পশ্চিম তীরে আরো বসতি নির্মাণের অনুমতি দিচ্ছে ইসরায়েল

বিটিসি আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ইসরায়েলের জাতীয়তাবাদী-ধর্মীয় সরকার অধিকৃত পশ্চিম তীরে হাজার হাজার ভবন নির্মাণের অনুমতি দেওয়ার পরিকল্পনা পেশ করেছে। পশ্চিম তীরে বসতি সম্প্রসারণ না করতে যুক্তরাষ্ট্রের চাপ থাকার পরও দেশটি এ পদক্ষেপ নিয়েছে। একে ফিলিস্তিনের সঙ্গে শান্তির পথে বাধা হিসেবেই দেখছে ওয়াশিংটন। এদিকে পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি অভিযানে পাঁচ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।
জানা গেছে, ইসরায়েলের সুপ্রিম প্ল্যানিং কাউন্সিলের বৈঠক হবে আগামী সপ্তাহে। এই কাউন্সিলের আলোচ্যসূচিতেই রাখা হয়েছে পশ্চিম তীরের বিভিন্ন স্থানে ৪ হাজার ৫৬০টি হাউজিং ইউনিট স্থাপনের অনুমোদন দেওয়ার পরিকল্পনা। যদিও চূড়ান্ত অনুমোদন পাওয়ার পথে আছে ১ হাজার ৩৩২টি হাউজিং ইউনিট।
ইসরায়েলের অর্থমন্ত্রী বলেছেন, আমরা বসতি স্থাপন করে যাব এবং ঐ ভূখণ্ডে ইসরায়েলের প্রভাব-প্রতিপত্তি বাড়াব। ১৯৭৬ সালের মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধে ইসরায়েলের দখল করে নেওয়া পশ্চিম তীরে বসতি স্থাপনকে বেশির ভাগ দেশই অবৈধ বলে বিবেচনা করে। ইসরায়েল-ফিলিস্তিনি সংঘাতের অন্যতম মূল কারণও হচ্ছে, সেখানে ইহুদি বসতি সম্প্রসারণ।
ফিলিস্তিনিরা পশ্চিম তীর এবং গাজা উপত্যকা নিয়ে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র গড়তে চায়, যার রাজধানী হবে পূর্ব জেরুজালেম। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগে শুরু হওয়া ইসরায়েল-ফিলিস্তিন শান্তি আলোচনা সেই ২০১৪ সাল থেকে থমকে আছে। এ অবস্থায় ওয়াশিংটন বলছে, এ ঘটনায় তারা ভীষণ উদ্বিগ্ন। শান্তি স্থাপনে আলোচনার তাগিদ দিয়েছে জো বাইডেন প্রশাসন।
মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, সর্বশেষ এ পদক্ষেপে যুক্তরাষ্ট্র গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। এ ঘটনাকে ওয়াশিংটন শান্তির পথে বাধা হিসেবে দেখে। বসতি সম্প্রসারণ বন্ধ করার জন্য মার্কিন চাপ সত্ত্বেও এমনটা হয়েছে। আমরা ইসরায়েলকে উত্তেজনা কমানোর জন্য সংলাপে আসার আহ্বান জানাচ্ছি।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেন, দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা নীতি অনুসারে যুক্তরাষ্ট্র এমন একতরফা পদক্ষেপের বিরোধিতা করে যা একটি দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধান অর্জনকে আরো কঠিন করে তোলে। এটি শান্তির পথে বাধা হিসেবে বিবেচনা করছে তারা।
এদিকে সোমবার ফিলিস্তিনের অধিকৃত পশ্চিম তীরের জেনিন শহরে ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযানে পাঁচ জন নিহত হয়েছে। তাদের মধ্যে এক জন কিশোর বলে জানা গেছে। এছাড়া ইসরায়েলি বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষের সময় আহত হয়েছেন আরো ৪৫ জন ফিলিস্তিনি। সংঘর্ষে আহত ফিলিস্তিনিদের মধ্যে এক জন গণমাধ্যমকর্মীও রয়েছেন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জেনিন থেকে সংবাদ প্রচারের সময় আল-গাদ টিভি চ্যানেলের ক্যামেরা পার্সন হাজেম নাসের ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে আহত হন।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, সোমবার অধিকৃত পশ্চিম তীরের জেনিন শহরে গ্রেফতার অভিযান চালাতে যায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। সে সময় উভয় পক্ষের মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষ শুরু হয়। সংঘর্ষ চলাকালে ইসরায়েলি বাহিনী হাজেম নাসেরকে ঘিরে রেখেছিল।
সে সময় তিনি একটি অ্যাম্বুলেন্সের পিছনে নিজেকে লুকিয়ে রেখেছিলেন। কিন্তু একপর্যায়ে ইসরায়েলি স্নাইপাররা তাকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। পরে তাকে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। অবশ্য জেনিন শহরের এ ঘটনা সম্পর্কে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী তাত্ক্ষণিক কোনো মন্তব্য করেনি।
তবে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, ইসরায়েলের বেশ কয়েক জন সৈন্য আহত হন। জানুয়ারিতে ফের ক্ষমতায় আসার পর ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর জাতীয়তাবাদী-ধর্মীয় জোট সরকার পশ্চিম তীরে ৭ হাজারের বেশি নতুন আবাসন ইউনিটের অনুমোদন দিয়েছে। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.