ফেনী প্রতিনিধি:ফেনীর পরশুরাম সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) বাধা উপেক্ষা করেই বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবির) পাহারার চলছে বল্লামুখা বাঁধের পুনর্নির্মাণ কাজ। এই কাজ বন্ধ হবে না বলেও সাফ জানিয়ে দিয়েছে বিজিবি।
এর আগে গত বছরের ২০ আগস্ট শূন্যরেখায় বিএসএফের বাঁধের বাংলাদেশ অংশ কাটার চেষ্টা ব্যর্থ হয় স্থানীয় জনতা ও বিজিবির বাধার মুখে। পরে ভারতীয় অংশ কেটে দেয়ায় ৫ থেকে ১৫ ফুট উজানের পাহাড়ি ঢলে তলিয়ে যায় গোটা ফেনীর বিস্তীর্ণ জনপদ। ক্ষতি হয় আড়াই হাজার কোটি টাকারও বেশি।
এদিকে ওই বাঁধ মেরামতে বিএসএফ দেয় বাধা। এতে জনমনে দেখা দেয় আতঙ্ক আর উত্তেজনা।
জানা যায়, পরশুরামের মির্জানগর ইউনিয়নের নিজ কালিকাপুর সীমান্তের শূন্যরেখায় বল্লামুখার ভারতীয় অংশের বাঁধ কেটে দিয়েছিল বিএসএফ। আর এ অংশের পানি প্রবেশেই গত বছরের আগস্টে ফেনীতে হয় ভয়াবহ বন্যা। কিছুটা বিলম্বিত হলেও অবশেষে যখন সেই বাঁধ পুনর্নির্মাণ শুরু হয় তখনই আবার সেই ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যরা বাধা দেন।
যদিও বাঁধের কাজ বন্ধ হবে না বলে বিজিবির পক্ষ থেকে সাফ জানিয়ে দেয়া হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, গত আগস্টে ফেনীর পরশুরামের মুহুরী নদীর উজানে ভারতের ত্রিপুরায় পাহাড়ি ঢলে বিলোনীয়া শহর প্লাবিত হয়। একপর্যায়ে তাদের শহর রক্ষায় বিএসএফের সহায়তায় ভারতীয় নাগরিকরা গত ২০ আগস্ট রাতে মির্জানগর ইউনিয়নের নিজকালিকাপুর সীমান্তের শূন্যরেখায় বল্লামুখার বাঁধের বাংলাদেশ অংশ কেটে দেয়ার চেষ্টা করে। তবে বিজিবি ও স্থানীয়দের বাধার মুখে সে চেষ্টা ব্যর্থ হয়।
এ সময় বিএসএফের পাঁচ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ার অভিযোগও রয়েছে স্থানীয়দের। ব্যর্থ হয়ে পরে বাঁধের তাদের অংশ কেটে দেয়। ফলে পানির চাপে বল্লামুখাসহ বাংলাদেশ অংশের নদী তীরবর্তী বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের শতাধিক স্থান ভেঙে তলিয়ে যায় ফেনীসহ পার্শ্ববর্তী জেলার কয়েক লাখ পরিবারের ঘরবাড়ি, ফসলি জমিসহ বিস্তীর্ণ জনপদ। সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েন মানুষ।
স্থানীয়দের দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে পানি উন্নয়ন বোর্ড বল্লামুখা বাঁধ পুনর্নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করে।
আন্তর্জাতিক সীমান্তের আইনানুযায়ী শূন্যরেখা থেকে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখেই বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বাঁধ পুনর্নির্মাণের কাজ শুরু করা হয়। তবুও বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) বেলা ১১টার দিকে বিএসএফ কাজে বাধা দেয়।
তবে সেই বাধা উপেক্ষা করে কাজ চালিয়ে যেতে ঠিকাদারদের নির্দেশ দিয়েছে বিজিবি। ভারতীয়দের এমন বাধায় হতবাক স্থানীয়রা।
ভারতের পক্ষ থেকে বাধা আসতে পারে এমন আশঙ্কা সংশ্লিষ্ট সকল বিভাগকে আগেই লিখিতভাবে জানানো হয়েছিল বলে জানান পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আখতার হোসেন মজুমদার।
ফেনীর মুহুরী, কহুয়া, সিলোনিয়া বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের দৈর্ঘ্য ১২২ কিলোমিটার। গত আগস্টে ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পানির তোড়ে ফেনীর মুহুরী, কহুয়া, সিলোনিয়া নদীর দুই তীরের ১২২ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ১০২টি স্থানে ভেঙে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার সৃষ্টি হয়েছিল।
যার মধ্যে মেরামত কাজ সম্পন্ন হয় ৯৬টি ভাঙা অংশের। এতে ব্যয় হয় ৯ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। এ ছাড়াও মেরামত কাজ চলমান রয়েছে বল্লামুখার দুটিতে ।
আর বাঁধের সেসব ভেঙে যাওয়া অংশ মেরামত করতে সরকারের ২০ কোটি ৬৮ লাখ টাকা ব্যয় হবে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.