‘পাকিস্তানের রাজনীতি থেকে জেনারেলদের বিদায় নিতেই হবে’

বিটিসি আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ইমরান খান এক ভয়ানক রাজনীতিক। দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়ার স্বপ্ন দেখিয়ে সেনাবাহিনীর কারসাজিতে জিতে এসে প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। গদিনশীন হয়েই তিনি নিজে দুর্নীতিবাজ লোকজনকে মন্ত্রী বানান। আর দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বিরোধী রাজনীতিকদের হয় জেলে ঢোকান; অথবা দেশ ছাড়া করেন। এরপরও ক্ষমতায় বসে এমন কিছু করে দেখাতে পারেননি, যার জন্য বাহবা পেতে পারেন তিনি।
ব্রিটিশ সাময়িকী ইকনোমিস্ট তাদের সম্পাদকীয় নিবন্ধে বলছে, এহেন একজন ব্যর্থ প্রধানমন্ত্রীকে সংখ্যার খেলায় আইনসভায় হারিয়ে দিয়ে আসলে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ইমরানকে জনপ্রিয় নায়ক বানিয়ে দিয়েছে।
পাকিস্তানের জন্য ট্র্যাজিক ঘটনা হলো, ওই দেশটির কোনো শাসক তাঁর পূর্বসুরীর ভুল থেকে শিক্ষা নেননি। হয়তো নিতে পারেননি। কারণ, ২৪ কোটি মানুষের দেশটির আসল ক্ষমতা তো অহংকারী জেনারেলদের হাতে। তাঁরা কোনো প্রধানমন্ত্রীকে মেয়াদ পূরণ করতে দেননি।
পরিস্থিতি যে জায়গায় গেছে, তাতে এখন যদি পাকিস্তানে নির্বাচন হয় তাহলে ইমরানের দলই জিতবে। তখন আবার সেনাবাহিনীকে হস্তক্ষেপ করতে হবে। তাই সবচেয়ে ভালো পথ হলো, ইমরানসহ তাঁর দলের নেতাদের নামে দেশদ্রোহিতার, সেনাবাহিনীর সাথে সংঘাতে লিপ্ত হওয়াসহ যত ধরনের মামলা দেওয়া যায়, তা দেওয়া। ইমরান খান এখন কার্যত গৃহবন্দী। এভাবে দলটাকে গুঁড়িয়ে দিতে পারলে সামনের নির্বাচনে তাদের জয়ের আশা প্রায় শূন্য।
মজার বিষয় হলো, এই যে এতসব সিদ্ধান্ত, সবই নিচ্ছেন শাহবাজ শরিফ মন্ত্রিসভার সদস্যরা। আসলে কি তাই? ইমরান ও তাঁর দলকে গুঁড়িয়ে দেওয়ার আদেশ তো এসেছে প্রভাবশালী জেনারেলদের কাছ থেকে। ইকোনমিস্ট এমনটাই লিখেছে।
পত্রিকাটির সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, ১৯৯০ সালে পাকিস্তান ও ভারতের মানুষের গড় আয় ছিল সমান। বর্তমানে একজন ভারতীয়র গড় আয় একজন পাকিস্তানির তুলনায় ৫০ শতাংশ বেশি। ভারত যেখানে বিশ্বে পরাশক্তি হওয়ার স্বপ্ন দেখছে, সেখানে পরমাণু শক্তিধর দেশ হওয়া সত্ত্বেও পাকিস্তান ধুঁকছে। শাসন ব্যবস্থায় চরম অরাজকতা, অস্থিতিশীলতা, সহিংসতা-সব মিলিয়ে দেশটিকে এই পর্যায়ে এনে ফেলেছে।
ইকোনমিস্ট বলছে, ২৪ কোটি জনসংখ্যা নিয়ে দেশটির এই লেজেগোবরে অবস্থা। আগামী ২০৫০ সালে এই সংখ্যা গিয়ে দাঁড়াবে ৩৪ কোটিতে। তাহলে তখন কী হবে? পত্রিকাটি বলছে, এই অরাজক পরিস্থিতি এড়ানোর একটিই পথ। তা হলো জেনারেলদের এখন তো বটেই, চিরতরে রাজনীতি থেকে বিদায় নিতে হবে।
পাকিস্তানের সামনে সুশাসন প্রতিষ্ঠার আর কোনো পথ খোলা নেই। আর এটার এখনই সময়। নির্বাচনও যথাসময়ে হওয়া উচিত এবং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে ইমরান ও তাঁর দলকে অংশ নেওয়ার সুযোগ দিতে হবে। তাদের কারা শাসন করবে- এটা ঠিক করার অধিকার একমাত্র পাকিস্তানের ভোটারদের। তারা হয়তো টার্কি-প্রিয় জেনারেলদের চেয়ে খারাপ কাউকে বেছে নিতে পারে। পাকিস্তানের এই স্বঘোষিত অভিভাবকেরা দেশের জন্য তেমন কিছুই করেননি, বরং দেশটিকে দুর্বল ও অসহায় অবস্থার মধ্যে ফেলে দিয়েছেন। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.