পলাশবাড়ীতে হাঁসের খামার গড়ে স্বাবলম্বী আবু তালেব 

গাইবান্ধা প্রতিনিধি: আমাদের দেশে হাঁস পালন তুলনামূলকভাবে সহজ ও লাভজনক পেশা। আর একারণে উপজেলার বেকার – যুবক যুবতিরা শ্লোগান ধরেছেন “করবো মোরা হাঁসের চাষ,থাকবো সুখে বারো মাস”
উপজেলার একটি পৌরসভাসহ ৮ ইউনিয়নে উপজেলা  প্রাণী সম্পদ অফিসের তথ‍্য মতে হাঁসের খামার রয়েছে ১৯টি। এছাড়াও উপজেলায় ছোট বড় শত শত হাঁসের খামার গড়ে উঠেছে। বেশির ভাগ হাঁসের খামার ব‍্যক্তি উদ্যোগে গড়ে তুলেছেন উপজেলার বেকার যুবক-যুবতিরা। হাঁস পালন করে অনেকেই তাদের দারিদ্রতা দুর করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন বা হওয়ার চেষ্টা করছেন।
হাঁস ও মাছ চাষ এক সাথেই করা যায়, ফলে অধিক লাভবান হওয়া সম্ভব। হাঁসের মাংসের মৃল‍্য মুরগির তুলনায় বেশি। হাঁসের খামারে এন্টিবায়োটিক প্রয়োগ করা লাগে না। হাঁসের বাচ্চার দাম মুরগির বাচ্চার চেয়ে কম। হাঁস পালন মুরগির চেয়ে বেশি সহজ। মুরগির চেয়ে হাঁসের রোগ বালাই কম। হাঁস পানিতে চরে তার খাদ‍্যের অর্ধেক সংগ্রহ করে।
আর এতেই ভাগ্য বদল হয়েছে অনেক খামারির। খামারিরা প্রতিটি হাঁসের বাচ্চা ৩৫ থেকে ৪০ টাকায় কিনে এনে তিন থেকে সাড়ে তিন মাস লালন-পালন করে ডিম ও মাংস উৎপাদন করছেন।
যেসব খামারি বিলে হাওরে, পুকুরে অথবা উম্মুক্ত জলাশয়ে ছেড়ে দিয়ে খাবার খাওয়াচ্ছেন তাদের খরচও কম হচ্ছে।
সরেজমিনে, পলাশবাড়ী পৌরসভার বৈরিহরিণমাড়ী গ্রামে আজ বৃহস্পতিবার (২৬ আগস্ট) সকালে গিয়ে দেখা যায় আবু তালেব ও তার স্ত্রী দুজনে হাঁসের ডিম উঠাচ্ছেন ট্রেতে। তার ছেলে পার্শ্ববর্তী উম্মুক্ত জলাশয়ে হাঁস ছেড়ে দিয়ে বসে আছেন।
আবু তালেব হাঁসগুলোকে ডাকার সঙ্গে সঙ্গেই পানি থেকে উঠে এসে তার আশে পাশে ডাক চিৎকার করতে থাকে। খাবার দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হাঁসগুলোর শুরু হয়ে যায় খাবার খাওয়ার প্রতিযোগিতা। তিনি হাঁস পালনের পাশাপাশি ৯০ শতক জমিতে রুই, কাতলা এবং দেশীয় প্রজাতির বিভিন্ন প্রকার  মাছ চাষও করেছেন। হাঁসের উচ্ছুষ্ট খেয়েই মাছ বড় হয়। এজন্য মাছের জন‍্য আলাদা কোন খাবার লাগে না।
আবু তালেব বিটিসি নিউজকে  জানান, অভাবের সংসারে আমি অর্থের অভাবে ভালো কিছু করতে পারিনি। নিজেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি কিছু করার। কিন্তু অর্থের অভাবে সেই স্বপ্নটা সত্যি হয়ে উঠে না। অনেক ভেবে চিন্তে ঠিক করি হাঁসের খামার গড়ে তুলব। কিন্তু হাঁস পালন সম্পর্কে আমার কোন ধারণা ছিল না। অন‍্য খামারিদের দেখাদেখি প্রথমে রিস্ক নিয়ে জেলার সুন্দরগঞ্জ থেকে ৩৫ টাকা পিচ ক‍্যাম্বেল জাতের ৫ ‘শ হাঁসের বাচ্চা ক্রয় করে নিয়ে আসে নিজ বাড়ীতে গড়ে তুলি হাঁসের খামার। তিন থেকে সাড়ে তিন মাস কঠোর পরিশ্রম করে লালন-পালন করি। এর মধ্যে থেকে ৮০ টি মর্দা হাস প্রথমে  ৩০০ ‘ শ টাকা দরে বিক্রি করি। এখন বর্তমানে আমার খামারে প্রতিদিন মাঁদী হাঁস দেড় থেকে দুইশোটি করে ডিম দিচ্ছে। এরপর থেকে আমাকে আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। তবে করোনাকালীন সময়ে বেশ ক্ষতিগ্রস্ত ছিলাম। সরকারি ভাবে প্রণোদনার টাকা দেওয়া হলো উপজেলার ক্ষতিগ্রস্ত অনেক খামারি কিংবা মৎস্যচাষীকে। আমার কপাল দুটি অফিসের একটির টাকাও জুঁটলো না।
এমনকি উপজেলা পশু হাসপাতালের ডাক্তারদের কোন পরামর্শ কিংবা ওষুধ পেলাম না। বাহির থেকে ওষুধ কিনে আমার খামারের হাঁসগুলোকে খাওয়াতে হয়। কোনদিন শখের বসেও পশু হাসপাতালের ডাক্তারদের আসতে দেখলাম না। এমন অভিযোগ উপজেলার প্রায় হাঁস -মুরগি, গরু – ছাগলের খামারিদের।
খামারিরা বিটিসি নিউজকে জানান, একটি ক‍্যাম্বেল জাতের হাঁস ২৫০ থেকে ২৯০ টি পযর্ন্ত ডিম দেয়। হাঁসের ডিম যখন ছোট হয়ে আসে বা ডিম দেয়া একেবারে কমে গেলে সেই হাঁস বিক্রি করে দেয়া হয়। এতে করে লাভ বেশি হয়। আমরা বতর্মানে হাঁস পালন করে পরিবার পরিজন নিয়ে অনেক সুখে আছি। তারা জানান, হাঁস পালন করে লাভবান হওয়া সম্ভব।
এদিকে উপজেলার সচেতন মহল মনে করছেন, সরকারি – বেসরকারী পৃষ্ঠপোষকতা পেলে উপজেলার বেকার যুবক- যুবতিরা হাঁসের খামার করে স্বাবলম্বী হয়ে নিজেদের ভাগ্য বদল করতে পারেন।
এব‍্যাপারে উপজেলা প্রাণী সম্পদ অফিসের উপ- সহকারী কর্মকর্তা আতাউর রহমান বিটিসি নিউজকে জানান, আমরা সকল খামারিদের সঠিক পরামর্শ সেবা অব‍্যাহত রেখেছি।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর গাইবান্ধা প্রতিনিধি মোঃ শাহরিয়ার কবির আকন্দ। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.