পলাশবাড়ীতে বাঁশের টঙের নিচে প্রতিবন্ধী মেরিনার বসবাস : জমিসহ ঘরের অভাব

গাইবান্ধা প্রতিনিধি: গাইবান্ধার পলাশবাড়ী পৌরসভার আন্দুয়া গ্রামে মা-বাবাসহ দেখ-ভাল করার মত কোন সজ্জন না থাকায় ভাগ্য বিড়ম্বনা জন্ম প্রতিবন্ধী মেরিনা খাতুন (২৮)গ্রীস্ম-বর্ষা এবং শীতের তীব্রতা থেকে রক্ষা পেতে মাসের পর বছর ধরে বাঁশের টঙের নিচে জীবন যাপন করছে।
মেরিনা হাঁটতে-চলতে পারে না-পারেনা স্পষ্টভাবে কথা বলতে।হাত-পা সচল না থাকায় শরীরে ভর দিয়েই কোন রকমে মাটিতে গড়া-গড়ি হামাগুড়ি দিয়ে ধীর গতিতে সামনে এগুতে পারে। হাত-পা সরু প্রকৃতির।
বসে থাকতেও অসহনীয় অমানবিক কষ্ট। আবার চলতে গিয়ে বড়ই কষ্ট। মুহুর্ত-মুহুর্তে শুধুই কষ্ট আর কষ্ট।যেন নিস্তার নেই-আদৌ তার কষ্ট লাঘব হবে কি-না ? জন্মের পর থেকেই এমন অমানবিক কষ্ট জীবনের আষ্টেপৃষ্টে বেষ্টিত।
প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে তার আরো ভীষন কষ্ট। পড়নের কাপড়েই তাকে প্রকৃতির কাজ সাড়তে হয়। তার এমন দুঃখ-কষ্টে ব্যথিত উৎসুক এলাকাবাসি এক নজর দেখতে আসলে মেরিনা তাদের দিকে ফ্যাল-ফ্যাল করে শুধু তাঁকিয়ে থাকে।অপরের সহায়তা ছাড়া মেরিনার জীবন যাত্রার চলাচল যেন দুঃসহ হয়ে উঠেছে।
সবচেয়ে বড় সমস্যা একটি আবাসনের।নূন্যতম একটুখানি মাথা গোঁজার ঠাঁই।শীতববস্ত্র বিহীন যবুথবু তীব্র শীত সহ্য করে এভাবেই বুকভরা আহাজারি আর কষ্ট-আর্তনাদের আবর্তে তার প্রাত্যহিক জীবন।
সরেজিমন খোঁজ নিয়ে জানা যায়,মেরিনা খাতুন ওই গ্রামের মৃত সাইদুল ইসলামের মেয়ে।পঙ্গু মেরিনার জন্মের পরপরই তার মা ছালেমা শারীরিক অসুস্থ হয়ে পড়েন।মায়ের অসুস্থ জনিত কারণে বাবা সাইদুল দ্বিতীয় বিয়ে করে বসেন।তখন থেকেই মেরিনার মা স্বামীগৃহ ছেড়ে তার বাবার বাড়ীতে বসবাস করতে থাকেন।
এদিকে;এরইমধ্যে মেরিনার মায়ের কোল জুড়ে স্বাভাবিক ও সবল-সুস্থ আরো এক বোনের জন্ম হয়। জন্মের ১৬ বছরের ব্যবধানে গুরুতর অসুস্থতায় তার মায়ের মৃত্যৃ ঘটে।মেরিনার দেখ-ভাল করতে থাকেন তার বাবা ও দাদীমা।
এর পর-পর প্রথমতঃ দাদী এবং পরবর্তীতে বাবার মৃত্যু ঘটে।নানার বাড়ীতে থাকা ছোট বোন সোনালী আকতারের বিয়ে হলে সে স্বামীর ঘরে চলে যায়।মেরিনার পরিবারে সৎ মা এবং দুই সৎ বোন ও এক ভাই ছাড়া আপন বলতে কেউ না থাকায় দেখ-ভালের অভাবে তার জীবন আরো বিপন্ন হয়ে উঠে।
বাবা-মা ও দাদীর অভাবে দেখ-ভাল করার মত কেউ না থাকায় মনের খেয়ালে মাটিতে হামাগুড়ি দিয়ে পৈত্রিক ভিটা ছেড়ে কষ্ট করে নানার বাড়ীতে যাচ্ছিল।চলার পথে একসময় মেরিনার শরীর দুর্বল হয়ে পড়ায় সে মাঝপথে আটকা পড়ে।খবর পেয়ে তার খালা ছালেহা বেগম ওইস্থানে ছুটে আসে।
এখান থেকে কোলে করে খালা তার বাড়ীতে নিয়ে যায়। কিন্তু হতদরিদ্র অসুস্থ অসচ্ছল খালার পারিবারিক তেমন অবস্থান না থাকায় মেরিনার স্বাভাবিক পরিস্থিতি আরো চরমে উঠে।সেখানে ছোট্ট পরিসরের জির্ণশীর্ণ ঘরে শোবারমত কোন চৌকির সংস্থান ছিল না।ছিল বাঁশের একটি টঙ।
এর উপরে জ্বালানী-খড়ি রেখে নিয়মিত ওই টঙের নিচে মানবেতর জীবন যাপন করে আসছে মেরিনা। এমন অসায়ত্ব-দুর্বিষহ জীবন থেকে পরিত্রাণ এবং স্বাভাবিক জীবন যাপনে মেরিনার বড়ই ইচ্ছে।
সরকারী-বেসরকারী মানবিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা সমূহের পৃষ্টপোষকতায় একটি স্থায়ী আশ্রয়ন পেতে মেরিনা সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের মানবিক হস্তক্ষেপ কামনা করেন।মেরিনা তার নিজের মত করে নূন্যতম মানবিক সুবিধাদি নিয়ে বেঁচে থাকতে চায়।তার চাওয়া বাসযোগ্য একখন্ড জমিসহ একটি ঘর।
এজন্য স্থানীয় সাংসদ,ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, ইউএনও,জনপ্রতিনিধি,ব্যবসায়ী,সমাজের দয়ালু-দান শীল ব্যক্তিবর্গ ছাড়াও সর্বোপরি মানবতার মা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মানবিক দৃষ্টি কামনা করেছেন।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর গাইবান্ধা প্রতিনিধি মোঃ শাহরিয়ার কবির আকন্দ। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.