পদ্মা সেতুতে একই দিনে সড়ক ও রেল পথ চালু নিয়ে সংশয় রেলমন্ত্রী’র

মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি: নির্মাণাধীন পদ্মা সেতুতে একই দিনে সড়ক ও রেল পথ চালু নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন রেলপথ মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন। তিনি বলেন, আমাদের টার্গেট আছে আগামী বছরের জুনে পদ্মা সেতুর সড়ক পথ চালুর সঙ্গে একই দিনে ট্রেন চালু করার। যদি সেটি না করতে পারি তাহলে আগামী বছরের ১৬ ডিসেম্বর ঢাকা থেকে সেতুর ওপর দিয়ে ভাঙ্গা পর্যন্ত ট্রেন চালু করার জন্য খুলে দিতে পারব।
আজ মঙ্গলবার (০৭ সেপ্টেম্বর) সকালে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে এসব কথা বলেন রেলমন্ত্রী।
মন্ত্রী বলেন, একই দিনে পদ্মা সেতুর সড়ক পথের সঙ্গে রেলপথ চালু না হওয়ার পেছনে সমস্যা হলো- পদ্মা সেতুর রেললাইন বসাতে ৬ মাস সময় লাগবে। সেতু কর্তৃপক্ষ এখন সেখানে গ্যাস পাইপ লাইনের কাজ করছে। এই কাজ শেষ করে আগামী বছরের মার্চ মাসে তারা সেতুতে রেললাইন বসানোর জন্য আমাদের কাছে হস্তান্তর করবে। আমাদেরও সেতুতে রেললাইন বসাতে ছয় মাস সময় লাগবে। সেক্ষেত্রে সেতু কর্তৃপক্ষ যদি আগামী বছরের ডিসেম্বরে আমাদের রেললাইন বসানোর জন্য দিয়ে দেয়, তাহলে আমরা একই দিনে সেতুর সঙ্গে রেললাইনে ট্রেন চালু করতে পারব।
ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত পদ্মা ব্রিজ রেল লিংক প্রজেক্টে গ্যাস ও বিদ্যুতের কাজ চলমান থাকায় পদ্মা সেতুর ওপর এখনও রেলের কাজের অনুমতি দেয়নি সেতু কর্তৃপক্ষ। তবে রেলমন্ত্রী সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, ২১ ডিসেম্বরের মধ্যে ব্রিজে কাজের অনুমতি না পাওয়া গেলে একই দিনে সড়ক ও রেল পথ চালু করা অসম্ভব। তবে আমরা আশা করছি সেতু কর্তৃপক্ষ যথাসময় কাজের অনুমতি দেবে।
রেলমন্ত্রী বলেন, কোনো কারণে তা না হলে ঢাকা-মাওয়া পদ্মা ব্রিজ রেল লিংক প্রজেক্ট শুরু করব। আমরা বসে থাকব না, একই সঙ্গে জাজিরা থেকে ভাঙ্গা হয়ে যশোর পর্যন্ত সমানতালে কাজ চালিয়ে যাব।
এদিকে মাওয়া থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত বিশেষ প্রকল্পে ৪১ কিলোমিটার লাইনে কাজ ৬৯ শতাংশ শেষ হয়েছে। অপরদিকে মাওয়া ভায়া ডাক্ট (উড়ন্ত পথে) ৯৭ শতাংশ এবং জাজিরা প্রান্তে ৯৯ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।
পরে দুপুরে প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের রেলমন্ত্রী বলেন, সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার যে কাজ করেছে তা প্রশংসনীয়। তারই ধারাবাহিকতায় অতিরিক্ত সরঞ্জাম ও লোকবল নিয়ে কাজ এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে।  কারণ পদ্মা সেতুর সড়ক ও রেল পথ একসঙ্গে উদ্বোধন নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে।
রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন বলেন, ভাঙ্গা থেকে মুন্সিগঞ্জের মাওয়া পর্যন্ত ৭১ ভাগ ও ঢাকা থেকে মাওয়া পর্যন্ত ৪০ ভাগ রেলওয়ের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। পদ্মা সেতুর সড়ক যোগাযোগের সঙ্গেই রেল পথ খুলে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। টেকনিক্যাল কারণে সেটা বিলম্ব হলে দ্বিতীয় একটি পরিকল্পনা রয়েছে। ২০২২ সালের ১৬ ডিসেম্ভর ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত রেল চলাচল শুরু হবে।
এসময় মন্ত্রী আরও বলেন, সেতুর সঙ্গে সংযুক্ত সব কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। সেতুর ওপর ভিত্তি করেই গ্যাস, বিদ্যুৎ ও অন্যান্য সেবা দক্ষিণাঞ্চলে যাচ্ছে। সড়ক পথকে অগ্রাধিকার বেশি দেওয়া হচ্ছে। সেতুই হচ্ছে সড়ক পথ।
সেতুর সড়ক ও রেল পথ একসঙ্গে উদ্বোধন নিয়ে কিছুটা সংশয় তৈরি হয়েছে জানিয়ে রেলমন্ত্রী বলেন, তবে আমরা চেষ্টা করছি, সেতু কর্তৃপক্ষকে রাজি করাতে। যেন দুটি কাজ একসঙ্গেই শেষ করা যায়। সড়ক চালু হয়ে গেলে রেল পথ নির্মাণ করা কষ্টকর হবে। সেতুতে যান চলাচল শুর করলে যে ভাইব্রেশন বা কম্পন হবে তাতে রেলপথের ঢালাইয়ের জটিলতা হবে।
ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত রেল পথের ৪৩.৫০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। ২০২৪ সালের ৩০ জুনের মধ্যে ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত রেল পথ চালু হবে। আর আগামী বছর ডিসেম্বরের মধ্যে ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত রেলপথ চালু হবে বলেও জানানো হয়।
ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত প্রায় ১৬৯ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণের কাজ চলছে। এ পথে ২০টি স্টেশন থাকবে, যার মধ্যে ১৪টি নতুন এবং ৬টি বিদ্যমান।
এ প্রকল্পের বিভিন্ন অংশের অগ্রগতির বিষয়ে রেল পথ মন্ত্রী মো নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, আমি এ প্রকল্পের অগ্রগতিতে সন্তোষ প্রকাশ করছি। করোনাকালেও এ বড় প্রকল্পের কাজ অনেক দূর এগিয়েছে।
এ সময় রেলমন্ত্রী ছাড়াও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রেল সচিব সেলিম রেজা, বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক ধীরেন্দ্রনাথ মজুমদার, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প পরিচালক মো. আফজাল হোসেন।
অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রকল্পের শীর্ষ কর্মকর্তারা ও মুন্সিগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (শ্রীনগর সার্কেল) মো. আসাদুজ্জামান, লৌহজং উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা আব্দুল আউয়াল, পদ্মা সেতুর নিবার্হী প্রকৌশলী দেওয়ান আবদুল কাদের প্রমুখ।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি মো. সোহেল চৌধুরী সোহেল। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.