পর্তুগালকে হারিয়ে ইতিহাস গড়ে নকআউটে জর্জিয়া

বিটিসি স্পোর্টস ডেস্ক: দলে একগাদা পরিবর্তন এনে ম্যাচের ৯১ সেকেন্ডের মাথায় গোল হজম করে পর্তুগাল। এরপর অবশ্য টানা আক্রমণ শুরু করে তারা। পরিস্থিতি বুঝে, ঠাণ্ডা মাথায় ঘর সামলানোয় মনোযোগী হয় জর্জিয়া। সফল পরিকল্পনায় এগিয়ে, দ্বিতীয়ার্ধে আরেক গোল করে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নেয় তারা। বাকিটা সময় শক্তিশালী প্রতিপক্ষকে আটকে রেখে তুলে নেয় অসাধারণ এক জয়। প্রথমবার বড় কোনো টুর্নামেন্টে খেলতে এসেই নকআউট পর্বে ওঠার ইতিহাস গড়ে জর্জিয়া।
জার্মানির পশ্চিমের শহর গেলসেনকিরশেন বুধবার রাতে ২-০ গোলের স্মরণীয় জয় পেয়েছে জর্জিয়া। ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে প্রথমবার খেলতে এসেই পেরিয়ে গেছে গ্রুপ পর্বের বৈতরণী।
দলে নেই কোনো তারকার উপস্থিতি। তবে পজিশনভিত্তিক কার্যকর সব খেলোয়াড় নিয়ে ভারসাম্যপূণ্য এক দল হয়ে উঠেছে জর্জিয়া। সঙ্গে কোচ উইলি সানিওলের দারুণ পরিকল্পনা এবং মাঠে তার সঠিক প্রয়োগে নিজেদের ফুটবল ইতিহাসে সবচেয়ে সেরা সাফল্য পেল দলটি।
একই সময়ে শুরু ‘এফ’ গ্রুপের আরেক ম্যাচে চেক প্রজাতন্ত্রকে ২-১ গোলে হারিয়ে গ্রুপ রানার্সআপ হয়ে পরের ধাপে উঠেছে তুরস্ক।
গ্রুপ পর্ব শেষে পর্তুগাল ও তুরস্কের পয়েন্ট সমান ৬ করে, তবে মুখোমুখি লড়াইয়ে সেরা পর্তুগিজরা। আর ৪ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় জর্জিয়া, সেরা চার তৃতীয় দলের একটি হয়ে শেষ ষোলোয় উঠল দলটি।
পরের ধাপের টিকেট তো বটেই, দলের গ্রুপ সেরা হওয়াটাও নিশ্চিত হয়ে গেছে আগেই-তাই তুরস্কের বিপক্ষে অনায়াস জয়ের ম্যাচের শুরুর একাদশ থেকে আটটি পরিবর্তন করে দল সাজান পর্তুগাল কোচ রবের্তো মার্তিনেস। তাতে আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলতে পারলেও, গোলের পথ ভুলে গেল দলটি।
তুরস্কের বিপক্ষে ৩-১ গোলে আসর শুরু করা জর্জিয়া পরের ম্যাচে চেক প্রজাতন্ত্রের বিপক্ষে প্রথমে এগিয়ে যায়। পরে গোল হজম করে ম্যাচটি ড্র করলেও, ওই এক পয়েন্টের সুবাদে ক্ষীণ হলেও পরের ধাপে ওঠার সম্ভাবনা তৈরি হয় দলটির।
প্রথমবার ইউরোয় খেলতে এসেই নকআউট পর্বে ওঠার হাতছানিতে এদিন জর্জিয়ার শুরুটা হয় অবিশ্বাস্য। মাঝমাঠে প্রতিপক্ষের ভুলে বল পেয়ে প্রতি-আক্রমণ শাণায় তারা। সতীর্থের পাস ধরে দারুণ গতিতে সঙ্গে লেগে থাকা ডিফেন্ডারকে পেছনে ফেলে, বক্সে ঢুকে কোনাকুনি শটে চমৎকার গোলটি করেন নাপোলি ফরোয়ার্ড খাভিচা কাভারাৎসখেলিয়া। ম্যাচের ঘড়িতে সময় তখন এক মিনিট ৩১ সেকেন্ড।
ষোড়শ মিনিটে ফ্রি কিকে প্রতিপক্ষ গোলরক্ষকের পরীক্ষা নেন রোনালদো। প্রায় ৩০ গজ দূর থেকে পর্তুগাল অধিনায়কের শট সোজাসুজি থাকলেও, ছিল বুলেটের মতো গতি। চোখের পলকে চলে আসা বল কোনোমতে পাঞ্চ করে ফেরান জর্জিও মামারদাশভিলি।
একটু একটু করে চাপ বাড়াতে থাকে পর্তুগাল। ২৮তম মিনিটে প্রতিপক্ষের ডি-বক্সে ফাউলের আবেদন করে না পাওয়ায় ক্ষোভ ঝাড়েন রোনালদো, দেখেন হলুদ কার্ড। তার জার্সি টেনে তাকে ফেলে দেন জর্জিয়ার এক খেলোয়াড়।
দুই মিনিট পর জোয়াও ফেলিক্সের জোরাল শট পোস্টের একটু দূর দিয়ে বাইরে যায়। পাঁচ মিনিট পর রোনালদোর আরেকটি প্রচেষ্টা রক্ষণে প্রতিহত হয়।
বিরতির আগে আবারও রেফারির সিদ্ধান্তে অসন্তোষ প্রকাশ করতে দেখা যায় রোনালদোকে। জর্জিয়ার বক্সের বাইরে প্রতিপক্ষের বাধার মুখে পড়ে যান পেদ্রো নেতো, ডাইভ দেওয়ার অভিযোগে তাকে হলুদ কার্ড দেখান রেফারি। রিপ্লেতে দেখা যায়, প্রতিপক্ষের পায়ের সঙ্গে একটু সংঘর্ষ হয়েছিল নেতোর।
প্রতিপক্ষের প্রবল চাপে ম্যাচের প্রথম ২০ মিনিট পর থেকেই একরকম কোণঠাসা হয়ে পড়ে জর্জিয়া। ব্যবধান ধরে রাখতে তারাও বাড়তি মনোযোগ দেয় রক্ষণে। দ্বিতীয়ার্ধে দ্বিতীয় মিনিটে রোনালদোর কাছ থেকে নেওয়া শটও প্রতিহত হয় রক্ষণে।
তিন মিনিট পর পাল্টা আক্রমণে সুবর্ণ সুযোগ পেয়েছিল জর্জিয়া; কিন্তু বক্সে একেবারে ফাঁকায় বল পেয়েও গোলরক্ষক বরাবর দুর্বল শট নেন কাভারাৎসখেলিয়া। একটু পরই অবশ্য দ্বিতীয় গোল পেয়ে যায় তারা।
ডি-বক্সে ঢুকেই আন্তোনিও সিলভার ফাউলের শিকার হন জর্জিয়ার লুকা লোকোশভিলি। ঘটনাটি রেফারি চোখ এড়িয়ে গেলেও, ভিএআরের নজর এড়ায়নি। পরে মনিটরে দেখে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। দারুণ স্পট কিকে ডান দিকের পোস্ট ঘেঁষে গোলটি করেন জর্জেস মিকাউতাদজে।
আসরে তিন ম্যাচ খেলেই প্রতিটিতেই জালের দেখা পেলেন ২৩ বছর বয়সী এই ফরোয়ার্ড। গত ম্যাচেও পেনাল্টি থেকে একটি গোল করেছিলেন তিনি।
৬৬তম মিনিটে রোনালদোকে তুলে নেন কোচ, নামান গনসালো রামোসকে। হয়তো সিদ্ধান্তটি পছন্দ হয়নি অধিনায়কের, বেঞ্চে বসার আগে হাওয়ায় লাথি ছুঁড়ে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যায় তাকে।
ব্যবধান দ্বিগুণ করার পর যেন আরও আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠে জর্জিয়া। মাঝেমধ্যেই পাল্টা আক্রমণ উঠতে থাকে তারা। আর গোল না পেলেও, তাতে প্রতিপক্ষকে কিছুটা চাপ ফিরিয়ে দিতে পারে দলটি।
মুহুর্মুহু আক্রমণে চার মিনিট যোগ করা সময়েও দুটি ভালো সুযোগ তৈরি করে পর্তুগাল। কিন্তু মামারদাশভিলির দেয়াল আর ভাঙতে পারেনি তারা।
ম্যাচের আগে জর্জিয়ার একাধিক খেলোয়াড় বলেছিলেন, রোনালদোদের বিপক্ষে মাঠে নামতে মুখিয়ে আছেন তারা। তবে একটুও ভীতি নন তারা। সেটা যে শুধু মুখের কথা ছিল না, মাঠেই তার প্রমাণ মিলল। সাহসী, উজ্জীবিত ফুটবলে দলটি লিখল নতুন ইতিহাস। গড়ল নতুন এক রেকর্ড।
ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে অবস্থানের হিসেবে ইউরোর ইতিহাসে সবচেয়ে বড় অঘটনের জন্ম দিল ৭৪তম স্থানে থাকা জর্জিয়া, হারিয়ে দিল তাদের চেয়ে ৬৮ ধাপ এগিয়ে ষষ্ঠ স্থানের দল পর্তুগালকে।
কোয়ার্টার-ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে পর্তুগালের প্রতিপক্ষ স্লোভেনিয়া। আর জর্জিয়া লড়বে তিনবারের ইউরোপ চ্যাম্পিয়ন স্পেনের সঙ্গে। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.