পদ্মার ভাঙন: প্রিয়জনের কবরটাও নদীর গ্রাসে, নৌকায় ভেসে ভিটেবাড়ি ছাড়ছে মানুষ

নিজস্ব প্রতিবেদক: চারদিক থৈ থৈ পানি। তার কাছাকাছি প্রায় ২০টি কবর। কোনটিতে রয়েছে ঘুণে ধরা বাঁশের বেড়ার প্রাচীর, কোনটির চিহৃও নেই। সেসব কবরেই একের পর এক ঢেউ আছড়ে পড়ছে, একটি কবরের পাশে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে দেখা গেল ষাটোর্ধ্ব এক বৃদ্ধাকে। কাছে যেতেই অশ্রুজল চোখে জানালেন, ১০ বছর আগে এখানেই কবর দেওয়া হয়েছিল তার ছেলেকে। সন্তান হারিয়ে কবর দেখে জুটতো সান্ত্বনা; এখন পদ্মা সেটুকুও কেড়ে নিয়েছে। তাই আক্ষেপে কাঁদছেন তিনি।
কান্নার এ দৃশ্য রাজশাহীর বাঘা উপজেলার চকরাজাপুর ইউনিয়নের দিয়ারকাদিরপুর চরের পদ্মার পাড়ের হতভাগা বৃদ্ধা জহুরা বেগমের। গত সোমবার (১১ আগস্ট) ছেলের কবরের পাশে তাকে কাঁদতে দেখা গেছে।
জহুরা বেগম বিটিসি নিউজকে বলেন, ‘১০ বছর আগে মাঠে পাউরুটিতে বিষ মাখিয়ে পাখি মারছিল চরের কিছু লোকজন। এই বিষ মাখানো পাউরুটি খেয়ে আমার ছেলে সুমন মারা যায়। ওই সময় ভাঙনের পাঁচ কিলোমিটার দক্ষিণ দিকে তাকে দাফন করা হয়। ১০ বছরের মাথায় সেই কবর পদ্মা গ্রাস করছে।’
স্থানীয়রা জানালেন শুধু জহুরা বেগমের ছেলের কবর নয়; পদ্মার ভাঙনে হারিয়ে গেছে অনেকের কবর। অথচ ১০ বছর আগে সেই কবরস্থানের প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরেও ছিল চাষবাদের জমিসহ বিভিন্ন স্থাপনা। একে একে সব পদ্মার গ্রাসে হারিয়ে ২০টি কবর ছিল। কিন্তু ধীরে ধীরে সেগুলোও মিলিয়ে যাচ্ছে। আর স্বজনদের কবরের পাশাপাশি নদীর গ্রাসে চলে যাচ্ছে বসতভিটা, স্কুল, দোকানপাটসহ নানা স্থাপনা। এ অবস্থায় নৌকায় ভেসে অনেকেই পাড়ি দিচ্ছেন নিরাপদ গন্তব্যে। ইতোমধ্যে সেখান থেকে ঘরবাড়ি সরিয়ে নিয়েছেন অনেকেই। সরিয়ে নেওয়া হয়েছে একটি স্কুল।
চকরাজাপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আজিজুল আলম বিটিসি নিউজকে বলেন, শুধু কবর নয়, এই চরে অনেক মানুষ নদী ভাঙনের কারণে ইতোমধ্যে গৃহহারা হয়েছেন। আবার অনেকেই ঘরবাড়ি ভেঙে অন্য এলাকায় গিয়ে নতুন করে ঘর বানাচ্ছেন। সরিয়ে নেওয়া হয়েছে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ভাঙন ঠেকাতে জরুরি পদক্ষেপ না নিলে মানুষে অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যাবে।
চকরাজাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুজিবুর রহমান বিটিসি নিউজকে বলেন, কবর তো নিয়ে যাচ্ছে রাক্ষুসে পদ্মা। পাশাপাশি শত-শত বিঘা ফসলি জমিসহ গাছপালা, বাড়িঘর ও ফসল নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়ে বেঁচে আছে কিছু মানুষ। পদ্মা গ্রাস করে নেওয়ার আগে আমাদের স্কুলটি অন্য জায়গায় সরিয়ে নিয়েছি। তীব্র ভাঙনের কারণে স্কুলটি এ পর্যন্ত তিনবার স্থানান্তর করা হয়েছে।
এদিকে রাজশাহী শহরেও বিপৎসীমা ছুঁই-ছুঁই করছে পদ্মার পানি। ফুলে-ফেঁপে ওঠা পদ্মার পানি বিভাগীয় এই শহরের বিপৎসীমা থেকে মাত্র ৭৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এই অবস্থায় শহরের টি-বাঁধে সাধারণ মানুষের চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
বাঘা উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাম্মি আক্তার বিটিসি নিউজকে বলেন, নদীতে পানি বাড়ার কারণে চরাঞ্চলে ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত দু’দিন আগে ভাঙন কবলিত এলাকায় টিম পাঠানো হয়েছে। তারা তদন্ত করে এসেছে। আমি ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক সহায়তা প্রদানসহ এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিতভাবে জানিয়েছি।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নিজস্ব প্রতিনিধি মো.ওয়ালিউর রহমান তালুকদার (ইমাম) রাজশাহী। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.