পলাশবাড়ীতে মানব পাচারকারীর খপ্পরে পড়ে ৪ বছর ধরে নিরুর্দ্দেশ জাফিরুল  

 

গাইবান্ধা প্রতিনিধি: আদম ব্যাপারির খপ্পরে পড়ে পরিবার থেকে প্রায় ৪ বছর নিরুর্দ্দেশ। গাইবান্ধার পলাশবাড়ীর একটি পরিবারের উপার্জনক্ষম একমাত্র অবলম্বনকে হারিয়ে তার বাবা-মা-স্ত্রী-সন্তানের অমানবিক অসহায়ত্ব জীবনযাপন। সুদান কিংবা লিবিয়াগামী নিরুর্দ্দেশ স্বামী জাফিরুল ইসলামকে (৫০) উদ্ধারের অভিযোগে স্ত্রী রোজিনা বেগম মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে পলাশবাড়ী থানায় একটি (নং-১০, তাং-০৯/০৯/২০১৬) মামলা দায়ের করেন।

মামলার বিবরণে জানা যায়, গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার বেতকাপা ইউপি’র সাকোয়া গ্রামের দুলা ব্যাপারির ছেলে দুই সন্তানের জনক জাফিরুল ৪ বছর আগে ২০১৫ সালের ১৮ জানুয়ারি একটি সংঘবদ্ধ আদম ব্যাপারি চক্রের প্রলোভনে পড়ে সুদানে যান। বিদেশে পাড়ি দেয়ার আগে ভূক্তভোগী পরিবারটি প্রতারক চক্রের সহযোগি একই উপজেলার পার্শ্ববর্তী মহদীপুর ইউপি’র বড় গোবিন্দপুর গ্রামের আইজার সরকারের ছেলে আঃ হালিমের মধ্যস্থতায় মুন্সিগঞ্জ জেলার চরডুমুরিয়া গ্রামের জনৈক সাজ্জাদ হোসাইন ও আমিনুল ইসলাম নামীয়সহ দেশী-বিদেশী সংঘবদ্ধ চক্রের নিকট গত ২০১৪ সালের ১৫ ডিসেম্বর প্রথমত ২ লাখ ২০ হাজার প্রদান করেন। পরবর্তী সময় আমার স্বামী সুদানে থাকাবস্থায় চক্রটি আমার স্বামীকে বিভিন্ন ভয়ভীতিসহ খুন করার হুমকি প্রদর্শন করে আরো মোটা অংকের টাকা দাবী করে বসেন।

২০১৬ সালের ১ এপ্রিলের পর হতে ফোনে আমার স্বামীর সাথে আর কোন যোগাযোগ হচ্চিল না। ২০১৬ সালের ১২ মে ০০২১৮৯২৭৪৬১৫৫৬ নম্বর থেকে আমার স্বামী আমাকে ফোন করে জানান আদম পাচারের ওই চক্রটি আমাকে সুদান থেকে লিবিয়া’য় নিয়ে বিনা বেতনে শ্রম শোষন করিতেছে।

এক পর্যায়ে ঘটনার সঙ্গে জড়িত চক্রটি আমাকে ফোন করে বলে লিবিয়া’য় তোমার স্বামী মোটা বেতনে চাকুরী পাবে। তবে আরো সাড়ে ৪ লাখ দিতে হবে। যথাসময় টাকা প্রেরণ না করলে তোমার স্বামীকে মারিয়া ফেলিব। জাফিরুলের বাবা-মা আমি ও তৎসময় অষ্টম বর্তমানে দশম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়ে জাফরিনা খাতুন ও বর্তমানে অষ্টম শ্রেণিতে পড়–য়া আমার ছেলে রাকিবুল হাসান রোকনসহ পরিবারের লোকজন এ খবর শুনে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ি।

আমার স্বামীর প্রাণ বাঁচাতে নিরুপায় হয়ে বিভিন্ন ধার-দেনা করে ডাচবাংলা ব্যাংক লিঃ গোবিন্দগঞ্জ শাখা হতে ওই চক্রের একাউন্ট নম্বর ১৮৬১৫১৩৯৭৯০-এর অনুকূলে  বিগত ২০১৬ সালের ১৩ জুন  নগদ ২ লাখ টাকা প্রদান করি। কিন্তু এরপরেও বিপদগ্রস্ত আমার স্বামীর দুঃখ-দুর্দশা লাঘব না হয়ে বরং আরো বিপদগামী হন। ঘটনা এখানেই থেমে নেই। প্রতারক চক্রটি ২ লাখ টাকা নেয়ার পরেও বিগত ২০১৬ সালের ৩ সেপ্টেম্বর একটি ফোন থেকে আমার স্বামীর ফুফাতো ভাই আঃ রহমানের মোবাইল ফোন ০১৭৭০৩৫৪৯৪১ নম্বরে ফোন করে বলে জাফিরুলকে লিবিয়া’য় আটক রাখা হয়েছে। বাকী টাকা প্রেরণ না করলে শারীরিক ও মানষিক নির্যাতন অব্যাহত রাখবে বলে তারা জানান।

প্রতারক চক্র দফায়-দফায় টাকা গ্রহণ করলেও স্বামীর মুক্তিপনে সর্বশেষ ২০১৬ সালের ৮ সেপ্টেম্বর ০১৫৩২২৭৪৪৭০ নম্বর থেকে আমার ফোন নম্বরে চক্রটি আবারো ৫ লাখ টাকা দাবী করে বসেন। তা না হলে এবার আর তোমার স্বামীর রক্ষা নেই। তারা আমার স্বামী জাফিরুলকে মারিয়া ফেলিবে বলে ফোনে হুঁশিয়ারিতে জানান।

এদিকে; মামলা দায়েরের পর বাংলাদেশ পুলিশ ঢাকার সিআইডি বিভাগের অর্গানাইজড ক্রাইম (টিএইচবি) বিষয়টি তদন্তাধীন কালিন সংশ্লিষ্ট বিভাগের তদন্তকারী উপ-পুলিশ পরিদর্শক খ, ম, আব্দুল হালিম আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ফোন ট্রাকিং করে (০১৭৬৬৪৫৪৭৭৭) ডিএমপি দারুস সালাম থানাধীন গাবতলী এলাকা হতে মানব পাচারকারী চক্রের এক সদস্য মালিকগঞ্জ জেলার সিংগাইর উপজেলার চর চারাভাংগা গ্রামের মৃত কালাচানের ছেলে নুর হোসেনকে (৩২) আটক করে।

কিন্তু আইনের বেড়াজাল ভেঙ্গে ধৃত নুর হোসেন জামিনে মুক্তি পান। পরবর্তীতে এ মামলার তেমন কোন অগ্রগতি না হওয়ায় হতাশায় নিমজ্জিত ভূক্তভোগী পরিবারটি নিদারুন অসহায়ত্বে ভুগছেন। বিগত ৪ বছর ধরে স্বামী জাফিরুলের অবর্তমানে তার পরিবার দিনের পর দিন খেয়ে না খেয়ে, অনাহারে-অর্ধাহারে জীবনযাপন করছে। পরিবারের একমাত্র অবলম্বনকে হারিয়ে স্ত্রী রোজিনা তার পড়–য়া ছেলে-মেয়ের পড়ালেখার ব্যয়বহনসহ সংসারের অন্যান্য ভরণ-পোষণে বর্তমানে মানুষের দ্বারে-দ্বারে সাহায্য সহযোগিতা নেয়ার মাধ্যমে অমানবিক জীবনযাপন করছেন। বিষয়টি যথাযথ হস্তক্ষেপ কামনা করে পরিবারটি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী সর্বোপরি স্বয়ং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মানবিক প্রয়োজনীয় হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।#

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.