৃত হয়ে আসছিল।
বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় ১৯৬০ সালে স্বাক্ষরিত ৮৫ পৃষ্ঠার এই পানিবণ্টন চুক্তি (আইডব্লিউটি) বিশ্বের বেশিরভাগ পানিচুক্তি থেকে আলাদা, যেখানে মোট প্রবাহের পরিমাণ অনুসারে পানি ভাগাভাগি করা হয়। পূর্ব দিকে ভারতের তিনটি এবং পশ্চিমে পাকিস্তানের তিনটি নদীকে আলাদা করেছে এই চুক্তি।
লন্ডনের কিংস কলেজের ভূগোল বিষয়ের সিনিয়র প্রভাষক মাজেদ আখতার আল জাজিরাকে বলেন, পাকিস্তান ও ভারতের এ পানি ভাগাভাগি কাশ্মীর নিয়ে তাদের বিরোধের সঙ্গে যুক্ত। কাশ্মীরের আঞ্চলিক নিয়ন্ত্রণ মানে সিন্ধু নদীর জলের নিয়ন্ত্রণ; যা পাকিস্তান এবং ভারতের কৃষিপ্রধান অর্থনীতির জন্য জলের প্রধান উৎস।
এদিকে আন্তর্জাতিক চাপ ও যুদ্ধ এড়ানোর জন্য ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার যদি নিজেদের অবস্থান থেকে সরে আসে এবং সিন্ধু পানি চুক্তি পুনর্বহাল করে, তাহলেও সমস্যা থেকে মুক্তি মিলছে না দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও তার প্রশাসনের। বিশ্লেষকরা বলছেন, এমনিতেই অপারেশন সিঁদুরের সফলতা নিয়ে মোদিকে বিরোধীদল কংগ্রেসের প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হচ্ছে নিয়মিত; তার উপর সিন্ধু পানি চুক্তি পুনর্বহাল করলে তীব্র কটাক্ষের তীরে যে বিদ্ধ হতে হবে মোদি এবং তার সরকারকে, সেটা সহজেই অনুমেয়। #

 

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.